হাজারো যুদ্ধবিমানের ‘কবরস্থান’, মৃত্যুপ্রহরেও কেউ দেখছে ওড়ার আশা

ফিচার স্পেশাল

মে ২৯, ২০২২ ১২:০২ অপরাহ্ণ

শরীরে জমেছে ধুলো, কারও ডানায় ধরেছে মরিচা। কারো অপেক্ষা এখানে অগণিত ঘড়ির কাঁটা পেরিয়েছে। আবার কেউ কেউ এখনো বীরবিক্রমে ওড়ার অপেক্ষায় বসে। চায় শত্রুপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে। কিন্তু তার বেশিরভাগ সঙ্গীই মৃতপ্রায়।

বার্নহার্ড ল্যাং টুকসনের একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে গেলে এমনই মনে হবে। সম্প্রতি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা মরুভূমিতে এমনই হাজার হাজার যুদ্ধবিমানের ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন জার্মান আলোকচিত্রী বার্নহার্ড ল্যাং। তার তোলা কিছু অসাধারণ ছবি এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।

জায়গাটা অ্যারিজোনার টুকসন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দাবাবোর্ডের মতো করে সাজানো রয়েছে উড়োজাহাজ। এখানেই রয়েছে যুদ্ধবিমানের ‘কবরস্থান’। না, এই কবরস্থানে সবাই মৃত নয়, কেউ কেউ মৃত্যুর অপেক্ষায়। কেউ এখনও তন্দরুস্ত। ফের ওড়ার আশায় প্রহর গুনছে তারা।

সামরিক বিমান ঘাঁটি। ছবি: বার্নহার্ড ল্যাং

সামরিক বিমান ঘাঁটি। ছবি: বার্নহার্ড ল্যাং

প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছে মহামারি করোনা। এই বিমান ‘কবরখানা’য় যুদ্ধবিমানকে সঙ্গ দিতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয় অসামরিক বা যাত্রীবাহী বিমানও। সেই ‘অ্যারোস্পেস মেন্টেনেন্স অ্যান্ড রিজেনারেশন গ্রুপ’ (৩০৯তম এএমএআরজি)-র ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন জার্মান চিত্রগ্রাহক।

দুই হাজার ৬০০ একর জুড়ে থাকা ডেভিস-মন্থান বিমান ঘাঁটিতে প্রায় ৪ হাজার বিমান সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যাকে বিশ্বের বৃহত্তম বিমান সংরক্ষণ কেন্দ্র বলা চলে। এই সামরিক বিমানগুলিকে সাজিয়ে রেখে যুদ্ধের সময় সাময়িক ভাবে ‘পার্ক’ করা হয় অথবা, পরে বিক্রিবাটা, বাছাই কিংবা পুনর্ব্যবহারের জন্য রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু বছরের পর বছর পড়ে থাকতে থাকতে বেশিরভাগ উড়ানই ধ্বংসের অপেক্ষায়!

এই বিশাল মৃতপ্রায় বিমান-শরীরের পাশে এমনও কিছু বিমান রয়েছে, যারা আবার উড়তে সক্ষম। কিন্তু তাদের শরীরে মরচে পড়ছে। দরকার সেবা-পরিচর্যা। পুরনো কিন্তু উড়তে সক্ষম, এমন বিমানগুলোকে ‘কবর’-এ রেখে দেয় সামরিক বাহিনী। কোনো সময় রাষ্ট্রের মধ্যে নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি হলে, যুদ্ধবিমানের ঠাঁই হয় এখানে। কখনো আবার আধুনিকীকরণের জন্য অ্যারিজোনার এই জায়গায় আনা হয় যুদ্ধবিমানগুলোকে।

সামরিক বিমান ঘাঁটি। ছবি: বার্নহার্ড ল্যাং

সামরিক বিমান ঘাঁটি। ছবি: বার্নহার্ড ল্যাং

কেন অ্যারিজোনায় রাখা হয় এই যুদ্ধবিমান? ঘাঁটির চারপাশে শুষ্ক আবহাওয়া একে বিমান সংরক্ষণের আদর্শ জায়গা করে তুলেছে। খরখরে আবহাওয়া, কম আর্দ্রতার জন্য এখানকার মাটি এতটাই শক্ত যে দৈত্যাকার বিমানকে রাখা হলেও তা একেবারে মাটির ভেতরে ঢোকে না।

অ্যারিজোনার এই জায়গা কেবল আর সামরিক বিমানের বিশ্রামস্থল নয়। করোনা পরিস্থিতিতে আমেরিকান অসামরিক বিমান সংস্থাগুলি শত শত বিমান সেখানে রেখেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অ্যারিজোনার টুকসন ছিল যাত্রীবাহী বিমানের ‘অস্থায়ী আবাস’।

কোন কোন বিমান থাকে না এখানে! বিশালাকার কার্গো প্লেন থেকে ভারী বোমারু বিমান থেকে যাত্রীবাহী বিমান, সবই থাকে এখানে। এয়ারফোর্স, নেভি ইত্যাদির যে বিমানগুলো অপ্রচলিত হয়ে পড়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্য যাদের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, সেগুলো অ্যারিজোনা মরুভূমির এই অঞ্চলে রাখা হয়।

সামরিক বিমান ঘাঁটি। ছবি: বার্নহার্ড ল্যাং

সামরিক বিমান ঘাঁটি। ছবি: বার্নহার্ড ল্যাং

বাণিজ্যিক বিমানের আয়ুষ্কাল ভীষণ সীমিত। কিছু দিন ব্যবহারের পরে তাদের আবার পরে ওড়ানোর জন্য রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু যেখানে-সেখানে তো রাখা যায় না। তার জন্য চাই সংরক্ষণের অনুকূল পরিবেশ। যাদের আর একেবারেই ওড়ানো যাবে না, তাদেরও রাখা হয়। কোনো সময় খুচরা যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হলে এদেরকে ব্যবহার করা যায়।

বিমান সংরক্ষণের জন্য বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হয়। এক, বাতাস এবং দুই সূর্যের তাপ। এই দুটি জিনিস বিমানের ক্ষতি করতে পারে। ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিমানের ইঞ্জিন এবং জানালা সব সময় সাদা, প্রতিফলিত উপাদান দিয়ে ভালো করে ঢেকে দেওয়া হয়। এ ভাবে ঢাকা অবস্থায় নির্দিষ্ট পরিবেশে একটি বিমানকে বছরের পর বছর ধরে নিরাপদে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *