প্রাচীন ও মধ্যযুগের যুগের পাঁচজন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার

প্রাচীন ও মধ্যযুগের যুগের পাঁচজন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার

ফিচার স্পেশাল

অক্টোবর ৯, ২০২২ ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ

সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। ঠাণ্ডা মাথায়, পরিকল্পনা করে কোনো ব্যক্তিকে খুন করা আমরা গল্প-উপন্যাসে হরহামেশাই পড়ি।

সাম্প্রতিক সময়ের সিরিয়াল কিলার বা গত শতাব্দীতে ধরা পড়া অনেক সিরিয়াল কিলারদের কথা হয়তো আপনি শুনে থাকবেন। কিন্তু হাজার বছর আগের কোনো সিরিয়াল কিংবা মধ্যযুগের সিরিয়াল কিলারদের সম্পর্কে কি আপনি কিছু জানেন? আজ জানাবো প্রাচীন ও মধ্যযুগের পাঁচজন ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার সম্পর্কে-

 

লিউ পেংলি

 

লিউ পেংলি

লিউ পেংলি

লিউ পেংলি ছিলেন খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দীর একজন হান প্রিন্স, লিউ তার হত্যার তাণ্ডবে তাকে সহায়তা করার জন্য তার ছোট সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছিলেন। অনুমান করা হয় যে তিনি একশোরও বেশি লোককে হত্যা করেছিলেন এবং হত্যা করা সেই মানুষদের সম্পত্তি লুট করেছিলেন। এতো বড় অপরাধের পরে-ও লিউ পেংলির কোনো বিচার হয়নি। যেহেতু তিনি রাজপরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, রাজার কাছে তার দুষ্ট কাজের জন্য নালিশ করা সত্ত্বেও, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি বরং কেবল তার উপাধি কেড়ে নেয়া হয়েছিল এবং তাকে রাজ নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল।

বিষের রানি লোকাস্টা

বিষের রানি লোকাস্টা

বিষের রানি লোকাস্টা

লোকাস্টা ছিলেন খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে প্রাচীন রোমের সিরিয়াল কিলার। তাকে ইতিহাসের প্রথম সিরিয়াল কিলার ভাবা হয়। লোকাস্টা মানুষের কাছে বিষ বিক্রি করতেন আর সেই বিষ দিয়ে রোমের লোকেরা নিজেদের শত্রুকে হত্যা করতো। শুধু সাধারণ মানুষ নন তার বিষ ব্যবহার করে ক্লডিয়াস এবং ব্রিটানিকাস এর মতে রোমান সম্রাটের মৃত্যু হয়েছে। তার অপরাধের জন্য তিনি জেলেও ঢুকেছিলেন কিন্তু সম্রাট নিরো যখন সম্রাটের সিংহাসনে বসেন নিরো তাকে মুক্ত করে দেন। আর তিনি নিরোর প্রিয় ব্যক্তিদের একজন হয়ে উঠেন। এছাড়াও তিনি মানুষকে বিষ বানানো শেখাতেন এবং তার প্রয়োগও। তিনি কতজন লোককে হত্যা করেছিলেন তা অজানা, তবে নিরো যতদিন সম্রাট ছিলেন ততদিন পর্যন্ত তার প্ররোচনা স্থায়ী হয়েছিল। নিরোর আত্মহত্যার পর, লোকস্টাকে বন্দী করা হয় এবং অবশেষে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

গিলস ডি রাইস

গিলস ডি রাইস

গিলস ডি রাইস

গিলস ডি রাইস ফ্রান্সের ব্রিটানি নামক জায়গায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ফ্রান্সের জাতীয় বীর জন অব আর্কের একজন নাইট এবং সঙ্গী ছিলেন। নাইটের মতো মর্যাদাপূর্ণ খেতাব থাকা সত্ত্বেও, তিনি নীচু মানসিকতার কাজকর্ম করে গেছেন। গিলস শিশুদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতেন। শিশুদের নির্যাতন, ধর্ষণ এবং অবশেষে হত্যা করে তিনি পাশবিক আনন্দ পেতেন। তিনি যে একজন শিশু সিরিয়াল কিলার ছিলেন তা তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন। মাত এক দশকেই তিনি ১৪০ জনপর অধিক শিশু হত্যা করেছিলেন। ১৪৪০ সালে মৃত শিশুদের শত শত বাবা-মা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে তাকে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

পিটার স্টাম্প

পিটার স্টাম্প

পিটার স্টাম্প

১৬ শতকের ইউরোপ তখন ওয়্যারউলফের উন্মত্ততার উচ্চতায়। পিটার স্টাম্প নিজেকে তখন ডেভিল থেকে উপহার ওয়্যারউলফ বলে ঘোষণা করেছিলেন। এই উদ্ভট ধারণাই তাকে একটি ক্ষুধার্ত, হত্যাকারী পশুতে রূপান্তরিত করেছিল। পিটার স্টাম্প, যদিও একজন ওয়্যারউলফ ছিলেন না, তবে তিনি অবশ্যই একজন দানব ছিলেন। তার নরখাদক প্রবণতার জন্য তিনি তার নিজের ছেলে সহ ১৪টি শিশুকে হত্যা করেছিলেন।

শুধু তাই নয় তিনি সহিংসভাবে দুই গর্ভবতী নারীকে হত্যা করেছিলেন এবং নিজের মেয়েকেও তিনি ধর্ষণ করেছিলেন। তার এই জঘন্য অপরাধের জন্য তাকে সম্রাট নৃশংসভাবে মৃত্যু দেয়ার আদেশ দেন। তার মৃত্যুদন্ড এতোটাই নৃশংস ছিল যে তার মৃত্যু বহুকাল পড়েও তা মানুষের মুখে প্রচলিত ছিল। মৃত্যুদন্ডের সময় স্টাম্পকে একটি টর্চার হুইলে রাখা হয়, তারপরে তার মাথাটি বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং একটি নেকড়ের ছবির পাশে খুঁটির উপরে রাখা হয়। এটি করা হয়েছিল যাতে অন্য আর কোনো ব্যক্তি নিজেকে ওয়্যারউলভ হিসাবে জাহির করার চেষ্টা না করে।

ক্রিস্টম্যান জেনিপারটেইঙ্গা

ক্রিস্টম্যান জেনিপারটেইঙ্গা

ক্রিস্টম্যান জেনিপারটেইঙ্গা

ক্রিস্টম্যান জেনিপারটেইঙ্গাকে ছিলেন ১৬ শতাব্দীর একজন দস্যু। ক্রিস্টম্যান জেনিপারটেইঙ্গাকে দেখতে অনেকটা খ্রিষ্টান সেইন্ট অর্থাৎ সাধুদের মতো দেখতে ছিলো। তিনি তার জীবনে প্রায় এক হাজার নিরীহ মানুষ হত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হয়। ক্রিস্টম্যান জেনিপারটেইঙ্গা তার হত্যার রেকর্ড রাখার জন্য একজন জার্নাল রেখেছিলেন। সেই জার্নালই হয়ে উঠেন তার ৯৬৪ তম শিকার। তিনি যেসব লোকেদের হত্যা করেছিলেন তাদের জন্য তার কোন অনুশোচনা ছিল না এবং তিনি এক হাজার জন হত্যা করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিক্ষুব্ধ ছিলেন।

তিনি মূলত ভ্রমণরত ক্লান্ত পথিকদের হত্যা করতেন। কখনো তাদের বিষ পান করিয়ে হত্যা করতেন। কখনওবা তাদের ছুড়ি দিয়ে হত্যা করতেন। হত্যা করার পর সে নিজেদের সহযোগীদেরকে হত্যা করতেন যেনো সেই লুটের পুরো ভাগ নিজে ভোগ করতে পারেন। ১৫৮১ সালের মে মাসে তাকে বন্দী করা হয় এবং ১৫৮১ সালের জুনে ব্রেকিং হুইল ব্যবহার করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তাকে নয় দিন ধরে নির্যাতন করা হয়েছিল, যার প্রতিটি সেকেন্ড ৯৬৪ জনকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ব্যয় করেছিল। ২৬ জুন ১৫৮১ সালে প্রচুর নির্যাতনের ফলে তার অভ্যন্থরীন অঙ্গের ক্ষতি হয় এবং তার মৃত্যু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *