শেষ হওয়ার পরেও যে পাঁচ যুদ্ধ চলেছে বহুকাল

ফিচার

আগস্ট ৭, ২০২২ ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

যুদ্ধের ইতিহাসে এমন অনেক যুদ্ধ আছে যেগুলো রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষ হয়েছে কিন্তু শান্তিচুক্তি হয়নি। এমন পাঁচটি যুদ্ধের কথা জেনে নিন।

রাশিয়া-জাপান

দীপপুঞ্জের মালিকানা নিয়ে এই দুই দেশের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মসমর্পণের মাত্র কয়েকদিন আগে, ১৯৪৫ সালের অগাস্টে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সোভিয়েত সরকার। মূলত কুরিল দ্বীপপুঞ্জকে সংযুক্ত করতেই এই যুদ্ধ। ঐ দ্বীপগুলো জাপান আর পূর্ব রাশিয়ার কামচাৎকার মাঝে অবস্থিত। এই দ্বীপগুলোই এখনো দুই দেশের বিরোধের কারণ। রাশিয়ার দাবি, যুদ্ধ শেষের চুক্তি অনুযায়ী, এগুলোর মালিক রাশিয়া।  কিন্তু জাপান দ্বীপগুলোর ওপর থেকে অধিকার ছাড়েনি। অন্যদিকে মিত্র বাহিনী আর জাপানের মধ্যে ১৯৫১ সালে যে শান্তিচুক্তি হলেও সেখানে স্বাক্ষর করেনি সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৫৬ সালে একটি যৌথ ঘোষণায় দুই দেশ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয়। কিন্তু দ্বীপ নিয়ে মালিকানার বিরোধ এখনো আনুষ্ঠানিক শান্তি চুক্তিতে একটি বাধা হিসাবেই রয়ে গেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রবাহিনী আর জার্মানি

১৯৪৫ সালের মে মাসে মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে জার্মানি। কিন্তু সে সময় একাধিক বিশ্ব শক্তির মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ার কারণে এককভাবে কোনো জার্মান, সাবেক রাইখল্যাণ্ডের প্রতিনিধিত্ব করেনি। স্নায়ু যুদ্ধের কারণে ১৯৯০ সালে দুই জার্মানির পুনর্মিলনের আগ পর্যন্ত আসলে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের অবসান হয়নি। এ কারণেই পশ্চিম জার্মানিতে ঘাঁটি গেড়ে রাখার আইনগত অধিকার পেয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।

৩৩৫ বছর আগের যুদ্ধের অবসানে ডাচ রাষ্ট্রদূত শান্তিচুক্তি করেন

৩৩৫ বছর আগের যুদ্ধের অবসানে ডাচ রাষ্ট্রদূত শান্তিচুক্তি করেন

মন্টিনেগ্রো আর জাপান

১৯০৪-০৫ সালের রাশিয়া জাপান যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন দিয়েছিল মন্টিনেগ্রো। ঐ যুদ্ধে বিজয়ী হয় জাপান। সেই যুদ্ধের পর যখন রাশিয়া আর জাপান শান্তিতে সম্মত হয়, তখন মন্টিনেগ্রোর কথা ভুলে যাওয়া হয়েছিল। এরপর জাপানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে মন্টিনেগ্রোর প্রায় একশো বছর লেগেছে। কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কিংডম অব সার্বিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয় মন্টিনেগ্রো। ২০০৬ সালে সার্বিয়া থেকে বেরিয়ে আবার স্বাধীন হয়েছে দেশটি। এরপরেই তারা জাপানের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি করে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।

নেদারল্যান্ডস এবং আইলস অফ সিসিলি (যুক্তরাজ্য)

অনেক দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে যুদ্ধ চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো কোনো দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলেছে কয়েক শতাব্দী ধরে। এমন যুদ্ধের কথা অনেকে ভুলেও যায়। যেমন এই যুদ্ধের সূচনা অনেক শতাব্দী আগে, ইংল্যাণ্ডের গৃহযুদ্ধের অবসানের সময়, ১৬৫১ সালে। তখন পার্লামেন্টারিয়ানদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল ডাচ নৌবাহিনী। ফলে রয়্যাল গোলন্দাজ বাহিনীর হামলায় সিসিলিতে ডাচ নৌ বাহিনীর যে ক্ষতি হয়, তারা তার ক্ষতিপূরণ দাবি করে। কিন্তু তাদের কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। ফলে ডাচরা সিসিলি দ্বীপে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু পার্লামেন্টারিয়ানরা তাদের হটিয়ে দ্বীপটি দখল করে নেয়।  এরপর কোন শান্তি চুক্তি হয়নি। সেটি সবাই ভুলেও যায়। এর ৩৩৫ বছর পরে, ১৯৮৬ সালে এই ঘটনাটি বের করেন ইতিহাসবিদ রয় ডানকান। এরপর ডাচ রাষ্ট্রদূত দ্বীপটি সফর করে একটি শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

১৪৬ খৃষ্টপূর্বে রোমানরা প্রাচীন কার্থেজ দখল করে ধ্বংস করে দিয়েছিল

১৪৬ খৃষ্টপূর্বে রোমানরা প্রাচীন কার্থেজ দখল করে ধ্বংস করে দিয়েছিল

প্রাচীন রোম আর কার্থেজ

১৪৬ খৃষ্টপূর্বে রোমানরা প্রাচীন কার্থেজ দখল করে ধ্বংস করে দিয়েছিল, প্রাচীন রোম আর কার্থেজের মধ্যে কোন শান্তি চুক্তি হয়নি। এর প্রায় ২১০০ বছর পরে, ১৯৮৫ সালে আধুনিক রোম আর বর্তমানের কার্থেজ, যার এখনকার নাম টিউনিস, দুই শহরের পৌর মেয়ররা একটি শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আবার সম্প্রীতি গড়েছেন।

সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *