বিষমুক্ত জৈব সারে সবজি উৎপাদন করছে নালিতাবাড়ীর রামচন্দ্রকুড়ার কৃষকরা

দেশজুড়ে

সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২ ৭:৫১ অপরাহ্ণ

মাহফুজুর রহমান সোহাগ, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)

আসছে শীতকাল। মৌসুমী সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কৃষকেরা।

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) ক্লাবের আওতায় জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাইদমন ব্যবস্থাপনা প্রর্দশনী পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে ওই এলাকার ৫শ জন কৃষককে আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষন প্রদানের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে ফেরোমন ট্রেপ ও জৈব সারে সবজি উৎপাদনে উদ্বুদ্ব করেছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর।

উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষক সূূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে উপজেলার সীমান্তবতীর্ রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নকে (আইপিএম) কৃষি মডেল ইউনিয়ন হিসাবে ঘোষনা করা হয়। পরবতীর্তে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজম্যান্ট) আইপিএম ক্লাবের অধীনে জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাইদমন ব্যবস্থাপনা প্রর্দশনী পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে ওই এলাকার ৫শ জন কৃষককে আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। এসময় কৃষকের চাহিদামত বেগুন, করলা, লাউ, সীম, কোমর, বরবটি এসব সবজি বীজ, ফেরোমন ট্রেপ, লিউর, স্প্রে মেশিনসহ নানা উপকরন ও জৈব সার উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রদান করা হয়। পরবতীর্তে বর্তমান সময় পর্যন্ত কৃষকরা প্রশিক্ষন লব্দ জ্ঞান ও নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে তারা জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাইদমন ব্যবস্থাপনা প্রর্দশনী পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে অথ্যার্ৎ পোকা দমনে ফেরোমন ট্রেপ লিউর সেটিং ব্যবহার করে। এবছরই এই কৃষকরা নিরাপদ ফসল উৎপাদন করে বিষ মুক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করছে। যা অন্যান্য কৃষকের দেরকেও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে আকৃষ্ট করছে। এছাড়াও ফসল মাঠে কৃষকরা পার্চিং পদ্ধতি বাঁশ, খুটি, কঞ্চি, (লাউ, কোমর, সীমের) মাচা ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকা দমনে ফেসকুল্লাসহ নানা পাখিরা বসে যাতে পোকা খেতে পারে সেজন্য জায়গা করে রেখেছে।

আসছে শীতকাল। মৌসুমী সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কৃষকেরা।

কালাকুমা গ্রামের বেগুন চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষন গ্রহন করেছি। জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাইদমন ব্যবস্থাপনা প্রর্দশনী পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে আমাদের চাহিদামত বেগুন সবজি বীজ, ফেরোমন ট্রেপ, লিউর, স্প্রে মেশিন, উপকরন ও জৈব সারসহ অন্যান্য কৃষি অফিস থেকে প্রদান করে। পরবতীর্তে আমি লম্বা কালচে বেগুন উৎপাদনে যাই এবং বিষমুক্ত বেগুন ফলন এবছর ভাল আসে। গত কিছুদিন পূর্বে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছিল। কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল। পরে আবার তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। ২০ শতাংশ জমিতে সপ্তাহে ২মন বেগুন তোলা যায়। আমরা এখন বাজারে এই লম্বা বেগুন বিক্রিও করছি। প্রতিকেজি বেগুন ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা মন/ধরা হিসাবে পাইকারদের কাছে বিক্রি করি।

বিশগিরিপাড়া গ্রামের করলা চাষী, মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনা প্রর্দশনী পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে ২০ শতাংশ জমির জন্য আমার চাহিদামত করলা সবজি বীজ (লালতীর ১০ প্যাক), ফেরোমন ট্রেপ, লিউর, স্প্রে মেশিনসহ উপকরন ও জৈবসার অন্যান্য কৃষি অফিস থেকে প্রদান করে। পরবতীর্তে আমি করলা চাষ শুরু করি এবং বিষমুক্ত করলার ভাল ফলন আসে। গত কিছুদিন পূর্বে ২০ শতাংশ জমিতে আমি প্রথমবার দুই হাজার টাকা মন দরে পাইকারদের কাছে ক্ষেত হতেই এই করলা বিক্রি করেছি। করলার বাজার বর্তমানে ভাল। প্রতি কেজি করলা বাজারে ৬০/৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর সাথে আমার খড়ের পাল্লা ছিল। সেখানে কোমর বিচি ফেলেছিলাম। কয়েক মাসের মধ্যেই এর ফলন এসে গেছে। যা এখন প্রতিটির মূল্য ১৫০/২০০ টাকা।

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মর্কতার্ মোঃ আলমগীর কবির বলেন, এই অঞ্চলের কৃষকরা আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষন গ্রহন করেছে। এখানে আইপিএম ক্লাব রয়েছে। এটি সীমান্তবতীর্ কৃষি মডেল ইউনিয়ন। জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনা প্রর্দশনী পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে এ অঞ্চলের কৃষকরা সফল হয়েছে। প্রশিক্ষনলব্দ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সীমান্তবতীর্ এই অঞ্চলে কৃষি অর্থনীতিতে কৃষকরা অবদান রাখছে। এই কৃষকরা যদি মনে প্রানে চেষ্টা করে এবং এই ফসল গুলিতে তারা যদি যত্নবান হয় তাহলেই তারা স্বাবলম্বি হতে পারবে। কৃষি অফিস থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *