যান চলাচলে খুলল স্বপ্নের পদ্মা সেতু

জাতীয় স্লাইড

জুন ২৬, ২০২২ ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ

স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে যাত্রীবাহী বাসসহ গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। রোববার (২৬ জুন) ভোর ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই প্রান্তের ১৪টি টোল গেট চালু হয়ে যায়। সব কয়েকটি গেটে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নির্ধারিত টোল দিয়ে থ্রি-হুইলার ছাড়া যে কোনো গাড়ি পার হতে পারছে পদ্মা সেতু দিয়ে। উদ্বোধনের ১৮ ঘণ্টা পর বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু।

গতকাল শনিবার (২৫ জুন) বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, রোববার সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

সরকারি নির্দেশনা অনুসারে, নির্ধারিত টোল দিয়ে সেতু পার হতে হবে যানবাহনগুলোকে। এ সেতুর মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে খুব সহজেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত করা যাবে।

এর আগে গত ১৭ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সেতু বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ওই প্রজ্ঞাপনে জানায়, পদ্মা সেতুতে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না। এ সেতুর ওপর যে কোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বা হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ।

এ ছাড়া তিন চাকার যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ইত্যাদি), পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়িযোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না। গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫ দশমিক ৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না। সেতুর ওপরে কোনো ধরনের ময়লাও ফেলা যাবে না।

শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় দুপুর ১২টায় এক বণার্ঢ্য অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিকসহ হাজার হাজার বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী টোলপ্লাজায় প্রথম টোল দেন এবং এরপর তিনি সেতুর মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আকাশ থেকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রদর্শিত সেতুর ভার্চুয়াল রংধনু আকারের এয়ারিয়াল শো উপভোগ করেন।

সরকার নির্ধারিত টোল হার অনুযায়ী: পদ্মা সেতু পারাপারে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার ও জিপে ৭৫০ টাকা, পিকআপে এক হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে এক হাজার ৩০০ টাকা টোল পরিশোধ করতে হবে।

বাসের ক্ষেত্রে ছোট বাস (৩১ আসন) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার টাকা, বড় বাস (থ্রি-এক্সেল) প্রতি দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।

এ ছাড়া ছোট ট্রাককে (পাঁচ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (পাঁচ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ আট টন পর্যন্ত) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ ১১ টন) দুই হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাকে (থ্রি-এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (ফোর-এক্সেল পর্যন্ত) ছয় হাজার টাকা। আর ট্রেইলার (ফোর-এক্সেলের অধিক) ছয় হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা যুক্ত হবে।

রাষ্ট্র মালিকানাধীন সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) আজ রোববার থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৩টি রুটে বাস পরিচালনা করবে।

বিআরটিসির চেয়ারম্যান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ৬৫ বাস পরিচালনা করব। এর অধিকাংশই এসি বাস। বর্তমানে শুধু খুলনা ও যশোর রুটে বিআরটিসি বাস চলে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি পরিবহন কোম্পানির এসি ও নন এসি বাসও রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করবে।

২০০১ সালের ৪ জুলাই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত এ সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।

পদ্মা সেতু দেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেলসেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে।

দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরটিতে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসানো হয়। ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছে স্বপ্নের এ সেতু।

খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। পদ্মা সেতু খুলে দেয়ায় সম্ভাবনা আর প্রত্যাশার নতুন দিক উন্মোচিত হলো।

বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। এক শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্বপ্নের কাঠামো নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *