স্বপ্নের পদ্মা সেতু: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেন ঈদ আনন্দ

দেশজুড়ে স্লাইড

জুন ২৫, ২০২২ ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ

স্বপ্নের পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার খবরে আনন্দে আত্মহারা যশোর, বেনাপোল স্থলবন্দর ও নড়াইল অঞ্চলের মানুষজন। তারা বলেন- স্বপ্নের পদ্মা সেতু যেন আজ আমাদের কাছে ঈদ আনন্দ।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী বলেন, পদ্মা সেতু চালুর ফলে যশোর থেকে ঢাকার দুরত্ব মাত্র ১৫৭ কিলোমিটার, বেনাপোল থেকে ঢাকার দূরত্ব ১৯৩ কিলোমিটার এবং নড়াইল থেকে ঢাকার দূরত্ব ১২৭ কিলোমিটার হবে।

যশোর জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি: নং-২২৭) সভাপতি আজিজুল ইসলাম মিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে যশোর, বেনাপোল, নড়াইল, খুলনা, ঢাকাসহ আশেপাশের জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এ সেতু চালুর ফলে ঢাকা থেকে যশোর, বেনাপোলসহ অন্যান্য জেলায় কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার দেড়শ কিলোমিটার কমে যাবে। এছাড়া শিল্প শহর যশোরের নওয়াপাড়া এবং সাতক্ষীরা স্থলবন্দরের যোগাযোগ সহজ হবে।

নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী জহিরুল হক জহির বলেন, এই ভালো লাগা ভাষায় বোঝানোর মত নয়। বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু আমাদের জন্য গৌরবের।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার হাজার হাজার মানুষের যোগাযোগের সহজতর পথ এ রুট দিয়ে। উৎসব আর ছুটির দিনে ঘাটে বাড়ে মানুষের চাপ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে বসে থাকা এসব কিছু পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষের অসহনীয় ভোগান্তি দূর হবে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন যশোর, স্থলবন্দর বেনাপোলসহ নড়াইল অঞ্চলের যাত্রীরা। সেতু চালুর দিনক্ষণ ঘোষণায় যাত্রীদের চোখে মুখে স্বস্তির ঝিলিক। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে এবার আর চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়ে ঘরে ফিরতে হবে না। ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হবে না পদ্মা নদী। ফেরি ঘাটে পার হওয়ায় জন্য যানবাহন নিয়ে চালক ও যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার অবসান হবে। এ আনন্দ এখন থেকেই যাত্রীদের চোখে মুখে দেখা যাচ্ছে।বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু চালুর খবর এ এলাকার মানুষের মুখে মুখে।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ির বাসিন্দা ঢাকায় ব্যবসায়ি হিসেবে কর্মরত মো. ইমদাদ হোসেন বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের সময় বাড়ি ফিরতে এবং ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমরা যারা এ রুটের যাত্রী তারা বুঝি ঘাটের দুর্ভোগ কত অসহনীয়। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ যেন আমাদের কাছে ঈদ আনন্দ।

রুপগঞ্জ বাজারের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী প্রকাশ কুন্ডু বলেন, সেতু চালুর মধ্য দিয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে ব্যবসায়িক কাজ সেরে আবার বিকেলে ফিরে আসতে পারব।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছাদেক আহম্মেদ খান জানান, পদ্মা সেতু রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। ফেরিঘাটের অপেক্ষা আর যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। যাত্রীসাধারণের পাশাপাশি পরিবহনে কৃষিপণ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রেও সহজ হবে। এ অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতার বড় সাফল্য পদ্মা সেতু। সড়ক পথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নদীর আর কোনো প্রতিবন্ধকতা রইল না।

বাস চালক মকতুল হোসেন জানান, ফেরিঘাট মানেই ভোগান্তি। তাদের আশা পদ্মা সেতু চালু হলে সেই কষ্ট আর থাকবে না। এই সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের যাতায়াত দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে তিনি জানান।

পরিবহন মালিক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, নড়াইল থেকে কাঁঠালবাড়ি বাংলাবাজার ঘাট পর্যন্ত বর্তমানে খানজাহান আলী পরিবহন চলাচলরত আছে। পদ্মা সেতু চালু হলে নড়াইল থেকে সরাসরি ঢাকা যেতে পারবে পরিবহনগুলো। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগের হাত থেকে পরিত্রাণ পাবে। এ সেতু চালুর মধ্য দিয়ে পরিবহন ব্যবসায়ে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *