পিইসির সুপারিশ উপেক্ষা উঠছে একনেকে

জাতীয় স্লাইড

মে ৩০, ২০২২ ১১:২২ পূর্বাহ্ণ

পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তারপরও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উঠতে যাচ্ছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। বুধবার অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) যেসব সুপরিশ দিয়েছে তা প্রতিপালন করা সময় সাপেক্ষ। তবে ইতোমধ্যেই সুপারিশ করা বেশ কিছু ব্যয় প্রাক্কলন আমাদের হাতে চলে এসেছে। যেগুলো বাকি আছে সেগুলোর জন্য প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হবে না। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ বলেন, বিষয়গুলো আমরা দেখেছি। প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের পর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে বেশ কিছু কাজ চীন বাস্তবায়ন করবে। অনুমোদন হলে নির্ধারিত ব্যয় সীমার মধ্যেই তারা এসব বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের একটি সূত্র জানায়, সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে পিইসি সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো পুরোপুরি প্রতিপালন করা হয়নি। পিইসি সভার সুপারিশে ব্রিজ নির্মাণে বিআইডব্লিউটির হালনাগাদ নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী ডিজাইন তৈরি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু সেটি করা হয়নি। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহপূর্বক ডিজাইন প্রণয়ন কাজ প্রক্রিয়াধীন।

সুপারিশে বলা হয়, বিমানবন্দর এলাকায় নির্মাণাধীন বা নির্মিতব্য বিভিন্ন সংস্থার প্রকল্প বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার স্থাপন করতে হবে। এটিও প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানানো হয়েছে। আরও বলা হয়, প্রকল্প পরিচালক ও সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়ার দিকে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কোনো মিসিং লিংক আছে কিনা সেটি পরীক্ষা করে দেখবে। কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের শুধু চিঠি দিয়েই পরীক্ষা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পিইসি সভার সুপারিশে আরও বলা হয়েছিল-আরইবি, ডেসকো ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির ইউটিলিটি স্থানান্তরের ব্যয় প্রাক্কলন সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি সমন্বয়ে যৌথ জরিপ ও স্বাক্ষরে নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রেও বলা হয়েছে, যৌথ জরিপ ও যৌথ স্বাক্ষরে ব্যয় প্রাক্কলন নির্ধারণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপর এক সুপারিশে বলা হয়, ইউটিলিটি স্থানান্তরে বিদ্যমান স্থাপনার স্যালভেজ ভ্যালু বিবেচনায় নিয়ে ইউটিলিটি স্থানান্তরের ব্যয় প্রাক্কলন করতে হবে। এর উত্তরে বলা হয়, এই ব্যয় প্রাক্কলন প্রক্রিয়াধীন। পিইসি সুপারিশে আরও বলেছিন রেলওয়ের প্রতিনিধি, প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একজন প্রতিনিধি ও বিটিসিএলের প্রতিনিধি সমন্বয়ে যৌথ জরিপ ও যৌথ স্বাক্ষরে রেলওয়ে কপার ক্যাবল স্থানান্তরের ব্যয় প্রাক্কলন করতে হবে। এক্ষেত্রেও বলা হয়েছে প্রক্রিয়াধীন। ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেই সভার কার্যবিবরণী এবং একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্পের সার-সংক্ষেপ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, পিইসি সভার সুপারিশের আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন হলেও তাদের ওপরই দায়িত্ব থাকবে প্রক্রিয়াধীন কাজগুলো যাতে বাস্তবায়ন করা হয়।

সূত্র জানায়, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়কপথ) মূল কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে ৬ জুন মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই মেয়াদ ৪ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ছে ৬৫১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এজন্য প্রথম সংশোধন করা হচ্ছে প্রকল্পটি। ফলে পৌনে ৫ বছরের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় যাচ্ছে প্রায় ৯ বছর। সূত্র আরও জানায়, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর অনুমোদন দেয় একনেক। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। সে সময় ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কিন্তু নানা কারণে প্রকল্পটির মূল কাজই শুরু হয়নি। এরই মধ্যে রাজস্ব খাতের কয়েকটি অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধিসহ ডলারের বিনিময় মূল্য পরিবর্তনের কারণে এটির প্রথম সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এশিয়ান হাইওয়ে এলাইনমেন্টের মধ্যে অবস্থিত প্রস্তাবিত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০ জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা-করিডোরে যানজট অনেকটাই কমে যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হিসাবে ২০১৩ সালে বুয়েটের মাধ্যমে প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। ওই সমীক্ষা অনুসারে প্রস্তাবিত অ্যালাইনমেন্টটি ছিল হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে-আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় এবং ইপিজেড থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত। এই রুটে ৩৫ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার কথা। পরে ২০১৬ সালের আগস্টে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ করা হয়। সেই সমীক্ষায় এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। এর সঙ্গে ১০ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার র‌্যাম্প এবং ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার এড গ্রেড সড়ক যুক্ত করা হয়। ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হলে হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় এবং ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত সংযোগ স্থাপিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *