পবিত্র হজ শুক্রবার (৮ জুলাই)। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্বের ১০ লাখ হজযাত্রী সমবেত হচ্ছেন ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে।
কণ্ঠে তাদের সমস্বরে উচ্চারণ হচ্ছে: ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুক’। অর্থাৎ, ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ এ উচ্চারণে সাদা এক টুকরো কাপড়ে শরীর ঢেকে তারা ফজরের নামাজের পর থেকে রওনা দিয়েছেন আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে। যেখানে দাঁড়িয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলিমরা সমবেত হচ্ছেন এই মরুর প্রান্তরে।
বুধবার থেকে পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করে হজযাত্রীরা মিনায় সমবেত হতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে উপেক্ষা করে হজযাত্রীরা পবিত্র কাবাকে তাওয়াফ করেছেন। এর পর প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মিনায় ছুটে যান। সেখানে দিনের বাকি অংশ ও রাত অতিবাহিত করেন।
হজের আনুষ্ঠানিকতা চলবে পাঁচ দিন। তার মধ্যে আরাফাতের দিবসকে ধরা হয় মূল হজ হিসেবে। মিনা থেকে এদিন ভোর থেকেই হজযাত্রীরা লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক ধনিতে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হচ্ছেন। তাদের সমস্বরে উচ্চারিত লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে আরাফাতের আকাশ-বাতাস। এদিন পুরোদিন তারা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। দুপুরে হজের খোতবা শুনবেন। তারপর এক আজানে জুমা ও আসরের নামাজ আদায় করবেন।
সূর্যাস্তের পর হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করে যাত্রা করবেন মুজদালিফার উদ্দেশে। সেখানে আবার তারা এক আজানে আদায় করবেন মাগরিব ও এশা। তারপর পাথর সংগ্রহ করবেন, জামারায় প্রতীকী শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য। এদিন রাতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন তারা। শনিবার (৯ জুলাই) সকালে সূর্যোদয়ের পর পাথর নিক্ষেপ করবেন হজযাত্রীরা। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করে মাথা মুণ্ডন করবেন। এহরাম খুলে পরবেন সাধারণ পোশাক। আবার কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। সাফা ও মারওয়ায় সাতবার চক্কর দেবেন। আবার ফিরে যাবেন মিনায়।
স্বাস্থ্যসেবা
সৌদি আরবের গণমাধ্যম আরব নিউজ বলছে, হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। পবিত্র মক্কা নগরীতে এবং মদিনায় হজযাত্রীদের সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৩ হাসপাতাল ও ১৪৭ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। মিনায় হজযাত্রীদের চিকিৎসা সুবিধা দিতে প্রস্তুত রাখা হয় চারটি হাসপাতাল ও ২৬ স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
হজযাত্রীদের আইসিইউ সেবা দেয়ার জন্য কমপক্ষে ১ হাজার বেড প্রস্তুত। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাদের সেবা দেয়ার জন্য কমপক্ষে ২০০ বেড প্রস্তুত আছে। হজযাত্রীদের সেবা দিচ্ছেন কমপক্ষে ২৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। এবার অনুমোদিত টিকার পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন এমন ১০ লাখ মানুষকে হজ পালনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮ লাখ ৫০ হাজার বিদেশি। বাকিরা সৌদি আরবের।
এদিকে ২০২১ সালে টিকা নিয়েছেন এমন ৬০ হাজার সৌদি অধিবাসীকে হজ করার অনুমতি দেয়া হয়। ২০২০ সালে হজ পালন করেন হাতে গোনা কয়েক হাজার মুসলিম। এর আগে ২০১৯ সালে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম হজ পালন করেছেন। কিন্তু করোনার কারণে এ সংখ্যা পরের দুই বছর কমিয়ে আনতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।