নানা অনুষঙ্গে ঐতিহ্যের সাকরাইন

নানা অনুষঙ্গে ঐতিহ্যের সাকরাইন

দেশজুড়ে

জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

পুরান ঢাকার আকাশে বাহারি রঙের ঘুড়ি, আতশবাজি আর ফানুস। জানান দিচ্ছে বিদায় নিল পৌষ মাস। ঢাকার বাসিন্দারা দিনটি উদযাপন করে সাকরাইন উৎসবের মাধ্যমে। ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলোর মধ্যে একটি সাকরাইন। কেউ কেউ এটিকে পৌষ সংক্রান্তিও বলে থাকেন।

এ উৎসব ঘিরে প্রায় এক মাস আগে থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। বিশেষ করে এ এলাকার দোকানিদের ঘুড়ি এবং ফানুস বানানোর তোড়জোড় শুরু হয়। সকালে সূর্যোদয়ের পর থেকেই বাসাবাড়ির ছাদে চলছে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব। আগের দিন রাত থেকেই ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সুতা, নাটাই প্রস্তুত থাকে। গান-বাজনাসহ পিঠা উৎসবেরও আয়োজন হয়ে থাকে দিনটিতে। এবারও ব্যতিক্রম ঘটনি। নানা অনুষঙ্গে পালিত হলো এ উৎসব।

শনিবার পুরান ঢাকার বাড়িগুলোর ছাদে সাকরাইন উৎসব উপলক্ষে উড়তে থাকে লক্ষাধিক ঘুড়ি, ছিল আতশবাজি আর ফানুস। এছাড়া পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে বুড়িগঙ্গা পাড়ের ওয়াইজঘাটে আহসান মঞ্জিল সংলগ্ন বুলবুল ললিতকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে উদযাপিত হয়েছে পৌষ মেলা। মেলাটি উদযাপিত হয় পৌষের শেষ তিনদিন। সেই হিসেবে এবার মেলা শুরু হয় বৃহস্পতিবার থেকে এবং পর্দা নামে শনিবার রাত ৯টায়।

এবারের সাকরাইনের স্লোগান ‘ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা বাঁচান’। গতকাল ঢাকাবাসী সংগঠনের আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘুড়ি ওড়ায় বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টটন ডিকসন। এ সময় কাওয়ালি গান-নৃত্যসহ পিঠা পুলির উৎসব হয়।

এছাড়া পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার, নারিন্দা, ওয়ারী, সূত্রাপুর, শাঁখারিবাজার, বংশাল, শিংটোলা, নাজিরা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বাড়ির ছাদে প্যান্ডেল, সাউন্ড বক্সে গান বাজানো হচ্ছে। গানের তালে তালে কিশোর-কিশোরী হৈ-হুল্লোড় করছে। দুপুরের পর পরই আকাশে ঘুড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকে। শুরু হয় নিজের ঘুড়িকে সর্বোচ্চ উপরে ওঠানোর প্রতিযোগিতা। সেই সঙ্গে চলে অন্যের ঘুড়ি কাটার লড়াই। সন্ধ্যার পর পর পুরান ঢাকার আকাশ আলোকিত হয় রঙ-বেরঙের ঘুড়ি আর আতশবাজিতে।

ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব ঘিরে অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার ঘুড়িসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

রঙ-বেরঙের ঘুরিতে রঙিন পুরান ঢাকার আকাশ- ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ

রঙ-বেরঙের ঘুরিতে রঙিন পুরান ঢাকার আকাশ

শাঁখারিবাজারের বিক্রেতা শঙ্কর দাস বলেন, চশমাদার, কাউটাদার, পঙ্খিরাজ, প্রজাপতি , চক্ষুদার, ঈগল, সাদা ঘুড়ি, চারবোয়া, দুই বোয়া, টেক্কা, লাভ ঘুড়ি, তিন টেক্কা, মালাদার, দাবা ঘুড়ি, বাদুর, চিল, এংরি বার্ডস  ঘুড়ি বেশি বিক্রি হয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা ছিলো বড় ঘুড়িতে।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই সাকরাইন উৎসব দেখতে এসেছিলেন ঢাকাসহ বাইরের মানুষও। মিরপুর থেকে পুরান ঢাকায় সাকরাইন উৎসব দেখতে আসেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজ আহসান ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) শিক্ষার্থী মো. আলামিন মণ্ডল।

তারা বলেন, পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসবের কথা অনেক শুনেছি। এই উৎসবের দিনটি নিয়ে অনেক কৌতুহল ছিল। তাই এবার সেই কৌতুহল মেটাতে সশরীরে হাজির হলাম। সত্যি এক অদ্ভুত পরিবেশ। ঘুড়ি, আতশবাজি আর ফানুসের মিশ্রণে এমন সুন্দর আকাশ আগে কখনো দেখিনি।

পুরান ঢাকার নারিন্দার বাসিন্দা সাদিয়া সওদামনি সিনথি বলেন, সাকরাইন আমাদের পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। ছোটবেলা থেকেই এ দিনটা জাঁকজমকভাবে উদযাপন করে আসছি। এবারও আমাদের বাড়ির ছাদে এ আয়োজন করা হয়েছে। বন্ধুরা মিলে ঘুড়ি উড়ানো, আতশবাজি ফোটানোর মাধ্যমে অনেক আনন্দ করেছি।

সাভার থেকে পুরান ঢাকায় সাকরাইন উৎসব দেখতে আসেন দুই ভাই আমির হোসেন ও রাফিন মাহমুদ। তারা বলেন, পুরান ঢাকাবাসী উৎসব প্রিয়। প্রতিবছর সাকরাইনে পুরান ঢাকায় ঘুড়ি উড়ানো হয়। এ দৃশ্য দেখতে খুব ভালো লাগে। রাতের আতশবাজি ফোটানো দেখতে আরো বেশি ভালো লাগে। প্রতি বছরেই আসি আমরা। সাকরাইন উৎসবকে উপভোগ করতে ফুপির বাসায় এসেছি।

লক্ষ্মীবাজারের বাসিন্দা সাগর চন্দ্র দাস বলেন, পরিবারের সবাই মিলে অনেক আনন্দ করেছি।

পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ কান্ত দাস বলেন, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য ঘুড়ি ওড়ানোর আয়োজন করেছিলাম। এখানে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। ভবিষ্যতেও এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *