রক্ত দেয়ার আগে যা জানা জরুরি

স্বাস্থ্য

জুন ৭, ২০২২ ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ

একমাত্র রক্তদানের মাধ্যমেই আপনি চাইলে অন্য একটা মানুষের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখতে পারেন। তাই রক্তদানকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও নিঃস্বার্থ উপহার হিসেবে ধরা হয়। রক্তদানের পর প্রচণ্ড মানসিক প্রশান্তিও লাভ করা যায়। সুস্থ, সবল, নিরোগ একজন মানুষ প্রতি তিন মাস অন্তর রক্ত দিতে পারেন। যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

একটা সময় রক্ত পাওয়া নিয়ে অনেক বিপাকে পড়তে হতো। তবে বর্তমান সময়ে রক্ত পাওয়া অনেকটা সহজ করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সম্প্রতি সীতাকুন্ডের অগ্নিকান্ডে ছাত্রসহ সাধারণ মানুষদের রক্তদান আমাদের মুগ্ধ করেছে। কিন্তু তারপরও অনেকেই আছেন রক্ত দিতে ভয় পান। অনেকের আছে ভ্রান্ত ধারণাও। রক্ত দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না বরং রক্তদানের রয়েছে নানাবিধ উপকার।

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক জেমস হ্যারিসন রক্ত দিয়ে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নাম পর্যন্ত লিখেছেন। স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে নিজের রক্ত ও রক্তের উপাদান প্লাজমা দানের মাধ্যমে তিনি একাই বাঁচিয়েছিলেন ২০ লাখ শিশুর প্রাণ।

রক্ত দেয়া কেন প্রয়োজন?

দুর্ঘটনায় আহত, ক্যান্সার বা অন্য কোন জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্য, অস্ত্রোপচার কিংবা সন্তান প্রসব অথবা থ্যালাসেমিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে রক্তদান শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

সাধারণত রক্তের লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। অর্থাৎ আপনি রক্ত দিন বা না দিন ১২০ দিন পর লোহিত কণিকা আপনা আপনিই মরে যায়। সেখানে জায়গা করে নেয় নতুন লোহিত কণিকা। এছাড়া রক্তের অন্য উপাদানগুলোর আয়ুষ্কাল থাকে আরও কম। তাই নিয়মিত রক্ত দেয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

কারা রক্ত দিতে পারবেন?

প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ নারী-পুরুষ যে কেউ প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর রক্ত দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে পুরুষের ওজন থাকতে হবে অন্তত ৪৮ কেজি এবং নারীর ৪৫ কেজি। এবং রক্তদাতার তাপমাত্রা ৯৯.৫ ফারেনহাইটের নিচে এবং নাড়ির গতি ৭০ থেকে ৯০ এর মধ্যে। সাথে রক্তচাপও স্বাভাবিক থাকতে হবে।

পুরুষদের ক্ষেত্রে রক্তের হিমোগ্লোবিন প্রতি ডেসিলিটারে ১৫ গ্রাম এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১৪ গ্রাম হওয়া দরকার। রক্তদাতাকে অবশ্যই ভাইরাসজনিত রোগ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং চর্মরোগ মুক্ত থাকতে হবে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরে ৪ থেকে ৬ লিটার পরিমাণ রক্ত থাকে। প্রতিবার ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত দেয়া হয়। এ কারণে রক্ত দিলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই থাকে না।

রক্ত দেয়ার পর কী হয়?

রক্ত দেয়ার পর কারো কারো মাথা ঘোরাতে পারে। এটা স্বাভাবিক। তাই রক্ত দিয়েই না উঠে কিছু সময় বিশ্রাম নেয়া উচিত। এবং রক্ত দেয়ার সময় শরীর থেকে রক্তের পাশাপাশি ২৫০-৩০০ মিলিগ্রাম আয়রন কমে যায় তাই তার ক্ষয়পূরণে আয়রন ও প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

কে কাকে রক্ত দিতে পারবে?

রক্তের গ্রুপ মোট ৮ ধরণের: এবি পজিটিভ, এবি নেগেটিভ, এ পজিটিভ, এ নেগেটিভ, বি পজিটিভ, বি নেগেটিভ, এবং ও পজিটিভ, ও নেগেটিভ।

জেনে নিন কে কাকে রক্ত দিতে পারবে?

রক্ত দেয়ার উপকারিতা

দেশের বিভিন্ন ব্লাডব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে নিয়মিত রক্ত দেয়ার কিছু উপকার সম্পর্কে জানা যায়। সেগুলো হলো:

১. রক্তদানের মাধ্যমে একজন মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব।

২. নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

৩. বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরে নতুন লোহিত কণিকা তৈরির হার বেড়ে যায়। এতে অস্থিমজ্জা সক্রিয় থাকে। দ্রুত রক্তস্বল্পতা পূরণ হয়।

৪. রক্তে কোলেস্টরেলের মাত্রা কমে যায়, এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

৫. রক্ত দিলে যে ক্যালোরি খরচ হয়, তা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৬. শরীরে হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, এইচআইভি বা এইডসের মতো বড় কোন রোগ আছে কি না, সেটি বিনা খরচে জানা যায়।

৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

৮. রক্তদাতার যদি নিজের কখনো রক্তের প্রয়োজন হয় তাহলে ব্লাড ব্যাংকগুলো তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে রক্তের ব্যবস্থা করে দেয়।

সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *