নতুন দরে দ্বিতীয় দিনেও অস্থির ডলার বাজার

জাতীয় স্লাইড

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ

নতুন দর কার্যকর হওয়ায় সোমবারের মতো মঙ্গলবারও দিনভর ডলার বাজারে অস্থিরতা ছিল। ডলারের দাম একেক ব্যাংকে একক রকম। কোনো কোনো ব্যাংক মঙ্গলবার দুদফায় বিনিময় হার ঘোষণা করেছে। অথচ দিনের শুরুতে একবারই বিনিময় হার ঘোষণা করা হয়।

এদিন আন্তঃব্যাংকে ডলারের দামে ব্যাপকভাবে উঠানামা করেছে। সর্বনিু ১০১ টাকা ৬৭ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা দরে ডলার বেচাকেনা হয়েছে। অথচ বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলার বেচাকেনা হয়েছে ৯৫ টাকা করে। আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম ৭ টাকা থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এর প্রভাবে আমদানি খাতে ডলারের দামও বেড়েছে। মঙ্গলবার কোনো কোনো ব্যাংক ১০৮ টাকা করে আমদানির জন্য ডলার বিক্রি করেছে। বৃহস্পতিবার এই দর ছিল ৯৫ টাকা ৬ পয়সা। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল কেনার মধ্যেকার ব্যবধান ৯ টাকা হওয়ায় রপ্তানিকারকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহের দর সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা বেঁধে দেওয়ার ফলে গত ৩ দিন ধরে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। আগামীতে এর প্রবাহ আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্যাংকের পরিবর্তে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে পারে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা আরও সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রোববার বিকালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) এক বৈঠকে বিদেশি এক্সচেঞ্জ থেকে রেমিট্যান্সের ডলার কেনার দর সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ও রপ্তানি বিল কেনার দর ৯৯ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। এর আগে সোনালী, জনতা, অগ্রণীসহ সরকারি ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ১১০ টাকা থেকে ১১১ টাকা করে ডলার কিনছিল। হঠাৎ করে এর দর ২ থেকে ৩ টাকা কমিয়ে ১০৮ টাকা বেঁধে দেওয়ায় এখন এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে প্রবাসীরা ডলার দিচ্ছেন না। তারা ১১০ থেকে ১১১ টাকার কমে ডলার বিক্রিতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার পাচ্ছে না। এদিকে সরকারি কয়েকটি ব্যাংক আমদানির দায় মেটাতে এখনও চড়া দামে ডলার কিনছে। তারা আগে থেকে ১১০ টাকা করে ডলার কেনার ঘোষণা দিয়েছে। সেই দরে আগাম যেসব ডলার কেনা হয়েছে সেগুলো এখন সরবরাহ করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো প্রচলিত নিয়মে ৫ কার্য দিবসের আগাম ডলার কিনতে পারে। আগামী রোববার ৫ কার্য দিবস শেষ হবে।

ব্যাংকাররা জানান, রেমিট্যান্সের ডলারের দাম হঠাৎ করে ২ থেকে ৩ টাকা কমানো যুক্তিযুক্ত হয়নি। কেননা প্রবাসীরা ব্যাংকে কম দামে ডলার বিক্রি করবেন না। তারা তখন হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হবেন। কেননা হুন্ডিতে প্রতি ডলার ১১২ থেকে ১১৩ টাকা দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া দেশের কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দাম আরও বেড়ে ১১৬ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। রোববার ছিল ১১৩ থেকে ১১৪ টাকা। এদিকে ব্যাংকে নগদ ডলার ১০৩ টাকা থেকে ১০৮ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। ফলে ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের দাম ৮ থেকে ১৩ টাকা বেশি। ফলে নগদ যেসব রেমিট্যান্স দেশে আসে যেগুলোর বড় অংশই খোলাবাজারে চলে যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারি আমদানির বিল পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স থেকেও ওই দায় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সরকারি ব্যাংকগুলো চড়া দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। এর দাম কমানোর ফলে গত দুদিন ধরে রেমিট্যান্স পাওয়া যাচ্ছে কম।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজার কার্যত অচল ছিল। যে দামে এই বাজারে ডলার বিক্রি হতো, এরচেয়ে অনেক বেশি দামে ব্যাংক করপোরেট সেলের আওতায় ডলার বিক্রি করতে পারত। ফলে আন্তঃব্যাংকে কেউ ডলার বিক্রি করত না। এই বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। ফলে মঙ্গলবার এক লাফে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম ৯৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০১ টাকা ৬৭ পয়সা হতে ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা দরে বেচাকেনা হয়েছে। অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের চেয়ে ৭ থেকে ১১ টাকা বেড়েছে। এই ডলার দিয়ে ব্যাংকগুলো আমদানির দায় পরিশোধ করে। ফলে আমদানি খাতে ডলারের দাম বাড়ছে।

মঙ্গলবার বিভিন্ন ব্যাংক আমদানি খাতে বিভিন্ন দরে ডলার বিক্রি করেছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোই বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে। রূপালী ব্যাংক ১০৭ টাকা ৯৫ পয়সা, জনতা ব্যাংক ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা, অগ্রণী ব্যাংক ১০৪ টাকা ১৫ পয়সা, বেসরকারি খাতের ইউসিবি ১০৫ টাকা ২৫ পয়সা দরে ডলার বেচাকেনা করেছে।

ইস্টার্ন ব্যাংক মঙ্গলবার ডলারের দুই দফায় দর ঘোষণা করেছে। প্রথমে তারা আমদানির জন্য ডলারের দাম নির্ধারণ করে ১০৫ টাকা ২৫ পয়সা। দুপুরের পর তা কমিয়ে দ্বিতীয় দফায় নতুন রেট ঘোষণা করে। এতে আমদানির জন্য ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১০৩ টাকা।

দিনের শুরুতে অনেক ব্যাংক কম দামে ডলার কিনে তা বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা করে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তাদের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যকার ব্যবধানের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে কয়েকটি ব্যাংক তা কমিয়ে ফেলে। বৃহস্পতিবার সব ব্যাংক আমদানির জন্য একই দরে অর্থাৎ ৯৫ টাকা ৫ পয়সা দরে ডলার বেচাকেনা করেছে। সোমবার থেকে নতুন দর কার্যকর হওয়ার ফলে একেক ব্যাংক একেক দরে ডলার বেচাকেনা করছে।

নতুন দরে রেমিট্যান্সের ডলার ১০৮ টাকা ও রপ্তানির বিলের ডলার ৯৯ টাকা কেনার দর ঠিক করা হয়েছে। এ নিয়ে রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একই ডলার খাত ভেদে কেনার মূল্যে এত ব্যবধান হবে কেন? এ প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বাফেদার এক কর্মকর্তা জানান, ৫ কার্যদিবসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। নতুন রেটের কারণে বিভিন্ন খাতে সসম্যা হচ্ছে। এগুলো পর্যালোচনা করে ডলারের দর সমন্বয় করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *