ফুটবলে লাল কার্ড, হলুদ কার্ড যেভাবে এলো

ফুটবলে লাল কার্ড, হলুদ কার্ড যেভাবে এলো

ফিচার স্লাইড

ডিসেম্বর ৫, ২০২২ ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

সময় ২০০৬ সাল। সেই সময় বিশ্বকাপ আসরে ফাইনাল ম্যাচের কথা আসলেই যে নামটি মনে আসে তিনি জিনেদিন জিদান। ফ্রান্সের অনেকেই বিশ্বাস করেন জিনেদিন জিদান লাল কার্ড পেয়ে মাঠের বাইরে চলে না গেলে হয়তো ফাইনালের ফলটাই অন্য রকম হতো।

অনেক সময় একদলের সুপারস্টার ফুটবলার অন্যদলের খেলোয়াড়দের দ্বারা আক্রমণের শিকার হন। খেলা তখন আর শুধু খেলার মধ্যে থাকে না, একে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে লাল কার্ড আর হলুদ কার্ড কিন্তু এই ধরণের তৎপরতা কমিয়ে দিতে পারে।

একবার ১৯৬৬ বিশ্বকাপে এক ইংলিশ রেফারি ইতালিয়ান এক খেলোয়াড়কে মাঠ থেকে বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি ইংরেজিতে বলায় রেফারির সিদ্ধান্ত বুঝতে পারেননি সেই খেলোয়াড়। তাই মাঠও ছাড়ছিলেন না। ভীষণ সমস্যা তৈরি হয়। পরে সেই রেফারি ভাবছিলেন, কোনো খেলোয়াড়কে ফাউলের জন্য সতর্ক করা বা মাঠ থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কী সংকেত ব্যবহার করা যায়। এর থেকেই লাল কার্ড, হলুদ কার্ড ছাড়া ফুটবলের কথা চিন্তাই করা যায় না। কখনো কখনো তো এই কার্ড খেলার রূপই পালটে ফেলে।

মোট কথা বিশ্বকাপে লাল কার্ড, হলুদ কার্ডের ইতিহাস খুব একটা পুরোনো নয়। ১৯৬২ বিশ্বকাপের এই কার্ড ব্যবহার শুরু হয়। সেই আসরে স্বাগতিক দল ছিল চিলি। ফুটবলীয় শক্তিতে পিছিয়ে থাকা দেশ চিলিতে বিশ্বকাপ হচ্ছে, ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেনি ইতালিয়ানরা। তারই প্রভাব পড়েছিল গ্রুপ পর্বে চিলি-ইতালির ম্যাচটিতে। বেশ কিছু ফাউলের ঘটনা ঘটে। এখনো এই ম্যাচটি ব্যাটল অব সান্তিয়াগো নামে অধিক পরিচিত।

ম্যাচে সবচেয়ে বিপাকে ছিলেন ইংল্যান্ডের কেন এসটন। ম্যাচটি পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তার। মাত্র ১২ সেকেন্ডের মাথায় ম্যাচে প্রথম ফাউল, তবে প্রথম ফাউলের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় ১২ মিনিটের মাথায় গিওর্গি ফেরিনির করা দ্বিতীয় ফাউলটি। রেফারি ফেরিনিকে মাঠ থেকে বের করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইংরেজিতে বলেন। এসটনের নির্দেশটি ফেরিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি। তিনি মাঠও ছাড়ছিলেন না।  পরে পুলিশ এসে জোর করে মাঠ থেকে তাকে বের করে দেন।

হলুদ কার্ড বলে দেয় ‘শান্ত হও’

হলুদ কার্ড বলে দেয় ‘শান্ত হও’

ঘটনাটি এসটনকে বেশ ভাবিয়েছিল। বিশ্বকাপ নানান দেশের, ভাষার, সংস্কৃতিরও মিলনমেলা। রেফারির ভাষা মাঠের খেলোয়াড়েরা না-ও বুঝতে পারেন। চিলি ম্যাচটাতেই যা হয়েছে। নতুন নিয়ম বের করার তাগিদ অনুভব শুরু হয় তখন। ম্যাচ শেষে বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ ট্রাফিক লাইট দেখে তার মাথায় হলুদ এবং লাল কার্ডের ভাবনাটি খেলে যায়।

তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘যখন গাড়ি চালাচ্ছিলাম, লাল আলো দেখে আমার মাথায় এল, হলুদ মানে ‘শান্ত হও’ এবং লাল মানে ‘থামো, বের হয়ে যাও’।

মুখে বুঝিয়ে বলার আর ভাষা বিড়ম্বনার এই ঝামেলা থেকে সহজে মুক্তি দিতে চলে আসে লাল ও হলুদ কার্ড। তার ভাবনার কথা জানালে ফিফাও রাজি হয়। তখন থেকে ফুটবলে চালু হয় কার্ডের ব্যাপারটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *