রুরি আমদানি ছাড়া মিলছে না ডলার

জরুরি আমদানি ছাড়া মিলছে না ডলার

অর্থনীতি স্লাইড

জানুয়ারি ২৪, ২০২৩ ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের জোগান কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। জরুরি পণ্য আমদানি ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার ছাড়ছে না। শুধু ভোগ্যপণ্য, শিশুখাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ডলারের জোগান দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে অন্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব উদ্যোগে ডলারের সংস্থান করে এলসি খুলতে হবে। এমনকি আগে নেওয়া স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার দেওয়া হচ্ছে না। এসব খাতে ডলারের চাহিদা ব্যাংকগুলোকেই মেটাতে হবে। এদিকে ব্যাংকগুলোর কাছে চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান না থাকায় আমদানির এলসি খোলা যাচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব পদক্ষেপ নিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে নতুন কৌশল নিয়েছে। তারা রপ্তানি ও রেমিট্যান্স দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটাতে চাচ্ছে। আগে এই আয়-ব্যয়ের মধ্যকার ঘাটতি ছিল ২৩০ কোটি ডলার। গত নভেম্বরে এ ঘাটতি ১০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। ডিসেম্বরে এ ঘাটতি আরও কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে রপ্তানি মার্চের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও ব্যয় সমান হবে। তখন রিজার্ভের ওপর চাপ আরও কমবে।

এ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি আরও কমাতে চাচ্ছে। তারা আমদানির যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে আগামী মার্চ পর্যন্ত নতুন এলসি খোলা গড়ে ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে নামিয়ে আনবে। নভেম্বরে নতুন এলসি খোলা ৪৬৩ কোটি ডলারে নামিয়ে আনতে পারলেও ডিসেম্বরে তা বেড়ে ৫০০ কোটি ডলারে উঠেছে। এখন রোজার ও জ্বালানি পণ্য আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে। বিশেষ করে চার মাস বন্ধ থাকার পর গ্যাস আমদানির এলসি খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভারত থেকে বিদ্যুৎও আমদানি করা হবে। এসব কারণে এলসি খোলা আবার বেড়ে যাবে। এলসি বাড়লে রিজার্ভেও চাপ বাড়বে।

বর্তমানে আমদানি কমাতে রোজানির্ভর ভোগ্যপণ্য, শিশুখাদ্য, ওষুধ, সার, জ্বালানি ও শিল্পের কাঁচামাল ছাড়া অন্য কোনো খাতে ডলারের জোগান দেওয়া হচ্ছে। এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার দিচ্ছে। এর বাইরে দিচ্ছে না। বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি করতে ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব উদ্যোগে ডলারের সংস্থান করতে হবে। বছরে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি হয়। শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি হয় ৯০০ থেকে হাজার কোটি ডলারের। এসব খাতে ডলার মিলছে না। রপ্তানি করে যে ডলার পাওয়া যাচ্ছে তার প্রায় পুরোটাই রপ্তানিকারকরা কাঁচামাল ও তাদের আনুষঙ্গিক পণ্য আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে। রেমিট্যান্সের যে ডলার পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে ব্যাংকগুলো বাণিজ্যিক পণ্য আমদানির এলসি খুলছে ও আগের ঋণ শোধ করছে। কিন্তু রেমিট্যান্স প্রবাহ চাহিদার তুলনায় বাড়ছে খুবই কম। যে জন্য ব্যাংকে ডলার সংকটও প্রকট। এ সংকট মেটাতে এখন ব্যাংকগুলো চড়া দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) বেঁধে দেওয়া দরও কার্যকর হচ্ছে না। বাফেদা রেমিট্যান্সে কেনার সর্বোচ্চ দর ১০৭ টাকা বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু কিছু দুর্বল ব্যাংক ১১২ থেকে ১১৪ টাকা করেও রেমিট্যান্স কিনছে। ফলে প্রবাসীরা বাড়তি দাম পেয়ে ছোট ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন বেশি। এতে সাম্প্রতিক সময়ে ছোট ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গেছে। অপেক্ষাকৃত বড় ব্যাংকগুলোর যাদের বিভিন্ন দেশে বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে তাদের রেমিট্যান্স কমে গেছে। বেশি দামে রেমিট্যান্স কেনায় তারা আমদানির জন্যও চড়া দামে ডলার বিক্রি করছে। সব মিলে ডলার বাজারে নতুন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, প্রতি মাসে রেমিট্যান্স আসছে ১৭০ কোটি ডলার। রপ্তানি আয় বাবদ আসছে ৫৩৬ কোটি ডলার। দুটো মিলে ডলার আসছে ৭০৬ কোটি ডলার। এর বাইরে বৈদেশিক অনুদান আসছে ৩৬ কোটি ডলার। বৈদেশিক বিনিয়োগ ১৫ কোটি ডলার। সব মিলে বৈদেশিক মুদ্রা মাসে আয় হচ্ছে ৭৫৭ কোটি ডলার। নভেম্বরে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৭০৪ কোটি ডলার। ডিসেম্বরে তা আরও বেড়েছে। এর বাইরে শেয়ারবাজার থেকে বিদেশে পুঁজি প্রত্যাহার হচ্ছে মাসে গড়ে ৪৩ লাখ ডলার। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ কোটি ডলার। এর বাইরে বিদেশ ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতেও ডলারের ব্যয় বাড়ছে। সব মিলে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।

এ ঘাটতি বৈদেশিক স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে এবং আগের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে এখন সমন্বয় করা হচ্ছে। কিন্তু নতুন ঋণ ও আগের ঋণ পরিশোধ স্থগিত করায় ডলারের ওপর আগামীতে চাপ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমে আসছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমদানি ব্যয় কমে যাবে। তখন বৈদেশিক মুদ্রার চাপও কমবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *