ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর শীতকালীন দলবদল যেমন ছিল

ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর শীতকালীন দলবদল যেমন ছিল

খেলা

ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩ ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ

জানুয়ারি মাস মানেই ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের শীতকালীন দলবদলের সময়। নতুন বছরে সকল ক্লাব চায় নিজেদের ভাণ্ডারে আরো কিছু ট্যালেন্ট যোগ করতে, নিজেদের প্রত্যাশিত সাফল্যের দৌড়ে থাকতে। যে কারণে জানুয়ারি মাসকে বলা হয় উইন্টার ট্রান্সফার উইন্ডো।

গতকাল (৩১ জানুয়ারি) শেষ হয়েছে খেলোয়াড় কেনা-বেচার লড়াই। এবারের বাজারে শেষ মুহূর্তের কয়েকটি দলবদল চমক দিয়েছে সবাইকে।

চেলসি ফরোয়ার্ড হাকিম জিয়েশকে দলে ভিড়িয়েছে পিএসজি। ধারে ম্যানসিটি থেকে বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দিয়েছেন প্রিমিয়ার লিগ জয়ী জোয়াও ক্যানসেলো। এদিকে বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডার এঞ্জো ফার্নান্দেজকে দলে নিয়েছে চেলসি।

একনজরে শীতকালীন দলবদলের উল্লেখযোগ্য তালিকা:

এঞ্জো ফার্নান্দেজ (বেনফিকা থেকে চেলসি): ১০ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড

দলবদলের শুরু থেকে আলোচনায় ছিলেন এঞ্জো ফার্নান্দেজ। তাকে দলে ভেড়াতে নেমেছিল লিভারপুল, চেলসি ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। শেষ পর্যন্ত ইপিএলের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ ১০৭ মিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি ১৩৯৯ কোটি টাকায়) বিনিময়ে তাকে দলে নিয়েছে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসি।

বেনফিকার কোচ রজার শ্মিট জানিয়েছিলেন, চেলসির সঙ্গে এঞ্জোর দলবদলের যে কথাবার্তা শুরু হয়েছিল সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। ভেঙে যাওয়া আলোচনা জানুয়ারির উইন্ডোর শেষ দিনে জমিয়ে তোলে চেলসি।

ডেডলাইন শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে বেনফিকার সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছে ১০ কোটি ৬ লাখ পাউন্ডে এঞ্জোকে দলে ভিড়িয়েছে চেলসি। ২২ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের সঙ্গে চেলসির চুক্তি ৮ বছরের জন্য। ২০৩১ সালে শেষ হবে চুক্তির মেয়াদ।

অ্যান্থনি গর্ডন (এভারটন থেকে নিউক্যাসল): ৪ কোটি পাউন্ড

এভারটন থেকে নিউক্যাসল ইউনাইটেড যোগ দিয়েছেন অ্যান্থনি গর্ডন। যদিও এই উইঙ্গারের দিকে চোখ ছিল চেলসির। কিন্ত সেটি আর হয়নি। ২০১৭ সালে এভারটন মূল দলের হয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেক হয় এই ফুটবলারের।

যদিও এভারটনের সঙ্গে তার সম্পর্কটা আরও পুরোনো; ১১ বছর বয়স থেকেই এভারটন ক্লাবের হয়ে খেলছেন গর্ডন। এভারটনের মূল দলে ৭৮টি ম্যাচ খেলেছেন এই উইঙ্গার। গোল করেছেন ৭টি।

মিখাইল মুদরিক (শাখতার থেকে চেলসি): ৮ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড

‘ইউক্রেনের নেইমার’বলা হয় মুদরিককে। শাখতারের সাবেক কোচ মিরসেয়া লুসেস্কু আবার তার মধ্যে দেখেন কিলিয়ান এমবাপ্পের ছায়া। ড্রিবলিং, গতি আর ফিনিশিংয়ে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে তার। শাখতার দোনেৎস্ক থেকে ইউক্রেনের এই ফুটবলারকে দলে ভিড়িয়েছে চেলসি। সাড়ে ৮ বছরের জন্য স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের ক্লাবটিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ইউক্রেনের এই ফুটবলার।

কোডি গাকপো (পিএসভি থেকে লিভারপুল): ৩ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড

বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে তিন গোল করেছিলেন কোডি গাকপো। বিশ্বকাপে গাকপোর এই পারফরম্যান্স দেখে তাকে দলে ভেড়াতে চেয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। দলবদলের এই লড়াইয়ে লিভারপুলের কাছে হেরে গেছে টেন হাগের দল। পিএসভির মূল দলের হয়ে ১৫৯টি ম্যাচ খেলেছেন গাকপো। করেছেন ৫৫টি গোল, করিয়েছেন আরও ৫০টি।

বেনোয়া বাদিয়াশিল (মোনাকো থেকে চেলসি): ৩ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড

টাকার অঙ্কে শীর্ষ পাঁচ দলবদলের মধ্যে বাদিয়াশিলই একমাত্র ডিফেন্ডার। চেলসির হয়ে এরই মধ্যে দুই ম্যাচে খেলেছেন তরুণ এই ফরাসি ডিফেন্ডার। এর আগে মোনাকোর মূল দলের হয়ে ১৩৫ ম্যাচ খেলেছেন বাদিয়াশিল। গোল ঠেকানো তার প্রধান কাজ হলেও মোনাকোর হয়ে ৬ বার প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে এই ফুটবলারের।

লিয়ান্দ্রো ট্রোসার্ড (ব্রাইটন থেকে আর্সেনাল): ২ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড

আক্রমণভাগের গভীরতা আরো বাড়াতে ব্রাইটন থেকে ট্রোসার্ডকে দলে নিয়েছেন আর্সেনাল। বোঝাই যাচ্ছে, শীর্ষে থাকলেও বাকি অর্ধেক মৌসুমের জন্য কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না মিকেল আর্তেতা।

জোয়াও ফেলিক্স (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ থেকে চেলসি): ৯৬ লাখ ৯০ হাজার পাউন্ড 

ছয় মাসের ধারে আনতে ৯ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন পাউন্ড ফি দিয়েছে চেলসি। যদিও চেলসির হয়ে শুরুটা ভালো হয়নি এই পর্তুগিজের। চেলসির হয়ে প্রথম ম্যাচেই দেখেছেন লালকার্ড।

জর্জিনহো (চেলসি থেকে আর্সেনাল): ১২ মিলিয়ন পাউন্ড

একসময় চেলসির নিয়মিত মুখ ছিলেন জর্জিনহো। চেলসির হয়ে খেলেছেন ২২৩ ম্যাচ। তবে চেলসি কোচের নতুন পরিকল্পনায় না থাকায় ১২ মিলিয়ন পাউন্ডে আর্সেনালের কাছে এই ডিফেন্ডারক্ব বিক্রি করেছে ব্লুজরা।

মেম্ফিস ডিপাই (বার্সেলোনা থেকে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ): ২৬ লাখ পাউন্ড (ধার)

জোয়াও ফেলিক্সের বিদায়ের পর টালমাটাল আক্রমণভাগে স্থিতি ফেরাতে মেমফিস ডিপাইকে দলে নিয়েছেন অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ।

জোয়াও ক্যানসেলো (ম্যান সিটি থেকে বায়ার্ন মিউনিখ): ধার

কোচ পেপ গার্দিওলার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোয় ম্যানচেস্টার সিটি ছাড়তে হয়েছে পর্তুগিজ তারকা জোয়াও কানসেলোকে। ম্যান সিটি ছেড়ে তিনি এখন জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে ধারে যোগ দিয়েছেন। আপাতত ধারে গেলেও মৌসুম শেষে ৬ লাখ ১০ হাজার পাউন্ডে ক্যানসেলোকে পাকাপাকিভাবে কিনে নেয়ার সুযোগ আছে বায়ার্নের।

ভাউগ ভেগহোর্স্ট (বার্নলি থেকে ইউনাইটেড): ধার

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ টেন হাগ স্বদেশি গাকপোকে দলে ভেড়াতে চেয়েছিলেন। লিভারপুলের সঙ্গে সেই লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ার পর গাকপোর সতীর্থ ভট ভেগহর্স্টকে ধারে দলে নিয়েছে তারা। ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ডে তাকে পেয়েছে ইউনাইটেড। মৌসুম শেষে ২০ মিলিয়ন পাউন্ডে তাকে পাকাপাকিভাবে কিনে নেওয়ার সুযোগ আছে ইউনাইটেডের সামনে।

কেইলর নাভাস (পিএসজি থেকে নটিংহাম ফরেস্ট): ধার

বয়সটা ৩৬। আগের সেই ধার আর নেই। পিএসজিতেও কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়েরের প্রথম পছন্দ ছিলেন না নাভাস। কোস্টারিকার এই গোলরক্ষককে বাকি অর্ধেক মৌসুমের জন্য দলে নিয়েছে নটিংহাম ফরেস্ট।

এ ছাড়াও এই উইন্ডোতে দলবদল করেছেন-

৭ মিলিয়ন পাউন্ড ম’গ্লাডবাখ থেকে বায়ার্ন মিউনিখে ইয়ান সোমার, লোনে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে ম্যান ইউনাইটেডে মার্সেল সাবিতজার, লোনে ভিয়ারিয়াল থেকে টটেনহামে আরনট দানজুমা, ফ্রিতে আয়াক্স থেকে বায়ার্ন মিউনিখে ডেলি ব্লিন্ড, লোনে স্পোর্টিং থেকে স্পার্সে পেদ্রো পোররো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *