‘শেখ হাসিনা সড়ক’ পাল্টে যাবে দৃশ্যপট

‘শেখ হাসিনা সড়ক’ পাল্টে যাবে দৃশ্যপট

দেশজুড়ে স্লাইড

নভেম্বর ২১, ২০২২ ১২:০৩ অপরাহ্ণ

‌‌হাওরের বুক চিড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলার মধ্যে সরাসরি সংযোগ ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ এ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা সড়কটি চালু হলে বদলে যাবে বিজয়নগরবাসীর দৃশ্যপট। কম সময়ের মধ্যে বিজয়নগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে আসা যাওয়াসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আবাসনসহ সকল ক্ষেত্রে বিজয়নগরবাসীর বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। ভাগ্য বদল হয়ে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। নির্মাণাধীন ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ টি বিজয়নগরবাসীর কাছে পদ্মা সেতুর মতো স্বপ্নের সড়ক।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের টানমনিপাড়া এলাকায় সড়কের মাটি ভরাট কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে সড়কটির নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের এমপি ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।

ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতার কারণে নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হলেও বর্তমানে এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দি থেকে বিজয়নগর উপজেলার সিমনা পর্যন্ত সড়কটির নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা। এদিকে সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই এলাকার জমির দাম  বেড়ে গেছে বহুগুণ।

 ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলার মধ্যে সরাসরি সংযোগ ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ এ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলার মধ্যে সরাসরি সংযোগ ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ এ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।

এক সময় সেখানে এককানি জমি (৩০ শতাংশ) বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। বর্তমানে সেসব জমি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায়। বিজয়নগরের চরাঞ্চলে বেড়ে গেছে জমির দাম। সেখানে উপ-শহর গড়ে উঠবে বলে আশা করছেন উপজেলাবাসী।

জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের সঙ্গে বিজয়নগর উপজেলার সরাসরি কোনো সংযোগ সড়ক নেই। বিজয়নগরবাসীকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জেলার আখাউড়া উপজেলা অথবা সরাইল উপজেলা হয়ে জেলা সদরে আসতে হয়। এতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। শেখ হাসিনা সড়ক চালু হলে বিজয়নগর উপজেলাবাসী প্রায় ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে আসা-যাওয়া করতে পারবে। সড়কটি চালু হলে বিজয়নগরবাসীর সময় ও অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হবে।

উপজেলার চর-ইসলামপুর গ্রামের জামাল মিয়া বলেন, বিজয়নগর উপজেলার ১০ ইউনিয়নবাসীর প্রাণের দাবি ‘শেখ হাসিনা সড়ক’। এটা আমাদের বহু বছরের লালিত স্বপ্ন। আমাদের স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলার মধ্যে সরাসরি সংযোগ ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ এ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলার মধ্যে সরাসরি সংযোগ ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ এ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।

তিনি বলেন, বিজয়নগরের সঙ্গে জেলা সদরে যাওয়ার কোনো সড়ক না থাকায় আমাদেরকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরে আখাউড়া উপজেলার ওপর দিয়ে অথবা প্রায় ২৫ কিলোমিটার ঘুরে সরাইল উপজেলার উপর দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে আসা যাওয়া করতে হয়। সড়কটি নির্মিত হলে বিজয়নগরবাসীর সময় ও অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হবে।

উপজেলার পত্তন ইউপির লক্ষীমুড়া গ্রামের কৃষক মনা মিয়া জানান, তিনি শাকসবজি বিক্রি করে তার সংসার চালান। বিজয়নগর থেকে নৌকায় করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে শাকসবজি নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। সড়কটি চালু হলে মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যেই তিনি শাকসবজি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসতে পারবেন। এতে করে তিনি পণ্যের ন্যায্য দাম যেমন পাবেন, তেমনি ঘুচবে দীর্ঘদিনের কষ্টও।

উপজেলার পত্তন ইউপির মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা ফাতেমে বেগম ও খুদেজা আক্তার বলেন, গ্রামের আশেপাশে কোনো কলেজ না থাকায় আমাদের মেয়েদের শিক্ষা স্কুল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। সড়কটি নির্মিত হলে আমাদের এলাকার মেয়েরাও শহরে গিয়ে কলেজে লেখাপড়া করতে পারবে।

উপজেলার চম্পকনগর ইউপির চম্পকনগর গ্রামের কৃষক রহিছ মিয়া বলেন, তিনি প্রতি বছর তার বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার লিচু বিক্রি করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় লিচুগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হয়। শেখ হাসিনা সড়কটি চালু হলে শহরে নিয়ে লিচু বিক্রি করতে পারবো। এতে আমার বেশি লাভ হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলার মধ্যে সরাসরি সংযোগ ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ এ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলার মধ্যে সরাসরি সংযোগ ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ এ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বর্ষাকালে সড়কটি যাতে ভেঙে না যায় সে জন্য সড়কের পাশে বসানো হয়েছে সিসি ব্লক। এরই মধ্যেই সড়কের তিতাস নদীর ওপরসহ নির্মিত তিনটি সেতুর সবকটিরই নির্মাণ কাজ শেষ। সেতুর এপ্রোচ সড়কের কাজ শেষ হলে শুরু হবে সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ। এরপরই খুলে দেয়া হবে স্বপ্নের শেখ হাসিনা সড়ক। সড়কটি খুলে দিলে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের সঙ্গে বিজয়নগর উপজেলার সরাসরি যোগাযোগই স্থাপন হবে না, সড়কটি ভূমিকা রাখবে স্থানীয় কৃষি, শিক্ষা ও অর্থনীতিতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, প্রতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার ফল (মাল্টা, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা, লটকনসহ বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপাদিত হয়। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কৃষকরা সঠিক সময়ে এসব ফল বাজারজাত করতে পারেননা। শেখ হাসিনা সড়কটি চালু হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফল শহরে নিয়ে আরো ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নান বলেন, হাওরের বুক চিড়ে নির্মাণ হওয়া ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ এই অঞ্চলে সকল ক্ষেত্রেই বিপ্লব ঘটাবে। সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। সড়কের সেতুগুলোর অপ্রোচ সড়কের নির্মাণ কাজ শেষে শুরু হবে সড়কের কার্পেটিং কাজ। এরপরই জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে স্বপ্নের সড়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *