ঝিনাইগাতীতে ৩২ বছরেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি ঝিনুক গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের

দেশজুড়ে

জুলাই ৩, ২০২২ ৮:৫০ অপরাহ্ণ

মুরাদ শাহ জাবাল, ঝিনাইগাতী (শেরপুর)

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ৩২ বছরেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি ঝিনুক গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের। এ গুচ্ছগ্রামে নারী-পুরুষ, শিশুসহ প্রায় ২০০ লোকের বসবাস। নানান সমস্যাসহ অভাব-অনটন, দুঃখ আর দুর্দশা যেন এ গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের নৃত্য সঙ্গী।

জানা গেছে, ১৯৯০ সালে ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের ডেফলাই গ্রামে ২০ একর জমির উপর তৎকালীন সরকার গুচ্ছগ্রামটি নির্মাণ করে। এ গুচ্ছগ্রামে ২০ জন গৃহহীন ছিন্নমূল ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ২০ একর জমিও দেওয়া হয়।

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ জানান, ওই জমি চাষাবাদের সৌভাগ্য আজও হয়নি ভূমিহীন পরিবারের লোকজনের ভাগ্যে। জমিগুলো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দলিল করে দেওয়া হলেও তা শুরু থেকেই ওই জমির মালিকানা দাবি করে আসছে বনবিভাগ।

এ নিয়ে বনবিভাগের সাথে মামলা মোকদ্দমায় জরিয়ে পড়েন ভূমিহীনরা। এক পর্যায়ে ভূমিহীনরা ওই জমিতে লিচুসহ বিভিন্ন জাতের ফলমূলের বাগান গড়ে তুলেন। এখান থেকে লাভের সম্ভাবনার মুখও দেখতে শুরু করেন ভূমিহীন পরিবারের লোকজন।

হারুন মিয়া জানান, বনবিভাগ ভূমিহীন পরিবারের বাগানটি ধ্বংস করে দেন। ফলে চরম বিপাকে পরেন ভূমিহীন পরিবারের লোকজন। এবিষয়ে মামলা হয়েছে। বর্তমানেও চলছে ওই মামলা। এভাবে মামলার ঘাণী টানতে গিয়ে ভূমিহীন পরিবারের লোকজন এখন দিশেহারা।

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা হাসেন আলী জানান, বর্তমানে ওই গুচ্ছগ্রামে ২০ পরিবার থেকে প্রায় ৬০ পরিবরে রূপান্তরিত হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই ৬০ পরিবারের ছোট-বড় নারী-পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় ২ লোকের বসবাস। সরকারের দেয়া জমি রক্ষা করতে মামলার ব্যয়ভার মেটাতে গিয়ে ভূমিহীন পরিবারের লোকজন আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ইমান আলী, দেয়ানত আলী, সিদ্দিক আলীসহ আরো অনেকেই জানান, ১৯৯০ সালে তাদের পুনর্বাসনের পর সরকার আর তাদের খোঁজ-খবর নেননি। জুটেনি সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা। তারা বলেন বহু প্রতিকূলতা পার করে কেউ কেউ এখনও টিকে আছেন।

ঘরগুলোও মেরামত করে নিয়েছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ মাটির দেয়াল ঘর নির্মাণ করে কোন রকমে বসবাস করে আসছেন। সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে, কারো কারো মাটির দেয়াল ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। টাকা পয়সার অভাবে মেরামত করাও সম্ভব হয়নি।

গুচ্ছগ্রামের দক্ষিণ পাশের পাঁকা রাস্তা থেকে গুচ্ছগ্রামে প্রবেশের রাস্তাটির ও বেহাল অবস্থা। কাদাপানিতে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিগত ৩২ বছরেও এক কোদাল মাটিও পড়েনি ওই রাস্তায়।

গুচ্ছগ্রামের মসজিদের চাল নেই। পরিত্যক্ত অবস্থায় মসজিদটি ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এ মসজিদে নামাজ আদায় করা সম্ভব হয় না। নামাজ আদায় করতে বাইরের মসজিদে যেতে হয় গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের।

গুচ্ছগ্রামের সভাপতি মোঃ আব্দুল হাই বলেন, সরকার আমাদের মাঁথাগুজার ঠাই করে দিয়েছে। চাষাবাদের জন্য জমিও দিয়েছে। কিন্তু জমিগুলো চাষাবাদের সুযোগ করে দিলে আমরা উপকৃত হবো।

এছাড়া গুচ্ছগ্রামের দিকে সরকার যদি একটু সু-দৃষ্টি দেন তাহলে গুচ্ছগ্রামবাসীদের বেঁচে থাকার অবলম্বন সুগম হবে।

নলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রুকুনুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের সমস্যাগুলো সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আল মাসুদ বলেন, সরেজমিনে দেখে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *