৩ বছর আগেই বিজ্ঞানীদের হুঁশিয়ারি ছিল মাঙ্কি ভাইরাস সম্পর্কে

স্বাস্থ্য স্লাইড

মে ২৪, ২০২২ ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ

ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি (ইউকেএইচএসএ) এ বছরের ৭ মে একটি অফিশিয়াল বিবৃতি জানানোর পরই মাঙ্কি ভাইরাস বিষয়ে বিশ্ববাসী নড়েচড়ে বসতে শুরু করে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ভাইরাসটি সম্পর্কে তিন বছর আগেই তারা সতর্ক করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, ১১টি দেশে ৯০ জনের বেশি ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আরও ২৮ সন্দেহভাজন রোগী পাওয়া গেছে। এদিকে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ শার্লট হ্যামার মনে করছেন, বিশ্বে মাঙ্কিপক্সের রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে।

যুক্তরাজ্যের পর একে একে স্পেন ও পর্তুগালের মতো একাধিক দেশে ক্রমেই প্রাদুর্ভাব বাড়ছে মাঙ্কি ভাইরাসের। তবে সময় থাকতে একটু সতর্ক হলেই এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সফলভাবে আটকানো যেত বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।

২০১৯ সালে লন্ডনের একটি বিজ্ঞান সম্মেলনে গবেষকরা মাঙ্কি ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করলেও সে সময় এ বিষয়টিকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। আর গুরুত্ব না দেয়ার কারণেই আজ বিশ্ববাসীকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিজ্ঞানীই। তাই তিন বছর আগের সেই ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যেতেই আক্ষেপ করছেন অনেক গবেষক।

পৃথিবীতে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল ১৯৫৮ সালে কোপেনহেগেনের স্টেট সিরাম ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত সাইনোমলগাস বানরের উপনিবেশে। তবে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে ১৯৭০ সালে মানুষের মধ্যে এটি প্রথম শনাক্ত করা হয়। দীর্ঘ সময় নিশ্চুপ থাকার পর ২০১৮ সালে এ রোগটির অস্তিত্ব আবার টের পায় গবেষকরা।

কাঠবিড়ালি বা ইঁদুর মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বাহক হলেও আক্রান্ত রোগী থেকেও এ রোগ অন্য সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে ছড়াতে পারে। তাই এ রোগটি একই সঙ্গে সংক্রামক ও ছোঁয়াচে রোগ। শ্বাসনালি, শরীরে তৈরি হওয়া কোনো ক্ষত, নাক কিংবা চোখের মাধ্যমেও অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে এই মাঙ্কি ভাইরাস।

তবে সম্প্রতি গবেষকরা বলছেন, যৌনমিলন ছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো করে মাংস রান্না না করে খাওয়া, সংক্রামিত প্রাণীর প্রাণিজ পণ্য খাওয়া, আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানায় ঘুমানো বা একই প্লেট বা কাপ ব্যবহার করা সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মাঙ্কিপক্স একটি ডিএনএ ভাইরাস হওয়ায় করোনা কিংবা ফ্লুজাতীয় ভাইরাসের মতো এটি পরিবর্তিত হবে না। তাই করোনা মহামারির মতো বিপর্যয় হবে না বলে আশা করছেন অনেকেই। তবে পরিস্থিতি খারাপের দিকেও যেতে পারে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

এ বিষয়ে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক অ্যাডম কুসারকি বলেন, ‘আমরা সবসময় ভাবতাম ইবোলা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। অথচ তা সম্ভব হয়নি।’

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক জিমি হোয়াইটওয়ার্থ বলেন, ‘আমি মনে করি, বর্তমান স্তরে সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়া দরকার। আমরা এখনই সবকিছু আবিষ্কার করতে পারব না। রোগটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। যে কারণে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই।’

তবে কীভাবে বিজ্ঞানীরা এ রোগটি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন–এমন প্রশ্নে তারা জানান, ২০১৮ সালে আবার মাঙ্কি ভাইরাসের অস্তিত্ব ফিরে আসাটা তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা ভাবতে শুরু করে ভিন্নভাবে।

এ বিষয়ে ‘ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ‘লন্ডন স্কুল অব ট্রপিক্যাল হাইজিন অ্যান্ড মেডিসিন’-এর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ১৯৮০ সালের পর পৃথিবীতে স্মল পক্স বা গুটিবসন্ত অস্তিত্ব না থাকার কারণে মানুষের মধ্যে গুটিবসন্তের টিকা নেওয়ার প্রবণতা কমেছে। তাই মানুষের মধ্যে স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। মাঙ্কিপক্স সে গোত্রেরই একটি ভাইরাস হওয়ায় বিজ্ঞানীরা আগাম সতর্ক করেছিল সবাইকে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *