তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত যা বললেন

তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত যা বললেন

জাতীয় স্লাইড

অক্টোবর ১০, ২০২২ ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় অবশেষে চীনের সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনার আঁধার কেটে আশার আলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রোববার (৯ অক্টোবর) সকালে বাংলাদেশের নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত এইচই লি জিমিং নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্ট এলাকার তিস্তা নদীর অববাহিকা ও দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজ পরিদর্শনে এমন আশা জাগিয়ে তুলেছে তিস্তাপাড়ের মানুষজনদের মাঝে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে প্রকল্প প্রায় চূড়ান্ত করে চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না পাওয়ার ও চায়না রিভার ইয়েলো। তারা সার্বিক পরিকল্পনাসহ ড্রইং ডিজাইনও সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া গেছে সবুজ সঙ্কেত।

প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। সরকার যেমন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগ্রহী, তেমনি চীন সরকারও এগিয়ে এসেছে অর্থায়নে। ইতোমধ্যে অর্থের যোগান দিতেও আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়েছে।

মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদীর ডান-বাম উভয় তীর ঘেঁষে ২২০ কিলোমিটার উঁচু গাইড বাঁধ, রিভার ড্রাইভ, হোটেল-মোটেল-রেস্তরাঁ, পর্যটন কেন্দ্র, ১৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প-কারখানা, ইপিজেড, ইকোনমিক জোন, কয়েক লাখ হেক্টর কৃষি জমি উদ্ধার, বনায়ন ইত্যাদি রয়েছে। এতে পাল্টে যাবে তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষজনের জীবনমান।

চীনা রাষ্ট্রদূত তিস্তাপাড়ের সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখেন ও তিস্তাপাড়ের মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দ্রুত আলোর মুখ দেখবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যারেজ এলাকার সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে এবং দুই দেশের সরকারের প্রচেষ্টায় দ্রুত কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সবদিক দিয়ে পরিবর্তন ঘটবে এই এলাকার। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, অর্থনীতি, প্রকৃতি ও পরিবেশ যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ মানুষের প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি অবদান রাখবে।

লি জিমিং বলেন, এই এলাকার মানুষরা কী ভাবছেন সেটি সবার আগে খেয়াল করছি আমরা। মানুষের কতটা চাহিদা রয়েছে সেটিও দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, তিস্তাকে ঘিরে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তার দুই পাড়ে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে। নদী খনন ও শাসন, ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা, আধুনিক কৃষি-সেচ ব্যবস্থা, মাছচাষ প্রকল্প, পর্যটনকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এতে ৭ থেকে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে উত্তরের জেলা লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার আর্থিক সমৃদ্ধি হবে।

চীনা দূত বলেন, তিস্তা একটি বৃহৎ নদী। এটি খনন করতে পারলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হবে। এটি বাংলাদেশে আমার প্রথম কাজ। যদিও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের, এরপরও এটি করব। যেহেতু তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী সে কারণে লাভ ও ক্ষতি কি রকম হচ্ছে সেটিও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত। বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এগুলো মূল্যায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সবদিক দিয়ে পরিবর্তন ঘটবে এই এলাকার।

এ সময় চীনা দূতাবাসের রাজনৈতিক উপদেষ্টা মি. ওয়াং ঝিহং, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিভাগের দ্বিতীয় সচিব মি. জিইউ ঝিকিন সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন।

এছাড়া পরিদর্শনের সময় চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেন লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন।

অন্যান্যদের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আনোয়ারুল হক ভূঁইয়া, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার, নীলফামারী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুর রহমান, লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টিএমএ মমিন, পাউবো ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদৌলা প্রিন্স, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন, হাতিবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *