স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংসদে ক্ষোভ

স্বাস্থ্য স্লাইড

আগস্ট ৩০, ২০২২ ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

স্বাস্থ্য খাতে চরম অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসক, নার্সসহ জনবল সংকট এবং ওষুধের দামে রকমফের নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিরোধীদলীয় সংসদ-সদস্যরা।

সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তরপর্বে অংশ নিয়ে তারা এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেককে উদ্দেশ করে বলেন, টানা ১৫ বছর শাসনক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। অথচ স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা এবং অব্যবস্থাপনা রয়েই গেছে।

এ সময় তারা আরও বলেন, মানসম্পন্ন চিকিৎসা নেই। চিকিৎসক নেই, নার্স নেই, টেকনিশিয়ান নেই। চিকিৎসার জন্য আধুনিক সরঞ্জামাদি নেই। এসব কারণে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ সুচিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ছুটছেন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে চলে যাচ্ছে।

জবাবে অবশ্য এসব সমালোচনা আমলে না নিয়ে মন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক বলেন, ‘শুধু সমালোচনার জন্য সমালোচনা আর বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করলে চলবে না। বাস্তবতা খতিয়ে দেখতে হবে। বিএনপির আমলে চিকিৎসাব্যবস্থা বলে কিছুই ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন দেশে চিকিৎসা খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। অনেক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং নার্সিং ইনস্টিটিউট হয়েছে। ২৫ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ৫০ বেডে, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ২৫০ শয্যা বেডে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোর অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। চিকিৎসাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে এবং যুগোপযোগী করতে সরকার যা যা করা দরকার, তাই করেছে। তিনি আরও বলেন, অতীত ভুলে গেলে চলবে না। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বিএনপির শাসনামলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান সরকার আবার এসব চালু করেছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তরপর্বে স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ।

তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বলতে কিছু নেই। চিকিৎসক নেই, নার্স নেই, টেকনিশিয়ান নেই। এমনকি প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও নেই।

কাজী ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছে। অথচ একটি ওষুধ হাসপাতালে থাকলে এভাবে মানুষকে মরতে হতো না। তিনি এ সময় মন্ত্রীর কাছে প্রতিটি হাসপাতালে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক রাখার জন্য দাবি জানান।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশ্নের জবাবে যে কথা বলেছেন, তাতে বলতে হয় সাপ হয়ে দংশন করেন, ওঝা হয়ে ঝাড়েন। অর্থাৎ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনেই সারা দেশে ভুয়া, ভেজাল ক্লিনিকগুলো গড়ে উঠছে। যখন গড়ে ওঠে, তখন কেউ দেখার থাকে না-শত শত হাজারে। যখন কেউ মারা যায়, কিংবা গণমাধ্যমে যাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে তার প্রশ্নের এই অংশের জবাব দেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

প্রশ্নোত্তরপর্বে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ-সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, হাসপাতালগুলোয় ওষুধ নেই। বাইরে ওষুধের একেকরকম দাম। একই ওষুধ দুই-তিন রকম দামে বিক্রি হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। গণফোরাম সংসদ-সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, হাসপাতালগুলোয় অনিয়ম হচ্ছে। দুর্নীতি হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এভাবে ঢালাওভাবে বললে হবে না। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিন। ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশে একই রোগের ওষুধে কোম্পানি ভেদে দামের তারতম্য আছে। এটার সমন্বয় করতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কি না, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধের দাম পদ্ধতি অনুযায়ী ওষুধ প্রশাসন নির্ধারণ করে দেয়। এর মধ্যে ওষুধের কাঁচামাল যেগুলো আমদানি করা হয় এবং অন্যান্য উৎপাদন খরচ ও ভ্যাট যোগ করে একটা মূল্য ঠিক করে দেওয়া হয়। কিন্তু ওষুধের পরের দামটা (ভোক্তা পর্যায়ে) ঔষধ প্রশাসন দেখে না। ভ্যাট নির্ণয়টা সঠিক আছে কি না, সেটা তাদের এখতিয়ার। অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগের ১৩০টির মতো ওষুধ আমরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। বাকি শত শত ওষুধের দাম আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। আমরা শুধু ভ্যাট ও উৎপাদন খরচ দেখে থাকি।

তিনি বলেন, আসলে দামের এত তারতম্য হওয়া উচিত না। অনেকেই কাঁচামাল ইউরোপ থেকে আনেন, যার দাম বেশি। কেউ ভারত ও চীন থেকে আনে, তাদের আবার দাম একটু কম থাকে। এটারও একটা তারতম্য হয়। তারপরও দামের এত তারতম্য হওয়া উচিত না। আমরা বিষয়টি দেখব। এই বিষয়ে যা যা করার দরকার, আমরা করব।

পরে আরেক প্রশ্নের সময় বিএনপির সংসদ-সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, মন্ত্রী কথায় কথায় বিএনপির দোষ দেন। বিএনপির আমলের কথা বলেন। বিএনপি ক্ষমতায় নেই ১৫ বছরেরও বেশি সময়।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায়। অথচ স্বাস্থ্য খাতের জীর্ণদশা রয়েই গেছে। এ খাতে যত না উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি অনিয়ম এবং লুটপাটের কথা বেশি প্রকাশিত হচ্ছে।

হারুনুর রশীদ তার প্রশ্নে জানতে চান, বিগত সরকারের দোহাই দিয়ে আর কোনো লাভ নেই। কারণ, ১৫ বছর টানা আপনারা ক্ষমতায়। দেশে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না বলেই মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারতে চিকিৎসার জন্য চলে যাচ্ছে। এতে দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার হচ্ছে। সেই সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য আপনারা স্বাস্থ্য খাতগুলো দুর্বল করে রাখছেন কি না জানি না।

জবাবে বিএনপির আমলে স্বাস্থ্যসেবা খাতে কোনো উন্নয়ন হয়নি দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা (বিএনপি) কিছুই তৈরি করেননি। গত ১৫ বছরে এ খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে দেশের গড় আয়ু ৭৩ বছর, এমডিজি অর্জন হয়েছে। ভ্যাকসিন হিরো হয়েছেন। আপনাদের সময় একটা পুরস্কারের মুখও কেউ দেখেনি। সেটা ভুলে গেলে চলবে না। আপনারা সেটা ভুললে চলবে না।

জাহিদ মালেক বলেন, আপনাদের (বিএনপি) সময়ে কয়টা হাসপাতাল ছিল? এখন কয়টা হাসপাতাল আছে, সেটা জানেন? দুই-একটা বলতে হয়, দেশে ১১১টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে। আপনাদের সময় ১০টাও ছিল না। সেটাও করেননি। এখন নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে সাড়ে তিনশ। আপনাদের সময় সিট ছিল সাড়ে ছয়শ। এখন ৩৪ হাজার নার্সিং আসন রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী ভারতে চিকিৎসার জন্য খুব বেশি লোক যায় না বলে দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, যখন স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা দেশেই করবেন, তখন লোকে বাইরে যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *