মহানবী (সা.) এর জন্ম ও জন্মস্থান

মহানবী (সা.) এর জন্ম ও জন্মস্থান

ধর্ম

অক্টোবর ১০, ২০২২ ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাতের পুণ্য স্মৃতিময় দিন আজ ১২ রবিউল আউয়াল। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তার জন্ম হয়। ৬৩ বছরের জীবনে ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির পথ দেখিয়ে একই তারিখে তিনি পৃথিবী ছেড়ে যান।

জাজিরাতুল আরব যখন আইয়ামে জাহেলিয়াত বা পাপাচারের অন্ধকারে ডুবে ছিল, তখন আলোকবর্তিকা হয়ে জন্ম হয় পরম করুণাময় আল্লাহর বার্তাবাহক বা রাসুল (সা.) এর। মক্কার কোরাইশ গোত্রের সাধারণ পরিবারে জন্ম নেন তিনি। সত্যবাদিতা ও সততার প্রতীক ছিলেন তিনি। শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত ছিলেন। করুণা, ক্ষমাশীলতা, বিনয়, দানশীলতা, সহিষুষ্ণতায় তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব।

দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের পর মানবজাতির জন্য রেখে গেলেন মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন। যার মধ্যে রয়েছে মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির পথ নির্দেশিকা। মাত্র ৬৩ বছরে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও এখনো তার আদর্শে অনুপ্রাণিত পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তর।

বিশ্ব মুসলমানদের সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান মসজিদুল হারাম থেকে সামান্য দূরেই রাসুল (সা.)-এর পিতা আবদুল্লাহর ঘর অবস্থিত। ‘শিআবে আলী’র প্রবেশ মুখ হিসেবে পরিচিত জায়গাটি। তৎকালীন সময়ে বনি হাশেম গোত্রের লোকেরা যে জায়গায় বসবাস করতেন সেটিকেই ‘শিআবে আলী’ বলা হতো।

ইতিহাসবিদদের মতে, বাবা আবদুল্লাহর যে ঘরে মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেটি এই জায়গাতেই ছিল। মক্কায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসুল (সা.) এ ঘরেই বসবাস করতেন। যদিও এ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোনো ঐতিহাসিক তথ্য বা প্রমাণ নেই। তবুও মক্কা নগরীতে এটি রাসুল (সা.)-এর জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত।

ওসমানি শাসনামলে এ বাড়িটি মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হত। পরে এখানে একটি লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়। সৌদির বিখ্যাত শায়খ আব্বাস কাত্তান ১৩৭১ হিজরিতে ব্যক্তিগত সম্পদ ব্যয় করে এটি নির্মাণ করেন। মসজিদুল হারামের নতুন সম্প্রসারণ-কার্যক্রমে এই লাইব্রেরিটি অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে। সম্প্রসারণের নতুন নকশা ও মডেল থেকে যতটুকু জানা যায়, এ স্থানে কোনো স্থাপনা তৈরি না করে খালি ও উন্মুক্ত স্থান হিসেবে রাখা হবে।

নবিজি (সা.)-এর জন্মের ঘটনার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো তার জীবনাদর্শের অনুসরণ। যেমন- নবিজির জন্ম, শৈশব, নবি হিসেবে প্রেরণ, দাওয়াত, জিহাদ, ইবাদত, আখলাক-চরিত্র, নীতি-নৈতিকতা, তাকওয়া-তাহারত, দয়া-ভালোবাসা, রাগ-ক্রোধ, হাসি, ওঠা-বসা, হাঁটা, ঘুম-জাগরণসহ যাবতীয় চালচলন ইত্যাদি মুসলিম উম্মাহর সামনে উপস্থাপন করা। এগুলো সামনে রেখে আলোচনাসভার অয়োজন করা, অবশ্যই ভালো এবং প্রশংসনীয় কাজ। রবিউল আউয়াল মাসে ইসলাম সমর্থন করে না এমন কাজে মেতে না উঠে এগুলো করা যেতে পারে।

এ ছাড়াও প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজের তিনটি রোজা রাখার কথা এসেছে হাদিসে। এর প্রতি যত্নশীল হওয়া যেতে পারে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আ’মর ইবনে আ’স (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন, সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান।’ (বোখারি: ১১৫৯, ১৯৭৫)।

আর প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার অভ্যাস করা। রাসুল (সা.) এ দুই দিন বিশেষ রোজা রাখতেন। এ বিষয়ে নবিজি (সা.) বলেন, ‘বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি’ (সুনানে নাসায়ী: ২৩৫৮)।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকাল দিবস কামনা করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সূরা আল-আহজাব: ২১)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *