সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড: বিএম কন্টেইনার ডিপো নিয়ে যা জানা গেল

জাতীয় স্লাইড

জুন ৬, ২০২২ ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানায় তৈরি করা কন্টেইনার টার্মিনালে আগুন লেগে এ পর্যন্ত ৪৯ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বিএম কনটেইনার ডিপো নামে ঐ কোম্পানির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এটি একটি জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানি। ২০১১ সালে চট্টগ্রামের প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ডে এ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোটি স্থাপন করা হয়।

ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, নেদারল্যান্ডসের নাগরিক বার্ট প্রঙ্ক কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০১১ সালের মে মাস থেকে কার্যক্রম শুরু করে এ টার্মিনালটি।

বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে পাঠানো রফতানি পণ্য অথবা আমদানি করা পণ্য কন্টেইনারে করে এ ডিপোতে এনে জমা করা হয়। এরপর সেটি জাহাজে করে বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয় অথবা দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। রফতানিকারক কোম্পানিগুলো এ ডিপোর জায়গা ভাড়া নিয়ে কন্টেইনার রাখে।

কোম্পানি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোগুলোর অন্যতম। সীতাকুণ্ডেই এ রকম তিনটি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো রয়েছে।

সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন বলেন, দুপুর পর্যন্ত মালিক পক্ষের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের যোগাযোগ হয়নি।

তিনি জানান, ২৫ একর জায়গা নিয়ে এ ডিপোটি তৈরি হয়েছে। এখানে ৪ হাজার ৩০০ গাড়ি বা কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা রয়েছে।

কোম্পানির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১১ বছর ধরে কোম্পানি রফতানি ও আমদানি পণ্যের কনটেইনারাইজড পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের (স্টাফিং/আনস্টাফিং) কাজ করছে।

আগুন লাগার সময় রফতানির উদ্দেশ্যে রাখা শতাধিক কন্টেইনার ছিল এ ডিপোতে।

অগ্নিকাণ্ডে হতাহত নিয়ে কী বলছে মালিকপক্ষ

শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুনে ৪০ জনের বেশি নিহত আর শতাধিক মানুষ হতাহত হওয়ার পর দমকল বিভাগ অভিযোগ করেছে, কোম্পানির লোকজনের কাছ থেকে ঠিকমতো তথ্য পাওয়া যায়নি। নিহতদের মধ্যে সাতজন রয়েছে দমকল বিভাগের কর্মী।

মূলত দ্বিতীয় দফার বিস্ফোরণে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেই সময়ে দমকল বিভাগের কাছে কোন তথ্য ছিল না যে, কন্টেইনারগুলোতে কী ধরনের জিনিসপত্র রয়েছে।

বাংলাদেশের দমকল বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, আগুন লাগার পরে তারা কন্টেইনার ডিপোর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাননি। সেটা পেলে এতো বেশি হতাহত হতো না।

তিনি বলেন, আমাদের বাহিনীর প্রথম যে সদস্যরা গিয়েছিলেন, সেখানে যে কেমিক্যাল ছিল, এ আইডিয়া তারা পাননি। তাই শুরুতেই তারা যখন অগ্নি নির্বাপণ করতে গিয়েছিলেন, তখন ঐ বিস্ফোরণ হওয়ার কারণে তাদের বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হন।

তিনি আরো বলেন, আমরা ইনিশিয়ালি যদি জানতে পারতাম যে, এখানে কেমিক্যাল বা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ছিল, তাহলে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারতাম। আমাদের কেমিক্যাল যে সরঞ্জামাদি রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমাদের এক্সপার্ট সেখানে যেতে পারতো। কিন্তু সেখানে মালিকপক্ষের বা দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না বা খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। এই তথ্যগুলো ইনিশিয়ালি আমরা পাইনি। যার কারণে ইনিশিয়ালি কার্যক্রম করতে আমাদের বেগ পেতে হয় এবং এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

তবে বিএম কনটেইনার ডিপোর মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আক্তার খান বলেন, আগুন লাগার পরেই আমাদের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী হতাহত হয়েছে। অনেকে এখনো নিখোঁজ আছে। তাই তখন তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। কিন্তু খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। এখন সব রকমের সহায়তা করছি।

এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের একজন মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের আমি উপযুক্ত সম্মানি করবো, যারা আহত হয়েছে, তাদের পুনর্বাসন করবো, যাদের হাসপাতালে আছে, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

কিন্তু সেখানে এ ধরনের রাসায়নিক রাখতে হলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কিনা জানতে চাওয়া হলে মুজিবুর রহমান বলছেন, এগুলো কোনোদিন আগুন জ্বলে না, এগুলো হান্ড্রেড পার্সেন্ট এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড। আমরা আগেও এক্সপোর্ট করেছি। এগুলো ফাক্টরিতে বসেই কন্টেইনারে সিল করেছে। শিপ যখন (জাহাজ) আসতে দেরি করেছে। ফলে এগুলো আট দশদিন বসে থেকে ওভার হিট হয়ে গেছে।

মালিকদের সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

বিএম কন্টেইনার ডিপো লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসাবে রয়েছেন ডাচ নাগরিক বার্ট প্রঙ্ক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে রয়েছেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

তাদের এ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আবাসিক কোম্পানি সিটি হোম প্রোপ্রার্টিজ লিমিটেড, একাধিক গার্মেন্টস কারখানা, জ্বালানি প্রতিষ্ঠান, শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটি এবং চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকা রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে চেয়ারম্যান বার্ট প্রঙ্ক সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তিনি একজন ডাচ নাগরিক এবং নেদারল্যান্ডসের প্রখ্যাত ব্যবসায়ী। তিনি বাংলাদেশের একাধিক ব্যবসা খাতে বিনিয়োগ করেছেন এবং চট্টগ্রাম ডেনিম মিল লিমিটেড, বিএম কনটেইনার ডিপোর মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন।

মো. মোস্তাফিজুর রহমান সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি বাংলাদেশের একজন বহুমুখী এবং উদীয়মান উদ্যোক্তা, যিনি বৈশ্বিক বাণিজ্যের সূক্ষ্মতা সম্পর্কে ধারণা রাখেন। বিশ্বজুড়ে শিল্প পরিচালনায় তার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

একাধিক কোম্পানির বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ও মুজিবুর রহমান-এই দুই ভাই ছাড়াও মো. শফিকুর রহমান নামে তাদের আরেক ভাই রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *