৭০ বছর পর বাঘমুখো বিমানে ফিরছে বিলুপ্ত চিতা

ফিচার স্পেশাল

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ

১৯৫০ সালে ভারত থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় চিতা। তাই ভারতে চিতার পর্যাপ্ত বংশবৃদ্ধি করতে আফ্রিকা থেকে আটটি চিতাকে উড়িয়ে আনা হবে ভারতে। নামিবিয়া থেকে এসে মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যানে ঠাঁই পাবে এই চিতাগুলো।

বিশেষ ভাবে পরিবর্তিত বি-৭৪৭ জাম্বো জেট বিমানে এই চিতাগুলোকে ভারতে নিয়ে আসা হবে। ‘প্রজেক্ট চিতা’ সফল করতে এরই মধ্যে এই বিমান নামিবিয়ার মাটি ছুঁয়েছে। কী কী বিশেষত্ব রয়েছে এই বিমানের?

‘প্রজেক্ট চিতা’ সফল করতে এরই মধ্যে এই বিমান নামিবিয়ার মাটি ছুঁয়েছে

‘প্রজেক্ট চিতা’ সফল করতে এরই মধ্যে এই বিমান নামিবিয়ার মাটি ছুঁয়েছে

যে বি-৭৪৭ বিমানে করে চিতাগুলোকে আনা হবে তার সামনের অংশে আঁকা হয়েছে একটি চিতার মুখ। চিতা আনার জন্য নতুন ভাবে সাজানো হয়েছে বি-৭৪৭ বিমানটির ভেতরের অংশ। বিমানের ভেতরের মূল অংশের বেশির ভাগ জায়গা ফাঁকা করে সেখানে রাখা হয় পশু রাখার খাঁচা। এই খাঁচাগুলোতে ভরেই চিতাগুলোকে ভারতে উড়িয়ে নিয়ে আসা হবে।

বিমানের ভেতরে থাকবেন একজন পশুচিকিৎসক। যাত্রাপথে চিতাগুলোর যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তা দেখে রাখার জন্যই এই পশুচিকিৎসককে রাখা হবে বিমানের ভেতরে। প্রয়োজনে খাঁচা খুলে চিতাগুলোর চিকিৎসা করার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে ঐ পশুচিকিৎসককে। পশুচিকিৎসক ছাড়াও ঐ বিমানে থাকবেন বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বেশ কিছু নিরাপত্তারক্ষী। মূলত দূরপথে যাত্রার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল বি-৭৪৭ বিমানটি।

১৭ সেপ্টেম্বর এই কার্গো বিমানে করে রাজস্থানের জয়পুরে আটটি চিতা নিয়ে আসা হবে

১৭ সেপ্টেম্বর এই কার্গো বিমানে করে রাজস্থানের জয়পুরে আটটি চিতা নিয়ে আসা হবে

বি-৭৪৭ বিমান এক টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে পারে। অর্থাৎ নামিবিয়া থেকে ভারতে আসার সময় জ্বালানি ভরার জন্য কোথাও দাঁড়াতে হবে না এই বিমানকে। চিতাগুলোকে সুস্থ ভাবে ভারতে নিয়ে আসার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় বন বিভাগের এক জন আধিকারিক জানিয়েছেন, পুরো যাত্রাপথে চিতাগুলোকে খালি পেটে রাখা হবে। তাদের যাতে বমি বমি ভাব বা অন্য কোনো অসুবিধা না হয় তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৭ সেপ্টেম্বর এই কার্গো বিমানে করে রাজস্থানের জয়পুরে আটটি চিতা নিয়ে আসা হবে। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচটি মহিলা এবং তিনটি পুরুষ চিতা। তার মধ্যে আবার দুইটি চিতা সম্পর্কে সহোদর। এক জোটে শিকার করাই নাকি তাদের অভ্যাস। এরপর হেলিকপ্টার করে জয়পুর থেকে মধ্যপ্রদেশের শেওপুর এলাকার কুনো জাতীয় উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হবে এই চিতাগুলোকে। সেখানেই তারা স্থায়ী ভাবে বসবাস করবে।

চিতাগুলোকে স্বাগত জানাতে জন্মদিনের দিন নিজে জাতীয় উদ্যানে উপস্থিত থাকবেন মোদী

চিতাগুলোকে স্বাগত জানাতে জন্মদিনের দিন নিজে জাতীয় উদ্যানে উপস্থিত থাকবেন মোদী

১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিন। চিতাগুলোকে স্বাগত জানাতে জন্মদিনের দিন নিজে জাতীয় উদ্যানে উপস্থিত থাকবেন মোদী। নিজে হাতে চিতাগুলোকে ছেড়ে আসবেন সেখানে। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন।

প্রথমেই সরাসরি জঙ্গলে না ছেড়ে তারের বেড়ায় ঘেরা মুক্ত প্রান্তরে ছাড়া হবে আটটি চিতাকে। যাতে তারা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই এই ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা নামিবিয়া থেকে আগামী পাঁচ বছর ধরে ধাপে ধাপে ৫০টি চিতা ভারতে আনা হবে। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আরো ১২টি চিতা আনা হবে বলেও জানা গিয়েছে। যে চিতাগুলো আনা হবে তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ অল্প বয়স্ক চিতা।

 নামিবিয়া থেকে আগামী পাঁচ বছর ধরে ধাপে ধাপে ৫০টি চিতা ভারতে আনা হবে

নামিবিয়া থেকে আগামী পাঁচ বছর ধরে ধাপে ধাপে ৫০টি চিতা ভারতে আনা হবে

অতিরিক্ত শিকার এবং বাসস্থান ধ্বংসের মতো কারণে ভারত থেকে আস্তে আস্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বিড়াল প্রজাতির এই প্রাণী। ১৯৪৭ সালে সরগুজার (বর্তমান ছত্তীসগঢ় রাজ্যে অবস্থিত) রামানুজ প্রসাদ সিংহদেওর গুলোতে কোরিয়ার শাল বনে মারা যায় ভারতের শেষ তিন চিতা। পাঁচ বছর পর ১৯৫২ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে চিতাকে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়। সেই সময় থেকে গত সাত দশক ধরে চিতা ছিল না এ দেশে। মোদী সরকারের দাবি, ভারতের অরণ্যে লুপ্ত হয়ে যাওয়া সেই চিতা ফেরানোর উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ।

তবে ভারতে যে চিতাগুলো ফিরিয়ে আনা হচ্ছে সেগুলো আফ্রিকার চিতা। কেবল মাত্র ইরানেই এখনও পর্যন্ত এশীয় চিতার দেখা মেলে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আমলে এক বার ইরান থেকে এশীয় চিতা ভারতে নিয়ে আসার তোড়জোড় শুরু হলেও পরে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

সূত্র: আনন্দবাজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *