‘আত্মহত্যা’র বন আওকিগাহারা

ফিচার স্পেশাল

জুন ১২, ২০২২ ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর হলেও এই বনটি পৃথিবীতে পরিচিত হয়েছে ‘আত্মহত্যা’র বন হিসেবে। বনটির নাম আওকিগাহারা হলেও গাছের সমুদ্র নামেও এই স্থানটির পরিচিতি রয়েছে।

এ বনটি জাপানে অবস্থিত।  জাপানের টোকিও শহর থেকে ১০০ মাইল পশ্চিমে মাউন্ট ফুজির উত্তর-পশ্চিমে ৩৫ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে এটি বিস্তৃত।

বনটির ক্ষেত্রে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো এখানে সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে মানবদেহের কঙ্কাল। কারণ অবশ্য একটাই। জাপানের অসংখ্য মানুষ আত্মহত্যার জন্য এই বনটিকে বেছে নেয়।

ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির এনথ্রোপলজির প্রফেসর কারিন নাকামুরা বলেন, জাপানের মানুষ এ বনটিকে আত্মহত্যার জন্য বেছে নেওয়ার কারণেই বনটি আত্মহত্যার বন হিসেবে পরিচিত হয়েছে।

জাপানি স্থানীয়রা মনে করে, প্রেতাত্মারা এখানে ঘুরে বেড়ায়। তাই এই বনে গেলে আর কেউ ফিরে আসে না। তবে জাপানি সাইক্রেটিক ড. ওসিটোমো টাকাহাসি মনে করেন, কথিত এসব কাহিনীর চেয়ে জাপানিদের এখানে আত্মহত্যা করতে বেশি প্ররোচিত করেছে জনপ্রিয় লেখকের বই এবং মুভিগুলো।

ধারণা করা হয়, ১৯৬০ সালে জাপানি লেখক সাইকো মাটসুমোটোর ‘টাওয়ার অফ ওয়েবস’ উপন্যাস প্রকাশের পর থেকেই আওকিগাহারা জঙ্গলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। উপন্যাসের দুটি চরিত্র এই জঙ্গলে এসে আত্মহত্যা করেছিল। এছাড়া ২০১৬ সালে আমেরিকান হরর ফিল্ম দি ফরেস্টেও দেখানো হয় জমজ দুই বোন এই বনে গায়েব হয়ে যায়।

গল্পের অনেক নায়ক নায়িকাদেরই এই বনে হারিয়ে যেতে বা আত্মহত্যা করতে দেখা গেলেও জাপানিরা এই বনে আত্মহত্যা করে মূলত মানসিক নানা টানা পোড়নের জের ধরে। জাতিগতভাবে জাপানিরা খুবই নরম মনের মানুষ হয়ে থাকে। বেশি আবেগপ্রবণ হয়েই পৃথিবীকে চির বিদায় জানাতে এ স্থানকে তারা বেছে নেয়।

জাপানের জাতীয় সমীক্ষা বলছে, জাপানে নারীদের তুলনায় পুরুষদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি। প্রতিবছর দেশটিতে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এ পর্যন্ত আত্মহত্যার সর্বোচ্চ সংখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় ২০০৫ সালে। যেখানে ৩৪,৪২৭ জন জাপানি আত্মহত্যা করে। সবশেষ ২০২১ এ তা সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ২১,০০৭ জনে।

সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারাবিশ্বে আত্মহত্যাপ্রবণ দেশ হিসেবে জাপানের র‌্যাংক রয়েছে ২৪ এ। এদেশে আত্মহত্যা করার বয়স হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১৫ থেকে ৪৪ বছর।

আত্মহত্যার জন্য এই বনকেই বেছে নেওয়ার আরও একটি কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিপ্রাকৃত সম্মোহনী শক্তির কথা। এই বনের গোলক ধাঁধার রাস্তা, অদ্ভূত আকৃতির গাছ, অসংখ্য গর্ত ও অন্ধকার আচ্ছন্ন গুহা মানুষের মনকে খুব দ্রুত মৃত্যুর দিকে তাড়িত করতে সক্ষম।

এছাড়া  এখানকার মাটিতে ম্যাগনেটিক আয়রনের পরিমাণ এতই বেশি যে সেলফোন সার্ভিস, জিপিএস সিস্টেম এমনকি কম্পাসও এখানে কাজ করে না।  রহস্যময় এই বনে নেই কোনো বন্য প্রাণীও।

জাপান সরকার আত্মহত্যা কমাতে সুইসাইড ফরেস্টের প্রবেশপথে লাগায় সিকিউরিটি ক্যামেরা, বাড়ায় সতর্ক প্রহরাও। বনে ভ্রমণকারীরা যাতে আত্মহত্যা না করে তার জন্য তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়। তবুও এই বনে পাওয়া যায় আত্মহত্যাকারীর মৃতদেহ।

সূত্র: সিএনএন  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *