ঝিনাইগাতীতে আবারও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

দেশজুড়ে

মে ২৯, ২০২২ ২:৫৬ অপরাহ্ণ

শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে আবারও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ তৎপরতা শুরু করেছে। ২০১৪ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের একটি স্বার্থান্বেষী মহল উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই বারের সাবেক সভাপতি শিল্পপতি এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইমকে হত্যা করে উপজেলা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শুন্য করার ষড়যন্ত্র করে। তবে অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। গুরুতরভাবে আহত হন তিনিসহ প্রায় ডজন খানেক নেতা। এসময় পেট্রোল বোমা হামলায় কার্যালয়ে রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, এবারের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আবারও উপজেলা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইমের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। তবে এবার আর তাকে হত্যা করে নয়। নানান ধরনের অপবাদ দিয়ে তাকে দল থেকে সরানোর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে ওই স্বার্থান্বেষী মহল। যারা বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন তারা এসব ষড়যন্ত্র করে আসছেন।

জানা গেছে, গত ৯ মে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দসহ শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আতিউর রহমান আতিক এমপি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপি উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণা করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিউর রহমান আতিক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। কিন্ত নতুন করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা না করেই সভার কাজ সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে সভাপতি, সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গত ১৯ দিন অতিবাহিত হলেও সভাপতি/ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়নি। এদিকে ওই স্বার্থান্বেষী মহল উপজেলা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শুন্য করতে দলের সদ্য বিলুপ্ত সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম যাতে দলের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে না পারেন এ উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাকে নিয়ে বিষোদগার করার পাশাপাশি নামে বেনামে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগপত্র পাঠানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের নিকট।

সূত্র জানায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের হাল ধরতে এবং দলের জন্য অর্থ ব্যয় করার মতো নেতা ঝিনাইগাতীতে নেই। আর এ অভাব পূরন করে দলকে সুসংগঠিত করতে ২০০১ সালে শিল্পপতি এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইমকে জাসদ থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করান দলের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দরা। সে সময় সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি জিল্লুর রহমান ঝিনাইগাতীতে সফরে আসেন। তার হাত ধরেই দলে যোগদান করেন নাইম। নাইম দলে যোগদানের কিছুদিন পর দলীয় কাউন্সিলে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর ৩ (ঝিনাইগাতী-শ্রীবরদী) আসন থেকে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এ বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার অনুসারীরা। এ কারণেই তাকে সরিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শুন্য করতে চায় তারা। এরই ধারাবাহিকতায় দল ক্ষমতায় থাকার পরেও মূল ধারার আওয়ামী লীগ বিরোধীদলীয় ভূমিকায় রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। গত ২২ বছর ধরে নাইমের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দলীয় কার্যালয়ের ভাড়াসহ দলের সকল কর্মকাণ্ডের ব্যয়ভার মেটাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। দেশ স্বাধীনের পর ঝিনাইগাতী উপজেলা খেকে বড় কোন রাজনৈতিক দল এমপি প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি। ফলে যতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে শ্রীবরদী উপজেলা থেকে নাইম ছাড়া এ উপজেলা থেকে আর কোন যোগ্য প্রার্থীও নেই বললেই চলে। একারণে শ্রীবরদী উপজেলার এমপি প্রার্থীরা চান না নাইম মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। এ অভিযোগ উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

এবারের কাউন্সিলে মূল ধারার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নাইম ও বিশ্বজিৎ রায়কে প্যানেল দেওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য একেএম ফজলুল হক চাঁনের অনুসারীদের পক্ষ থেকে প্যানেল দেওয়া হয়েছে গোলাম মোস্তফা ও বেলায়েত হোসেনকে দিয়ে। সংসদ সদস্য একেএম ফজলুল হক চাঁন চাইছেন তার অনুসারীরা দলের দায়িত্বে থাক। জানা গেছে, তারা দুই জনই জাসদ থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন এবং দলকে শক্তিশালী করতে ২০০১ সালে এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইমকে দলে আনেন তারাই। এখন তারাই চাইছেন নাইম দল থেকে ছিটকে পড়ুক।

এ ব্যাপারে নাইম বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছি। আমি দলীয় মনোনয়ন চাওয়ায় অপশক্তিরা আমাকে ভালো চোখে দেখছেন না। তারা আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *