ড্রোন দিয়ে মুসল্লিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হামলা

আন্তর্জাতিক স্লাইড

এপ্রিল ২৩, ২০২২ ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ

জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ড্রোন ব্যবহার করে ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে ইসরাইলি বাহিনী।

এ ঘটনার পর অনেক মুসল্লির শ্বাসকষ্ট শুরু হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দুবাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া।

শুক্রবার (২২ এপ্রিল) আল-আকসা মসজিদে পবিত্র রমজানের তৃতীয় জুমায় অংশ নেন প্রায় দেড় লাখ মুসল্লি। এদিন ফজরের নামাজের সময়ে আল-আকসায় আবারও অভিযান চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এ সময় মুসল্লিদের ওপর রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তারা। এতে তিন সাংবাদিকসহ ৩১ ফিলিস্তিনি আহত হন।

গত সপ্তাহে ইহুদি পাসওভার উৎসবে পুলিশ প্রহরায় অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরাও মুসল্লিদের ওপর চড়াও হয়। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। পাসওভারের প্রথম দিন ১৫ এপ্রিল ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ১৫৮ জন ফিলিস্তিনি আহত হন। মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় অনেককে। তবে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও হামলার শঙ্কা থাকলেও, আল-আকসায় আসা বন্ধ রাখেননি ফিলিস্তিনিরা।

তারা জানান, আল-আকসায় তাদের উপস্থিতি অপরিহার্য। তারা সেখানে যাওয়া বন্ধ করবেন না। মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে রানা মোহাম্মদ নামের এক যুবক বলেন, ‘লোকজনের আল-আকসা ও জেরুজালেমে আসা গুরুত্বপূর্ণ। এতে জেরুজালেমের প্রতি অধিকার ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত হবে। এর মধ্য দিয়ে শিশুদের এই শিক্ষা দেওয়া হবে যে এই ভূখণ্ড আমাদের। আল-আকসা আমাদের ধর্ম।’

এদিকে গেল তিন সপ্তাহে ফিলিস্তিনিদের হামলায় ১৪ ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। আর চলতি বছরের শুরু থেকে ৪৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইহুদিরা।

১৯৬৭ সালে পুরো জেরুজালেম দখলে নেওয়ার পর থেকেই আল-আকসা মসজিদ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে ইসরাইল। এরপর নানা বিধিনিষেধ আর শর্ত পূরণের মাধ্যমে সেখানে ইবাদতের সুযোগ পেতেন সাধারণ মুসল্লিরা। তিন সম্প্রদায়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় প্রতিবছরই রমজান মাসে আল-আকসা ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়।

পবিত্র আল-আকসা মসজিদ বা বায়তুল মুকাদ্দাস সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে তৃতীয় পবিত্রতম স্থান বলে বিবেচিত। তবে জেরুজালেমের এই জায়গাটিকে পবিত্র স্থান হিসেবে দাবি করে আসছে ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাও। ইহুদিদের কাছে এটি টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত। ইতিহাসবিদদের মতে, বছরের পর বছর চলতে থাকা ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে এই পবিত্র মসজিদ।

প্রচলিত তথ্যমতে, আল-আকসার প্রথম নির্মাণ খ্রিস্টপূর্ব ৯৫৭ সালে। সৌদি আরবের মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীর পরই মুসলমানদের কাছে পবিত্র স্থান এই আল-আকসা মসজিদ। খ্রিস্টপূর্ব ১০০৪ সালে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময় এর সংস্কার করা হয়। মসজিদটি ৩৫ একর জমির ওপর নির্মিত। এই মসজিদটির নির্মাণশৈলী মুসলিম ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি।

পবিত্র আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের প্রথম কেবলা হিসেবে পরিচিত। কাবার পর ইসলামে দ্বিতীয় উপাসনাস্থল ছিল এটি। ঐতিহাসিকভাবেই আল-আকসা মুসলমানদের পবিত্র স্থান। তারপরও ইউনেস্কো এটিকে মুসলমানদের পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে, ইহুদি ও খ্রিস্টানরাও আল-আকসা মসজিদকে তাদের পবিত্র ভূমি হিসেবে দাবি করে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *