নবিজির শহর মদিনা

নবিজির শহর মদিনা

ধর্ম

অক্টোবর ১, ২০২২ ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

সোনার মদিনা। পবিত্র এ নামটির সঙ্গে যেন মুমিন মুসলমানের আত্মার সম্পর্ক। প্রিয় নবী (সা.) মদিনায় হিজরতের আগে এর নাম ছিল ‘ইয়াসরিব’।

ঐতিহাসিক ও গবেষকদের মতে, মদিনার ৯৫টি নাম রয়েছে, এর মধ্যে মদিনা নামটিই প্রসিদ্ধ। রাসূল মদিনাকে ভালোবাসতেন। তার চরম বিপদের দিনগুলোতে মদিনার অধিবাসীরা তার প্রতি যে প্রেম-ভালোবাসা ও বিশ্বাস দেখিয়েছেন, তার নজির ইতিহাসে আরেকটি নেই।

প্রিয় নবি (সা.) যখন হিজরতের ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি এভাবে দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! যদি তুমি আমাকে আমার সর্বাধিক প্রিয়ভূমি থেকে বাইরে নিয়ে যাও, তবে আমার বসবাসের বিষয় এমন জায়গায় নির্ধারণ কর, যা তোমার কাছে সর্বাধিক প্রিয়।’

এ দোয়ার পর আল্লাহ মদিনাকে তার রাসূলের আবাসভূমি হিসাবে নির্ধারণ করেন। মদিনাকে রাসূল এত বেশি ভালোবাসতেন যে, কোনো সফর থেকে মদিনার দিকে ফেরার পথে উট দ্রুত তাড়াতেন। পবিত্র মদিনার বাড়িঘর, এমনকি গাছপালা নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দেহ-মন আনন্দিত হয়ে উঠত। অন্তর শীতল হতো এবং তিনি চাদর না খুলে বলতেন-আহ! কী মনোরম বাতাস। মদিনার যে ধূলিবালি তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডলে এসে পড়ত তা পরিষ্কার করতেন না।

সাহাবিদের মধ্যে কেউ ধুলাবালি ঝেড়ে ফেললে তিনি নিষেধ করতেন এবং বলতেন ‘মদিনার মাটিতে শেফা আছে।’ রাসূল (সা.) দোয়া করতেন-‘হে আল্লাহ আমার মৃত্যু যেন পবিত্র মদিনায় হয়।’ আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.)-এর ওফাতের পর তাঁকে কোথায় দাফন করা হবে সে ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম নানা মত পেশ করতে থাকেন। অবশেষে হজরত আলী (রা.) বলেন, ভূ-পৃষ্ঠে আল্লাহর কাছে কোন জায়গা-সে জায়গা অপেক্ষা মহান নেই, যেখানে হুজুর (সা.) এর রুহ মোবারক কবজ করা হয়েছে। আবু বকর (রা.) একথা শুনে সমর্থন করলেন এবং এ মর্মে একটি হাদিস বর্ণনা করলেন। হজরত আলী (রা.) বলেন, একদিন রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে মদিনা মুনাওয়ারাহ থেকে বের হলাম।

বাহরে সুফিয়া নামক স্থানে পৌঁছে রাসূল (সা.) ওজু করলেন এবং কেবলামুখী দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহ! হজরত ইবরাহিম তোমার বান্দা এবং বন্ধু। তিনি মক্কায় কল্যাণ ও বরকত নাজিল করার জন্য দোয়া করেছিলেন। আমি মুহাম্মদও তোমার বান্দা ও রাসূল! মদিনাবাসীর জন্য আমি দোয়া করছি। হে আল্লাহ, তাদের ‘মুদ ও সা’ (ওজন বিশেষ) এর মধ্যে বরকত দাও, যেমন মক্কাবাসীদের বরকত দিয়েছ এবং মদিনাবাসীদের মক্কাবাসীদের তুলনায় দ্বিগুণ বরকত দান কর।

রাসূল (সা.) মদিনার জন্য দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের কাছে মদিনাকে প্রিয় করে দাও, যেমন মক্কাকে করেছিলে, বরং তার চেয়েও অধিকতর।’

যে শহরে নবিজি তাঁর পবিত্র জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন, তাঁর পবিত্র পদধূলিতে যার প্রতিটি অণুপরমাণু পবিত্র হয়েছে, তার শ্রেষ্ঠত্ব ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অন্য কোনো শহরের সঙ্গে তার তুলনা চলে না। মক্কা ও মদিনা শরিফ প্রতিটি মুমিনের কাছে বড় পবিত্র ও সম্মানিত। তাই যখন আমরা রাসূল মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা শরিফের কাছে যাই, তখন যে প্রেমের আকর্ষণ আত্মায় সৃষ্টি হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তা কেবল হৃদয় বেদনায় চোখের অশ্রু বিন্দুতে উপলব্ধির বিষয়।

পরিশেষে ইসলামি রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমেদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়-তোমার রওজা মোবারকে আজ সেই খুশবুর বইছে বাণ; চামেলীর ঘ্রাণ, অশ্রুর বাণ; এখনো সেখানে অনির্বাণ; তাদের সঙ্গে সালাম জানাই, হে মানবতার শাহানশাহ হে নবি! সালাম; আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *