ভূতুড়ে পুতুল, ছবি তুলতে গেলেই বন্ধ হয়ে যায় ক্যামেরা

ভূতুড়ে পুতুল, ছবি তুলতে গেলেই বন্ধ হয়ে যায় ক্যামেরা

ফিচার স্পেশাল

নভেম্বর ১২, ২০২২ ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

বাচ্চারা উপহার হিসাবে পুতুল পেলে আর কী চায়! তার উপর যদি আকারে-আয়তনে সেই পুতুল প্রায় মানুষের সমান হয়, তা হলে তো তারা আনন্দে আত্মহারা। বড় পর্দায় এই পুতুলদের নিয়ে ভয়াবহ কাহিনী কম হয়নি।

বলিউডের ‘কাতিয়া বিচ্ছু’ থেকে হলিউডের ‘অ্যানাবেল’, ‘চাকি’ প্রভৃতি পুতুলের কাহিনী দর্শককে রীতিমতো ভয় ধরায়। এই ধরনের গল্প শুধু সিনেমার গল্পেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাস্তবেও এমন এক ঘটনা ঘটেছে আমেরিকায়। সেখানে যে পুতুলটিকে ঘিরে এক পরিবার ভয়ে শিউরে উঠেছিল, তার নাম রবার্ট।

জানা যায়, বিশ্বের সবথেকে ‘ভূতুড়ে’ পুতুল এই রবার্ট। ১৯০০ সালের ঘটনা। আমেরিকার ইটন স্ট্রিট এলাকায় থাকত ওটো পরিবার। ওটো পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য ছিল ইউজিন রবার্ট ওটো। ইউজিনকে ভালোবেসে সবাই জিন বলে ডাকতেন। তাদের বাড়ির এক চাকর ইউজিনকে নিজের হাতে তৈরি করা একটি পুতুল উপহার দেন। সেই পুতুলের আকার জিনকেও ছাড়িয়ে যায়। পুতুলটি জিনের এতোই পছন্দ হয়েছিল যে, সে নিজের নামেই পুতুলের নাম রেখেছিল। জিন সেই পুতুলের নাম দিয়েছিল রবার্ট। জিনের সর্ব ক্ষণের সঙ্গী ছিল সে। পুতুলটির চেহারা একনজরে দেখে অদ্ভুত লাগলেও তার প্রতি জিনের ভালোবাসা দেখে বাড়ির কেউ এই বিষয়ে কিছু বলেননি।

সেই পুতুলের নাম দিয়েছিল রবার্ট

সেই পুতুলের নাম দিয়েছিল রবার্ট

তবে হঠাৎ এক রাতে ওটো পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। জিনের বয়স তখন ১০ বছর। গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় জিনের। ঘুম ভাঙতেই সে দেখে, রবার্ট তার বিছানার উপর বসে জিনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে। এই দৃশ্য দেখে জিন আঁতকে ওঠে। স্পষ্ট মনে আছে, ঘুমানোর আগে রবার্টকে বিছানায় নয়, অন্য জায়গায় রেখেছিল সে। তা হলে সে বিছানায় এলো কী করে? ভয়ে চিৎকার করে ওঠে ছোট জিন। চিৎকার করার পরেই ঘরের ভেতর শুরু হয় তুলকালাম কাণ্ড। ঘরের আসবাবপত্রগুলো নিজে থেকেই এ দিক-ও দিক সরে যেতে থাকে। ঘরের দরজাও যায় বন্ধ হয়ে।

ছেলের চিৎকার এবং আসবাবপত্র সরানোর আওয়াজ পেয়ে জিনের ঘরে ছুটে যান তার মা। তবে দরজা যে ভেতর থেকে বন্ধ। বহু ক্ষণ ধাক্কা দেওয়ার পর অবশেষে নিজে থেকেই ঘরের দরজা খুলে যায়। দরজা খুলতে ঘরের ভেতর ঢুকে জিনের মা দেখলেন, বিছানার এক কোণে জিন ভয়ে জবুথবু হয়ে বসে রয়েছে। ঘর অগোছালো এবং তার প্রিয় পুতুল রবার্ট খাটের পায়ার কাছে পড়ে রয়েছে। জিন তার মাকে জানায়, রবার্ট এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। কিন্তু ছেলের কথা বিশ্বাস করেননি বাড়ির কেউ। সবাই ভেবেছিলেন, নিজের দোষ ঢাকতে মিথ্যা গল্প বানিয়ে প্রত্যেককে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে জিন।

তবে সময় যত এগোতে থাকে, তারা বাড়িতে অন্য ব্যক্তির উপস্থিতি টের পেতে থাকেন। কখনো মনে হত, সিঁড়ি দিয়ে কেউ ক্রমাগত ওঠানামা করে চলেছে। এমনকি, ঘরে সবাই কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময়েও তারা লক্ষ করতেন, কথার প্রসঙ্গ অনুযায়ী রবার্টের মুখভঙ্গি বদলে যেত। বাড়ির লোকেরা নাকি শুনতে পেতেন, জিনের ঘর থেকে দুই ধরনের আওয়াজ ভেসে আসছে। জিন কোনো প্রশ্ন করলে তার উত্তর ভিন্ন স্বরে ভেসে আসত। সবাই ভাবতেন, জিন নিজেই গলার স্বর বদলে খেলা করছে। পাড়া-প্রতিবেশীরাও জানিয়েছিলেন, তারা নাকি মাঝেমধ্যেই দেখতে পেতেন বাড়ির উপরের তলার ঘরের জানালা থেকে রাস্তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে রবার্ট। মনের ভুল ভেবে এ সব এড়িয়ে গিয়েছিলেন ওটো পরিবারের সদস্যরা। জিন পড়াশোনা শেষ করে চাকরিও পেয়ে যান। স্ত্রী অ্যানকে নিয়ে অন্য বাড়িতে নতুন সংসার পাতেন তিনি।

পাড়া-প্রতিবেশীরাও জানিয়েছিলেন, তাঁরা নাকি মাঝেমধ্যেই দেখতে পেতেন বাড়ির উপরের তলার ঘরের জানলা থেকে রাস্তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে রবার্ট

পাড়া-প্রতিবেশীরাও জানিয়েছিলেন, তাঁরা নাকি মাঝেমধ্যেই দেখতে পেতেন বাড়ির উপরের তলার ঘরের জানলা থেকে রাস্তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে রবার্ট

বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আবার পৈতৃক বাড়িতে ফিরে আসেন জিন। জিন তার স্ত্রীকে জানান, রবার্টের জন্য আলাদা ঘরে থাকার আয়োজন করতে। অ্যান এই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ছাদের ঘরে আটকে রেখে দেন রবার্টকে। তবে রবার্ট মনে হয় অ্যানের সিদ্ধান্তে খুশি হয়নি। ঐ পরিবারের দাবি ছিল, তাদের বাড়িতে যখনই কোনো অতিথি আসতেন, ছাদের ঘর থেকে জোরে চলাফেরার শব্দ, অট্টহাসি শোনা যেত। পাড়ার বাচ্চারাও দাবি করেছিল, তারা যখন স্কুল যায় তখন জিনের বাড়ির উপরতলার ঘরের জানালা দিয়ে কে যেন তাদের দিকে তাকিয়ে থাকত। বাচ্চাদের কথার সত্যতা যাচাই করতে জিন এবং অ্যান দুইজনেই উপরের ঘরে যান। সেই ঘরে তো কারও থাকার কথা নয়। তবে দরজা খুলে তারা নাকি দেখেন, জানালার দিকে মুখ করে বসে রয়েছে রবার্ট।

এই ঘটনা নাকি প্রায়শই ঘটতে থাকে তাদের সঙ্গে। যতো বার রবার্টকে তারা ছাদের ঘরে আটকে আসেন, ততো বার তারা উপরতলার ঘর থেকে রবার্টকে খুঁজে পান। তবুও তারা দুইজন বাড়ি ছেড়ে যাননি। ১৯৭৪ সালে জিন মারা যান। সেই ‘ভূতুড়ে’ বাড়িতে এসে ওঠেন নতুন মালিক। সঙ্গে তার ১০ বছর বয়সি মেয়ে। ছাদের ঘর থেকে রবার্টকে খুঁজে পায় মেয়েটি। রবার্টের সঙ্গেই নিয়মিত খেলা করত সে। তবে মেয়েটিও রবার্টের হাত থেকে রক্ষা পায় না। সে দাবি করে, পুতুলটি নাকি তাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে। মাঝেমধ্যেই ঘুম‌ের ঘোরে চেঁচিয়ে উঠত সে। রবার্টকে নাকি ঘরময় ঘুরে বেড়াতে দেখত মেয়েটি। ভয় পেয়ে পুতুলটিকে ফোর্ট ইস্ট মার্টেলো মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দেন তার বাবা-মা।

ভয় পেয়ে পুতুলটিকে ফোর্ট ইস্ট মার্টেলো মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দেন

ভয় পেয়ে পুতুলটিকে ফোর্ট ইস্ট মার্টেলো মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দেন

বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক পুতুলকে দেখতে মিউজিয়ামে ভিড় জমান অনেকেই। সুরক্ষার জন্য একটি কাচের পাত্রের ভেতর রাখা হয়েছে পুতুলটিকে। কিন্তু তার ভূতুড়ে কাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে মিউজিয়ামেও। দর্শকদের অনেকে দাবি করেছেন, তারা যখন পুতুলটির ছবি তোলার চেষ্টা করেছেন, সেই মুহূর্তে ক্যামেরা কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মিউজিয়াম থেকে বেরোনোর পর আবার নিজে থেকেই নাকি ঠিক হয়ে গিয়েছে ক্যামেরাগুলো। মিউজিয়ামের কর্মীদের দাবি, কাচের পাত্রের ভেতরে রাখলেও মাঝেমধ্যে দেখা যায়, রবার্ট কাচের গায়ে হাত দিয়ে রয়েছে। কখনো বা দর্শনার্থীদের দিকে ভয়াল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় রবার্টকে।

অনেকে মনে করেন, জিনকে যে চাকর এই পুতুল উপহার দিয়েছিলেন, তিনি কোনো ‘কালো জাদু’র প্রয়োগ করেছিলেন পুতুলটির উপর। অনেকের দাবি, ভৃত্যের সঙ্গে হয়তো খারাপ আচরণ করতেন ওটো পরিবারের সদস্যরা। তাই মালিকের উপর প্রতিশোধ নিতে এই পন্থা অবলম্বন করেছিলেন তিনি। কেউ কেউ আবার মনে করেন, এই পুতুলটি জিনকে উপহার দিয়েছিলেন তার দাদু। জার্মানিতে ঘুরতে যাওয়ার সময় নাতির জন্য পছন্দ করে এনেছিলেন এই পুতুলটি। যদিও এই পুতুলের ‘কাণ্ডকারখানা’কে বিশ্বাস করতে রাজি নন অনেকেই। তাদের মতে, অন্ধবিশ্বাস, ভয় বা কুসংস্কার থেকে লোকের মুখে মুখে এই ধরনের কাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই প্রচারের পিছনে কারও কারও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও মনে করেন তারা।

সূত্র: আনন্দবাজার 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *