বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র খুব গুরুত্বপূর্ণ। জমি ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিদেশ যাত্রা—নানাবিধ কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেখা যায় অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রে বিভিন্ন ভুল থাকে। জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে নানা হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। তাই সেগুলো সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এবং আবেদন করার নিয়ম বা পদ্ধতি জানা না থাকলে ভোটার আইডি কার্ডধারীকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়। সেই সমস্যার সমাধানের এই আর্টিক্যাল আপনার বেশ উপকারে আসতে পারে।
যেসব ভুল সংশোধন করা যায়
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। ঘরে বসেই প্রমাণসহ অনলাইনে আবেদন করে ১৫ থেকে ২০দিনের মধ্যে এই ভুলগুলো সংশোধন করা যায়। যেসব ভুল সংশোধন করা যায় তা হচ্ছে-
- ভুলে পিতা, মাতা, স্বামীর নামের আগে মৃত লেখা
- ভোটার অবিবাহিত হলেও পিতা না লিখে স্বামী লেখা হয়েছে
- বিয়ের পর স্বামীর নাম যুক্ত করা
- বিবাহ বিচ্ছেদের পর স্বামীর নাম বাদ দেওয়া
- নতুন করে বিয়ে হলে পরবর্তী স্বামীর নাম যুক্ত করা
- পেশা পরিবর্তন
- পিতা-মাতা মারা গেলে মৃত উল্লেখ করার প্রক্রিয়া
- ঠিকানা পরিবর্তন
- জন্মতারিখ পরিবর্তন
- স্বাক্ষর পরিবর্তন ইত্যাদি।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এবং আবেদন করার নিয়ম এবং পদ্ধতি
অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধনের জন্য এই ঠিকানায় প্রবেশ করে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেখানে এনআইডি নম্বর দিতে হবে। এই অ্যাকাউন্টেই অনলাইনে কোন ধরনের ভুল তথ্য সংশোধন করা হবে তার ধরন অনুযাযী ফি-এর তালিকা দেওয়া লিংক পাওয়া যাবে।
পরিচয়পত্রে যেসব তথ্য দেওয়া আছে তার একটি পরিবর্তন করতে চাইলে প্রথমবার আবেদনের জন্য ২০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা এবং এর পরবর্তীতে যতবার আবেদন করা হবে ৪০০ টাকা করে ফি দিতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের ধরন অনুযায়ি এর ফি নির্ভর করে। তবে সবধরনের ফিয়ের সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হয়।
তথ্য সংশোধন
জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা স্মার্ট কার্ডে ছাপা আছে এমন তথ্য যেমন নিজ নাম/পিতা-মাতার নাম/স্বামী-স্ত্রীর নাম/ঠিকানা/রক্তের গ্রুপ সংশোধন।
- প্রথমবার ২৩০ টাকা
- দ্বিতীয়বার-৩৪৫ টাকা
- তৃতীয়বার ৫৭৫ টাকা
অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের নিয়ম
জাতীয় পরিচয়পত্রে কোনো ভুল হলে তা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে গিয়েও সংশোধন করা যায়। এক্ষেত্রে যদি কেউ ঘরে বসেই অনলাইনে এন আইডি বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে ইচ্ছুক হন তাহলে তিনি উলিখিত উপায়ে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। অনলাইনে যেসব তথ্য সংশোধন করা যায়-
- ব্যক্তিগত তথ্য পরিবর্তন
- ঠিকানা পরিবর্তন
- ভোটার এলাকার পরিবর্তন
- ছবি পরিবর্তন
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ড রিপ্রিন্ট
অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বা ছবি পরিবর্তনের নিয়ম
১. অনলাইনে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের তথ্য পরিবর্তন করতে হলে সবার আগে বাংলাদেশ এনআইডি পোর্টাল বা ওয়েবসাইটে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।
২. রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন হয়ে গেলে সেখানে দেওয়া লিংকে যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে হবে।
৩. লগ ইন এর পর একটি ওয়েবপেজ দেখতে পেলে এই লিংক বা উপরে বাম পাশে থাকা ‘প্রোফাইল’ ট্যাব এ ক্লিক করতে হবে।
৪. প্রোফাইল ট্যাব আসার পর নাম, জন্মতারিখ,জন্মস্থান, মা-বাবার নামসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যক্তিগত তথ্য দেখা যাবে।
৫. এরপর উপরের ডানদিকে ‘এডিট’ নামের একটি বাটন দেখা যাবে।
৬. এডিট বাটনে ক্লিক করলে জাতীয় পরিচয় পত্রের নির্ধারিত তথ্য পরিবর্তনের জন্য প্রযোজ্য ফি বা চার্জ এর তথ্য দেখা যাবে।
৭. সেখান থেকে ‘বহাল’বাটনে ক্লিক করলে এডিট প্রোফাইলে নিয়ে যাওয়া হবে। এখানে এসে কার্ডধারীরর সব ব্যাক্তিগত তথ্য পুনরায় দেখা যাবে।
৮. এখানে প্রতিটি তথ্যের পাশে একটি বক্স থাকবে। এই বক্সগুলোয় ক্লিক করলে বক্সটি টিকমার্কযযুক্ত হবে এবং চিহ্নযুক্ত বক্সের তথ্য এডিট করা যাবে।
৯. এই পেজ থেকে এনআইডিতে থাকা নাম, জন্ম তারিখ, রক্তের গ্রুপ, জন্ম নিবন্ধন নম্বর, মা-বাবার নাম ইত্যাদি পরিবর্তন করা যাবে। ফলে যেসব তথ্য পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক সেগুলোর পাশে টিকচিহ্ন দিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য এডিট করে নিলেই হবে।
১০. এডিট হয়ে গেলে উপরের ডানদিকে থাকা ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
১১. এরপর আপনাকে পরিবর্তন ট্যাবে নিয়ে যাওয়া হবে এবং এডিট করার পর পরিবর্তনকৃত অবস্থা দেখানো হবে। এরপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর আপনাকে ট্রানজেকশন ট্যাবে নিয়ে যাওয়া হবে।
১২. এখান থেকেই পরিবর্তনের জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।
তথ্য সংশোধনে ফি প্রদানের মাধ্যম
- বিকাশ
- ডাচ বাংলা ব্যাংক এবং রকেট মোবাইল ব্যাংকিং
- ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড এবং ওকে ওয়ালেট মোবাইল ব্যাংকিং
- ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ও টি-ক্যাশ মোবাইল ব্যাংকিং
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড
- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিডেট
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক লিমিডেট
বিকাশে বিল পরিশোধ করতে হবে
বিকাশের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করতে হলে অ্যাপটির ‘পে বিল’ অপশনটি ওপেন করতে হবে।এরপর ‘সরকারি ফি’ অপশন থেকে এনআইপি সার্ভিস বাছাই করে যে সেবার জন্য আবেদন করা হয়েছে তা নির্ধারন করে পেমেন্ট করতে হবে।