শিরিনকে ইচ্ছাকৃত গুলি, বলছে ফিলিস্তিনি তদন্ত

আন্তর্জাতিক স্লাইড

মে ২৭, ২০২২ ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়। ইচ্ছাকৃতভাবেই তার ওপর গুলি চালায় ইসরাইলি বাহিনী। ফিলিস্তিনের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এখন থেকে দুই সপ্তাহ আগে ঘটানো ওই হত্যাকাণ্ডের পর প্রাথমিক অনুসন্ধানেও একই তথ্য উঠে এসেছিল।

শিরিন হত্যার প্রায় দুই সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার (২৬ মে) একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। এদিন অধিকৃত পশ্চিমতীরের রামাল্লায় এক সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল আকরাম আল খাতিব বলেন, আমাদের তদন্তে এটা একদম পরিষ্কার যে ওইদিন শিরিন আবু আকলেহকে তার মাথা লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি ছোড়ে ইসরাইলি বাহিনীর এক সেনা।

গত ১১ মে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে এক ইসরাইলি সেনার গুলিতে নিহত হন আল-জাজিরার নারী সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ। ওইদিন জেনিনে ইসরাইলি বাহিনীর একটি সামরিক অভিযানের সময় সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন তিনি।

এ হত্যাকাণ্ডের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তোপের মুখে পড়ে ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংস্থা নিন্দার পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়।

চাপের মুখে পড়ে ফিলিস্তিনের সঙ্গে যৌথভাবে শিরিন হত্যাকাণ্ড তদন্তের প্রস্তাব দেয় ইসরাইল। তবে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) এবং এককভাবে তদন্ত শুরু করে।

বৃহস্পতিবার বহুল কাঙ্ক্ষিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল আল খাতিব বলেন, শিরিন আবু আকলেহের ওপর যে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল, তা ইসরাইলি বাহিনীর ট্রিগার থেকেই আসে এবং তা শিরিনকে হত্যার উদ্দেশ্যেই করা হয়।

চলতি সপ্তাহে ওই হত্যাকাণ্ডের নতুন একটি ভিডিও সামনে আসে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, হত্যার আগে ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিল। কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। যদিও তার বিপরীত চিত্র তুলে ধরেছে ইসরাইল। দখলদার দেশটির কর্মকর্তাদের দাবি, সেদিন ওই এলাকায় সংঘাত চলছিল।

তবে ওই সময় ধারণ করা নতুন একটি ভিডিও ক্লিপ থেকে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে) বিবিসির সাংবাদিক টম বাতেম্যান ভিডিও ক্লিপটি প্রকাশ করেন। ভিডিওটি শিরিন আবু আকলেহর হত্যার সময়কার বলে নিশ্চিত করে আল-জাজিরা।

ভিডিওতে দেখা যায়, শুরুর দিকে সংঘাত বা লড়াইয়ের লেশমাত্র নেই। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরাও এমনটাই বর্ণনা করেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, সাংবাদিক শিরিনকে গুলি করার সময় ইসরাইলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

ভিডিওর শুরুর দিকেই একাধিক ব্যক্তির কথা শোনা যায়। তারা অনেকটা হেসে-হেসেই কথা বলছিলেন। এ সময় ভিডিওতে সাংবাদিক শিরিন ও তার সহকর্মীদের দেখা যায়। তাদের পরনে ‘প্রেস’ লেখা নীল রঙের ভেস্ট ছিল।

ঘটনাস্থলের যে দিকটায় ইসরাইলি সেনারা ছিল, সাংবাদিক শিরিন ও তার সহকর্মীদের আস্তে আস্তে সেদিকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। এর কয়েক সেকেন্ড পরই গুলির শব্দ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও ঘটনাস্থলে থাকা অন্য সাংবাদিকরা জানান, ইসরাইলের এক সেনা মাথায় গুলি করলে শিরিন প্রাণ হারান।

গুলি শুরু হলে লোকগুলো পালাতে শুরু করে। এ সময় একজনকে উচ্চৈঃস্বরে বেশ কয়েকবার সাংবাদিক শিরিনের নাম ধরে ডাকতে শোনা যায়। একটু পরই রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় শিরিনকে।

প্রথমদিকে শিরিন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করা হবে বললেও কয়েকদিন পরই ইসরাইল জানায়, এ হত্যাকাণ্ড তদন্ত করার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) ইসরাইলের সংবাদপত্র হারেৎজ এক প্রতিবেদনে জানায়, ইসরাইলের সামরিক পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মনে করছে, ইসরাইলের সেনাদের সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে কোনো একটি তদন্ত হলে ইসরাইলি সমাজের ভেতরে তা বিভাজন সৃষ্টি করবে।

হত্যাকাণ্ড তদন্ত নিয়ে ইসরাইলের এ বক্তব্য শোনার পর সাংবাদিক শিরিনের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরাইলি সেনাবাহিনী যে শিরিন হত্যাকাণ্ড তদন্ত করবে না- এমন খবরে তারা মোটেই অবাক হননি।

পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলের দিক থেকে এমন খবর প্রত্যাশিতই ছিল। এ জন্যই আমরা চাইনি শিরিন হত্যাকাণ্ড তদন্তের অংশ হোক ইসরাইল। আমরা চাই, এর জন্য যারা দায়ী, তাদের জবাবদিহি ও বিচারের আওতায় আনা হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *