আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক কে?

আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক কে?

রাজনীতি স্পেশাল

অক্টোবর ২০, ২০২২ ৪:৪১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে দেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল। জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে ইতিমধ্যে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা জেলা, মহানগর কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন আওয়ামী লগের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়েই আলোচনা হচ্ছে বেশি।

ঐতিহ্যবাহী দলটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কে আসছেন বা কার কাঁধে উঠছে কঠিন দায়িত্ব তা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন আলোচনা হচ্ছে, তেমনি বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরেও সরব আলোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগের জন্য তাই প্রাসঙ্গিক বাস্তবতায় আসছে ডিসেম্বরের জাতীয় সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নতুন নেতৃত্ব দ্বারা তাদের প্রধান ও প্রথম কাজ হবে, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মাঠ দখলের রাজনীতিকে আশ্রয় দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। কাজেই খেলা হবে, এমন উক্তি অর্থবহ প্রেক্ষাপটে আসন্ন, তা বুঝতে বাকিও নেই।

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সামনে সাতটি চ্যালেঞ্জ দাঁড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের সমর্থিত রাজনৈতিক শক্তিকে মোকাবিলা করা। দুই নম্বর চ্যালেঞ্জ হলো, বৈশ্বিক শক্তির চাপ সামলিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা। তিন-এ রয়েছে জনশ্রেণির আস্থা অর্জনে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। চার, অভ্যন্তরীণ সংকট কাটিয়ে ক্রেডিবল একটি কাউন্সিল বা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলকে পুনর্গঠন করা। পাঁচ নম্বর চ্যালেঞ্জ হিসেবে আওয়ামী লীগের সামনে রয়েছে রাজনৈতিক জোটকে পুনরায় গুরুত্ব দিয়ে সমমনাদের মূল্যায়ন করার বিষয়টি। ছয় নম্বর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দলটির সামনে রয়েছে- প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা সে সব আমলাদের শনাক্ত করা, যারা একটি বিশেষ শক্তির স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে বা যেতে পারে। সবশেষ, সাত নম্বরে রয়েছে, সুশীল সমাজের নামে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষীদের উপদ্রব প্রতিহত করা।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের শেষভাগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনাই বেশি। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, নতুন নেতৃত্ব দিয়েই আগামী দিনের রাজনীতি কোন পথে চলবে তা নির্ধারণ করা হবে। নতুন নেতৃত্ব দ্বারা আমরা রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করব। তিনি বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে। দিতে থাকুক।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভানেত্রী হিসাবে থাকবেন নিশ্চিত। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে দলটি নতুন নেতার সন্ধান করতে যাচ্ছে।

এদিকে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শারীরিক সামর্থ্য নিয়ে আগের মত করে দলের জন্য ভূমিকা না রাখতে পারলেও তাকে প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যম কর্তৃক তার অবস্থান স্পষ্ট করতে দেখা যায়। অনেকের কাছে এই প্রশ্নও রয়েছে যে, তিনি কি এমন গুরুদায়িত্ব নিয়ে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হয়ে বহাল থাকতে চান কিনা !

আওয়ামী লীগের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় আওয়ামী লীগের জন্য একজন খুবই দক্ষ, সৎ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাধারণ সম্পাদকের দরকার। যিনি মুলত সেনাপতি হয়ে শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনা কে মসৃণ করতে নিজ দলের হয়ে শ্রেষ্ঠ মুখপাত্র হয়ে সবদিক ঠিক রাখবেন। সমন্বয় করবেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গেল দুই মাসে নিজের গতি বাড়িয়েছেন। এতে করে বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি ফের এই দায়িত্বে থাকার মানসে আছেন।

অন্যদিকে, এবারের কাউন্সিলে নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে জোর গুঞ্জনই কেবল নয়, ভেতরে ভেতরে অনেক নেতার সুপ্ত বাসনা প্রকাশ্যে চলে আসছে। যে তালিকায় জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বাহাউদ্দীন নাসিমের নাম রয়েছে।

তবে, দলের তিন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্য থেকে এবার নতুন সাধারণ সম্পাদক কে দেখা যাবে বলে আলোচনা ক্রমশ বাড়ছে। যে তিন নেতার নাম আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে, তাঁরা হলেন- এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক ও জাহাঙ্গীর কবির নানক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান সফরের পরই আওয়ামী লীগ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন নিয়ে মেতে যাবে বলে দলের নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের একজন নেতা সংশ্লিষ্ট সূত্রকে বলছেন, শেখ হাসিনা যেভাবে বলবেন সেভাবেই দলকে সুগঠন করা হবে এবং তিনি জানেন কী করতে হবে !’

সাধারণ সম্পাদক পদে অন্যান্যদের মধ্যে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তাঁরা হলেন, মাহবুব উল আলম হানিফ, মির্জা আজম, দীপু মনি, হাছান মাহমুদ ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস।

আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলন নিয়ে বিভিন্ন পদে অনুমাননির্ভর নানাজনের নাম আসলেও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রবীণ-নবীনের সংমিশ্রনে আগামী কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হবে। তবে গতবারের কেন্দ্রীয় কমিটি ও মন্ত্রিসভার মতো এবারও বড় চমক আনতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চমক হিসাবে এই মুহূর্তে সবচাইতে বড় আলোচনায় রয়েছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। যিনি সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন। দলের ত্যাগী নেতা ওবায়দুল কাদের থেকে যাবেন, নাকি তিনি আসবেন এই পদে—এমন আলোচনা গুরুত্বসহকারে আওয়ামী লীগের মধ্যে বেড়েছে।

এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলছেন, ‘নির্বাচনের হাওয়া শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যেই। রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নেবে। এক্ষেত্রে সরকার পরিচালনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ওপর দায়িত্ব অনেক বেশি। আশা করি দলের সভাপতি যোগ্য ও পরীক্ষিতজনকেই এবার সাধারণ সম্পাদক করবেন।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী দল। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আওয়ামী লীগ সবসময় বদ্ধপরিকর। দলের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে সাধারণ সম্পাদক করবেন। তিনি অনেক হিসাব-নিকাশ মাথায় রেখেই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কেননা তার সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *