প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর : ভবিষ্যৎ সম্পর্কের দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে

জাতীয় স্লাইড

আগস্ট ৩১, ২০২২ ৯:৩৪ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকালে দুদেশের বিদ্যমান সহযোগিতার মূল্যায়ন করা হবে। এর আলোকেই পাওয়া যাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা।

ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি সেপা (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট) সই করার লক্ষ্যে আলোচনা শুরুর ঘোষণা দিতে পারেন দুদেশের শীর্ষ নেতা। এছাড়া সফরকালে পানি, বাণিজ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, কানেকটিভিটি, বিদ্যুৎ, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৫ সেপ্টেম্বর চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে এটি তার ফিরতি সফর। গত বছর ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। শেখ হাসিনার সফরের বিস্তারিত কর্মসূচি এখনো প্রণয়ন করা হচ্ছে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিলি­ যাবেন। ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। একইদিন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের বিভিন্ন কোম্পানির সিইও এবং ব্যবসায়ী কমিউনিটির সঙ্গে বৈঠক করবেন। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর আজমির শরিফে হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন। সেদিন বিকালে তিনি দেশে ফিরবেন।

সফরকালে বেশ কিছু এমওইউ সই করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। যেসব এমওইউ সই’র জন্য চ‚ড়ান্ত করা সম্ভব হবে সেগুলো স্বাক্ষর হবে। কারণ কোনো কোনো এমওইউ খসড়া প্রস্তুতির কাজ এখনো চলছে। কোনোটির আইনি ভেটিং শেষ হয়নি, মন্ত্রিসভায় অনুমোদন সম্পন্ন হয়নি। এসব নিয়ে পুরোদমে প্রস্তুতির কাজ চলছে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরকালে যুগান্তকারী বড় ধরনের কোনো চুক্তি হচ্ছে না। রুটিন এমওইউ সই হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে দুদেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক হয়েছে।

প্রায় এক যুগ পরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলোচনা হয় গঙ্গার পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে। তিস্তা চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কুশিয়ারা নদী থেকে প্রত্যেক দেশ শুকনো মৌসুমে ১৫৩ কিউসেক পানি উত্তোলনের লক্ষ্যে একটি খসড়া এমওইউ প্রস্তুত করেছে। কুশিয়ারা এমওইউ ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাভ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে সই হতে পারে। তবে তিস্তার চুক্তি সই হওয়ার এখনো কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দিলি­ গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে ২০১১ সাল থেকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ঝুলে আছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সংকটকালে পেঁয়াজ, গমসহ জরুরি খাদ্যশস্য যাতে সময়মতো পাওয়া যায় সেদিকে জোর দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার মধ্যে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবিলম্বে চালুর লক্ষ্যে একটি ঘোষণা আসতে পারে। যদিও বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কবে চালু হবে তার কোনো উলে­খ ঘোষণায় থাকছে না।

বাণিজ্য ক্ষেত্রে সেপা চুক্তি নিয়ে বড় অগ্রগতি আশা করা হচ্ছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদারে ‘কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট’ (সেপা) চুক্তির প্রস্তাব ভারত আগেই দিয়ে রেখেছে। চুক্তিটির ব্যাপারে একটি যৌথ সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। উভয় দেশ সমীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়ে তা সই করার জন্য আলোচনা (নেগোসিয়েশন) শুরুর আহŸান জানাতে পারেন। যদিও এই দরকষাকষি কবে শুরু হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। দরকষাকষি শেষ হওয়ার পর সেপা চুক্তি সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে প্রতিরক্ষা খাতে নতুন কোনো চুক্তি সই হবে না। ২০১৫ সালে দুদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার লক্ষ্যে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সই হয়েছিল। ওই চুক্তির আওতায় ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলে ভারত প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল। ওই ঋণ বাস্তবায়নের দিক নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

ভারতের ঋণের বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা আছে। এখন পর্যন্ত ৮০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলে বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্র“তি ব্যক্ত করেছে ভারত। কানেকটিভিটির দিকটির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছে দিলি­। ১৯৬৫ সালের আগে কানেকটিভিটি ফের চালুর প্রতি আগ্রহ বেশি। রেলওয়ের ক্ষেত্রে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, খুলনা-মংলা রেল সংযোগ এবং দুই দেশের মধ্যে নতুন ট্রেন মিতালি এক্সপ্রেস চালুতে সন্তোষ প্রকাশ করা হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *