মুরাদনগরের লাজৈর গ্ৰামে সন্ত্রাসী হামলা, নগদ ৬ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা ছিনতাই

দেশজুড়ে

নভেম্বর ১৪, ২০২২ ১০:২৯ অপরাহ্ণ

মতিউর রহমান সরকার দুখু 

গতকাল রোববার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার লাজৈর গ্ৰামের সোহেল মুন্সীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা ও নগদ টাকা লুটপাটের অভিযোগ করেন একই গ্ৰামের আবুল বাসার। সোহেল মুন্সী দলবল নিয়ে গাজীর চা দোকানের সামনে একই গ্ৰামের আবুল বাসার(৬০) ও তাঁর(আবুল বাসারের) ছেলে মনির হোসেনকে(৩২) হামলা করেন বলে অভিযোগ করেন আবুল বাসার। এ সময় সন্ত্রাসী কায়দায় মারধর করে নগদ ৬ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা ছিনতাই করেন বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে হামলার শিকার আবুল বাসার মুরাদনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

লিখিত অভিযোগে আবুল বাসার জানান, হামলাকারী সোহেল মুন্সী দীর্ঘদিন যাবৎ আমার বাড়ির পাশের জমি থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে। অনবরত ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কাটার ফলে বসতবাড়ি ভেঙে যাওয়ার আশংকা থাকায় আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনি ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা নাজমুল হুদাকে জানাই। আমরা কেন এ বিষয়টি ইউএনও এর এসিল্যান্ডকে জানিয়েছি সেজন্য সোহেল মুন্সী শত্রুতা শুরু করে এলাকাবাসীর মাধ্যমে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল কুমিল্লার লগ্নসার বাজার(চন্ডিমুড়া) গরু বাজার থেকে গরু বিক্রি করে ফেরার পথে লাজৈর গ্ৰামের গাজীর চা দোকানের সামনে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সোহেল মুন্সী(৩৮), মোবারকপুর গ্ৰামের হুমায়ন ও তাদের দলবলসহ সন্ত্রাসী কায়দায় মারধর করে গুরুতর জখম করে নগদ ৬ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা ছিনতাই করে। এরপর তারা(সোহেল মুন্সীর দল) আমাদের পিকআপ ভ্যানটি ভাংচুর করে এবং কোথাও অভিযোগ করলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। অভিযোগপত্রে এমনটি উল্লেখ করেন আবুল বাসার। বর্তমানে তিনি ও তাঁর ছেলে মনির হোসেন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন।

মনির ও আবুল বাসারের উপর হামলার অভিযোগের কথা জিজ্ঞেস করলে সোহেল মুন্সী বলেন, “আমি মনিরের সাথে কথা বলে ড্রেজার লাগিয়েছি । তখন মনির বলছিল কাকা আপনি আমাদের বাড়ির পাশটায় একটা পাড় বেঁধে মাটি কাটলে কোনো সমস্যা হবেনা। পরে মনির নিজেই ভেকো দিয়ে পাড় বাঁধে। আমি কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার যাই।এসে শুনি মনির আমার ১০-১২ টা ড্রেজার পাইপ ভেঙে ফেলছে। এ বিষয়ে এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে মীমাংসা করার জন্য সামনের শুক্রবার বসার কথা রয়েছে। সে কেন আমার পাইপগুলো নষ্ট করলো এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে গতকাল আমি তাঁর (মনিরের) সাথে দেখা করি। এ সময় মোবারকপুরের হুমায়ন ও মহিতুল আমার সাথে ছিল। যখন আমরা মনির ও মনিরের আব্বার(আবুল বাসার) সাথে কথা বলি তখন অতর্কিতভাবে ১০-১৫ জন যুবক আমাদের ৩ জনের উপর হামলা করে। এ হামলার পর আমার সাথে থাকা ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া আমাদের সাথে থাকা মহিতুলের ২ টি মোবাইলের ডিসপ্লে ফেটে গেছে এবং ৮০ হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, “মনিররা গরীব লোক। ওদের আমি দোষারোপ করছিনা। আমরা একই গ্ৰামের, দিনশেষে আমাদের একসাথেই থাকতে হবে। ওদের সাথে আমার কোনা শত্রুতা নাই। ওরা কার কুবুদ্ধিতে কাজটা করল বুঝতেছি না।” আবুল বাসারের উপর হামলার অভিযোগের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমাদের উপর কিছু ছেলে হামলা করেছে, আমরা কেন হামলা করতে যাব।” সোহেল মুন্সী এলাকার চেয়ারম্যান ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলতে চাচ্ছেন। সোহেল মুন্সীর ড্রেজারের কারণে আবুল বাসারের ঘর ও বাড়ির মাটি ভেঙে যাওয়ার ক্ষতিপূরণ দিবেন কিনা এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ” যদি ওনাদের ক্ষয়ক্ষতি হয় তাহলে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিব, আমাকেও একদিন মরতে হবে।” সোহেল মুন্সীর সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মহিতুল বলেন, “আমি ও হুমায়ন সোহেল মুন্সীর কাছে টাকা পাই। সে টাকা আনতে গেলে গতকাল সন্ধ্যায় লাজৈর গ্ৰামের মনির ও তাঁর আব্বার সাথে দেখা হয়। আমাদের কথা বলার সময় কোথায় থেকে যেন ২০-২৫ জন ছেলে এসে আমাদের উপর হামলা করে। হামলার পর আমার ২ টা মোবাইলের ডিসপ্লে ফেটে গেছে, ব্লুটুথ নষ্ট করে ফেলছে এবং সাথে থাকা ৮০ হাজার টাকা পাচ্ছিনা।” হামলাকারীদের মধ্যে লাজৈর পূর্বপাড়ার বাবু নামক একজনকে তিনি শনাক্ত করতে পারেন।

হামলার বিষয়ে মনির হোসেন জানান, “আমরা বছরখানেক আগে ৩ লক্ষ্য টাকা খরচ করে নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছি। কিন্তু পাশের জমিতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কাটার ফলে আমাদের ঘরের ৩ পাশের পাকা ভিটা ভেঙে গেছে। তাছাড়া বাড়ির অনেক জায়গার মাটিতে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এসিল্যান্ডের সাথে কথা বললে আমাদের বাবুটিপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে আমরা অভিযোগ করলে তহসিলদার মোহাম্মদ আলী ২ বার ঘটনাস্থলে এসে নামমাত্র ড্রেজার মেশিন বন্ধের নামে আমার কাছ থেকে প্রথমবার ১ হাজার টাকা ও দ্বিতীয়বার আমার আব্বার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে যায়। আমরা কোথাও ন্যায়বিচার পাচ্ছিনা।”

হামলার ঘটনায় তদন্তকারী কর্মকর্তা মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক নিজাম উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমরা তো এখনো ঘটনাস্থলে যাইনি তাই এখন কিছু বলতে পারছিনা। আগামীকাল ঘটনাস্থলে গেলে বলতে পারব।”

বাবুটিপাড়াসহ উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না ড্রেজার। যার ফলে কৃষি জমির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। অসহায় কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তার শরণাপন্ন হলে তারা মামলা করার পরামর্শ দেন। মামলার খরচ বহনে সক্ষম না হওয়া ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দরিদ্র কৃষকরা মামলা করতে সাহস পাচ্ছেন না। এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে ড্রেজার ব্যবসায়ীরা উপজেলার কৃষি জমি ধ্বংসের উৎসবে মেতে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *