শ্রীবরদীর ডেউপা নদী থেকে বালু লুটপাটের মহোৎসব, হুমকির মুখে পরিবেশের ভারসাম্য

দেশজুড়ে

জুলাই ১৬, ২০২২ ৮:৫৯ অপরাহ্ণ

মুরাদ শাহ জাবাল, ঝিনাইগাতী (শেরপুর)

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কর্নঝোড়া—ডেউপা নদী থেকে বালু লুটপাটের মহোৎসব চলছে। বালু দস্যুদের কালো থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে নদী ও নদীর দুই পাড়ের রাস্তাঘাট। অপরদিকে প্রতিবছর সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় থেকে।

জানা গেছে, স্থানীয় বালুদস্যুরা নদীর বিভিন্ন স্থানে শ্যালোইঞ্জিন চালিত ড্রেজারমেশিন বসিয়ে বালু লুটপাট করে আসছে। দীর্ঘ প্রায় একযুগ ধরে এ নদী থেকে চলছে অবৈধভাবে বালু লুটপাটের মহোৎসব।

মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানও পরিচালনা করা হয়। কিন্ত অভিযান পরিচালনার পূর্বেই অভিযানের খবর পেয়ে যায় বালু দস্যুরা। ফলে অভিযানিক দল ঘটনাস্থলে পৌছার পূর্বেই বালু উত্তোলন যন্ত্র সরিয়ে ফেলা হয়। কিভাবে অভিযানের খবর বালুদস্যুদের কাছে পৌছায় এ নিয়ে এলাকায় রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বালুদস্যুরা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা মূল্যের বালু লুটপাট করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছেন। স্থানীয়রা জানান, সালমান খান, শফিকুল ইসলাম, মাসুদ মিয়া, ইব্রাহিম, বিপ্লব, ইয়াছিন, আহমদ আলী বিডিআর, বাবুল মিয়ার নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের সঙ্ঘবদ্ধ একটি দল এসব বালু উত্তোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বকশিগঞ্জ সদরের বাসিন্দা বালু ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি মাহিন্দ্র বালু তাদের কিনতে হয় তিন হাজার টাকায়। তবে সালমান খানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন অতীতে তিনি বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি বালু ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। গত এক যুগ ধরে বালু লুটপাট করে অনেকেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে বলে জানান ওই গ্রামের ইউপি সদস্য আহসান আলী উস্তাদ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বালু দস্যুরা ডেউপা নদীর, কর্নঝোড়া, মেঁঘাদল হাঁড়িয়াকোণা বাবেলাকোনা এলাকায় ১৫/২০টি শ্যালোইঞ্জিন চালিত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে।

শ্রীবরদী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা ও স্থানীয়রা জানান, এ নদী থেকে দিন—রাত চলছে অবাধে বালু লুটপাট। এ নদীর দু’পাশে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে রয়েছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। এ নদী থেকে বালু উত্তোলন ও বালু পরিবহন যন্ত্রের শব্দে তারা অতিষ্ঠ। বালু উত্তোলন যন্ত্রের শব্দে তাদের লোকজনের চোখে রাতের ঘুম হারাম হয়ে পড়ে।

মাহেন্দ্রযোগে অবাধে বালু পরিবহনের ফলে নদীর দু’পাশে রাস্তা—ঘাট ভেঙ্গে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় থেকে। অপরদিকে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে।

বালু দস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। আবার কেউ প্রতিবাদ করলে তার উপর নেমে আসে প্রভাবশালী বালু দস্যুদের কালোথাবা। এ নদীর পাড় ঘেঁষে রয়েছে কর্নঝোড়া বিজিবি ক্যাম্প ও বন বিভাগের ফরেস্ট অফিস। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তারা নীরব ভূমিকা পালন করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিজিবির ৩৯ ব্যাটালিয়নের নওকুচি সীমান্ত ফাঁড়ির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার উমর ফারুক বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি, আমার কাছে এবিষয়ে কোন তথ্য জানা নেই। তিনি বলেন, অবৈধভাবে বালু লুটপাট বন্ধের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। মাঝে মধ্যে বিজিবির পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার জানান, ঈদের আগে ডেউপা নদীতে তিনি অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু কোনো লোক বা বালু উত্তোলনের কোনো সরঞ্জাম (ড্রেজার মেশিন) পাননি। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, অপরাধীদের দ্রুত সনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *