মৈমনসিংহ গীতিকা’র তৃতীয় সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন

শিল্প ও সংস্কৃতি স্পেশাল স্লাইড

এপ্রিল ২, ২০২২ ৭:৪৬ অপরাহ্ণ

এস এইচ শাকিল

বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম কর্তৃক প্রকাশিত ড. দীনেশচন্দ্র সেন সংকলিত দেশ—বিদেশের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র তৃতীয় সংস্করণের প্রকাশনা উৎসব ১লা এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার, বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান এমপি।

আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, সাবেক মুখ্য সচিব ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি ঢাকা’র সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ এবং আচার্য্য ড. দীনেশচন্দ্র সেন গবেষণা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক দেবকন্যা সেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন সাবেক সিনিয়র সচিব ও এসডিএফ’র চেয়ারম্যান মোঃ আবদুস সামাদ এবং মহাসচিবের বক্তব্য উপস্থাপন করেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট লেখক, সাহিত্যিক রাশেদুল হাসান শেলী।

মৈমনসিংহ গীতিকা’র তৃতীয় সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (বাণিজ্য নীতি) ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম (জিএমসিএফ) এর অর্থ তহবিলের আহ্বায়ক শাহ মোঃ আবু রায়হান আলবেরুনী, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আজহারুল ইসলাম খান, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ফসিউল্লাহ, পল্লী সঞ্চয়ী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার আতাউর রহমান, সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি মোঃ মজিবুর রহমান, সাবেক রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ তাফাজ্জল হোসেন ও সোনালী ব্যাংকের পরিচালক ড. দৌলতুন্নাহার খানম, সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর পত্রিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির), বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ড. রিয়াজুল হাসান সম্রাট, জিএমসিসির শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক অধ্যাপিকা রায়হানা তসলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সচিব সাইফুদ্দিন করিম আহমেদ, শামীমা নাসরিন রুমী খানসহ প্রমুখ ব্যক্তি।

প্রধান অতিথির ভাষণে এম এ মান্নান এমপি বলেন, মৈমনসিংহ গীতিকা, দীনেশচন্দ্র সেনকে নিয়ে আমার গর্ব অপরিসীম। কখনো যখন আমি এসব বিষয়ের উল্লেখ পাই আমি আনন্দবোধ করি, পুলকিত বোধ করি যে এ তো আমাদের পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতি; এটাই তো আমাদের শিকড়।

সভাপতির ভাষণে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আপনারা যদি মৈমনসিংহ গীতিকা পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন বাঙালি সংস্কৃতির যে শিকড় সেটা কিন্তু তিনি (ড. দীনেশচন্দ্র সেন) সংকলন করেছেন। আমি যথার্থভাবেই মনে করি এই সংস্কৃতিকে কেবল রক্ষা করাই নয়; এই সংস্কৃতিকে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই নৈতিক দায়িত্ব আমাদেরকে পালন করতেই হবে। মৈমনসিংহ গীতিকা যেমন তেইশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তেমনি আমরা কিন্তু হাসন রাজা, শাহ আব্দুল করিম, রাজা রামমোহন রায়ের কথা ভুলে গিয়ে বাংলাদেশের শিকড়ের সংস্কৃতিটাকে খুঁজে পাবো না। অতএব, আমাদেরকে তুলে ধরতে হবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শিকড়ের সংস্কৃতি। যদি কেউ মহুয়া (মৈমনসিংহ গীতিকা’র একটি পালা) না দেখে থাকেন জীবনের একটি অধ্যায় অপূর্ণ রয়ে গেছে। একবার মহুয়া দেখার পরে সারাজীবন আপনার মন থেকে এর দাগ কাটবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা যাতে শিকড়ের সন্ধান করতে পারি সেই চেষ্টা করবো।

স্বাগত ভাষণে মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আজ একটি ভালো কাজে আমরা সমবেত হয়েছি। দীনেশচন্দ্র সেন সংকলিত ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ আমাদের অত্যন্ত গর্বের, অত্যন্ত প্রাণের একটি বিষয়। এটিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যে কারণে আমি এই ফোরামের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, মৈমনসিংহ গীতিকা শুধুমাত্র আমাদের ময়মনসিংহের সম্পদ নয়, এটি আমাদের এই বাংলাকে বিশ্বসভায় পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে স্বীকৃত।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে পরিবেশিত হয় মৈমনসিংহ গীতিকাভিত্তিক গীতিনৃত্য নাট্য ‘মহুয়া’।

উল্লেখ্য মৈমনসিংহ গীতিকা একটি সংকলন গ্রন্থ যাতে ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রচলিত দশটি পালাগান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। প্রথম খন্ডের দশটি পালার রচয়িতা ভিন্ন ভিন্ন হলেও সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে। এই গানগুলো প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছে। তবে ১৯২৩—৩২ সালে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন এই গানগুলো অন্যান্যদের সহায়তায় সংগ্রহ করেন এবং স্বীয় সম্পাদনায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রকাশ করেন। তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোনা মহকুমার আইথর নামক স্থানের অধিবাসী চন্দ্রকুমার দে এসব গাথা সংগ্রহ করেছিলেন। বর্তমানে এই গীতিকাটি বিশ্বের তেইশটি ভাষায় মুদ্রিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *