এবারের মমতাজউদদীন নাট্যকার পুরষ্কার পেলেন রুমা মোদক

এবারের মমতাজউদদীন নাট্যকার পুরষ্কার পেলেন রুমা মোদক

শিল্প ও সংস্কৃতি স্লাইড

জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ ১০:২০ অপরাহ্ণ

মতিউর রহমান সরকার

একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যকার ও অভিনেতা মমতাজউদদীন আহমদের ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আজ ১৮ জানুয়ারি, বুধবার ২য় বারের মতো মমতাজউদদীন নাট্যকার পুরষ্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানটি রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত উন্নয়ন সমন্বয় সংস্থার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ কনফারেন্স হলে বিকেল ৪টায় শুরু হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আমজাদ হোসেন। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. রতন সিদ্দিকী ও মমতাজউদদীন এর সহধর্মিনী কামরুননেসা মমতা।

উন্নয়ন সমন্বয়, বিশ্বসাহিত্য ভবন ও মমতাজউদদীন আহমদ সংগ্রহশালা আয়োজিত মমতাজউদদীন নাট্যকার পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে নাট্যগ্রন্থ ‘নির্বাচিত নাটক’ লিখে পুরষ্কারপ্রাপ্ত হন নাট্যকার রুমা মোদক। মূলত মমতাজউদদীন আহমদের স্মৃতি ধরে রাখতে এই পুরষ্কারটি প্রদান করা হয়। মমতাজউদদীন আহমদ জীবদ্দশায় দুটি পুরষ্কারের স্বপ্ন দেখেছিলেন, একটি মমতাজউদদীন নাট্যজন পুরষ্কার এবং অন্যটি মমতাজউদদীন নাট্যকার পুরষ্কার যেটি কেবল নাটক রচয়িতাদের দেওয়া হয়।

প্রফেসর ড. রতন সিদ্দিকী বলেন, আজকের প্রজন্ম স্যারকে ভুলতে বসেছে। একটা কথা মনে রাখবেন, জীবিত মানুষকে জীবিত রাখা সহজ কিন্তু একজন মৃত মানুষকে জীবিত রাখা ভীষণ কঠিন। আমরা এমন একটা বন্ধ্যা সময় অতিক্রম করছি যখন আমরা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছি।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার অনেক সৌভাগ্য যে আমি তাঁর (মমতাজউদদীন আহমদ) সহকর্মী ছিলাম এবং অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলাম। একবার রাজশাহী সার্কিট হাউসে আমি যে রুমে ছিলাম তাঁর পাশের রুমে ছিলেন স্যার ও ভাবি। ডিসেম্বর মাস। প্রচন্ড শীত। রাত তখন আড়াইটা কি তিনটা বাজে, হঠাৎ করে আমার দরজায় জোরে জোরে শব্দ হচ্ছে। ভয়ে ভয়ে আমি দরজা খুলে দেখি, মমতাজউদদীন স্যার চিৎকার করে বলছেন, ঐ জাহান্নামের কীটের সাথে ৪৪ বছর থেকেছি আর নয়। এই বলে তিনি প্রচন্ড শীতের রাতে সার্কিট হাউজের মাঠের বেঞ্চিতে গিয়ে বসে রইলেন।— এভাবেই নাট্যকার মমতাজউদদীনের জীবনের নানা হাস্যরসাত্বক স্মৃতি তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ হয়েছে বলেই মমতাজ ভাই, মমতাজ ভাই হয়েছে বলেই নাটক টিকবে, কারণ এরা হলো পাইওনিয়ার। যখন পাওইনিয়ার ভালোবাসে তখন একটা শিকড় অনেক গভীরে থাকে, শক্তিশালী থাকে। ধীরে ধীরে এই শিকড় ছড়াতে থাকে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. এম. আমজাদ হোসেন বলেন, ওনাকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, ওনাকে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করি এবং ওনার কর্মকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় সেই চেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখব।

কামরুননেসা মমতা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, এখানে একটা কথাই বলছি যে, রতন ভাই বলেছে যে, তিনি (মমতাজউদদীন আহমদ) সংসার সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন। তিনি সংসার সম্পর্কে মোটেও উদাসীন ছিলেন না। কারণ ধনেপাতা কয় পয়সার কিনেছে সেটা পর্যন্ত তিনি লিখে রাখতেন।

তিনি বলেন, তিনি একজন সফল বাবা, সফল স্বামী, সফল বন্ধু। কোনা দিক দিয়েই তিনি ব্যর্থ হননি।

ড. আতিউর রহমান বলেন, ব্যক্তি মমতাজউদদীন স্যার যে কত বড় মাপের একজন মানুষ, কত মানবিক, কত হৃদয়গ্রাহী একজন মানুষ— আমরা যারা কাছে ছিলাম আমরা তা দেখেছি। আমি অত্যন্ত গর্বিত যে এরকম একজন মানুষের সাথে আমার কেবল সাহিত্যিক সম্পর্ক ছিল না, ব্যক্তি সম্পর্কও ছিল গভীর।

দেশের সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যে শক্তি, সে শক্তিকে তিনি বেঁচে থাকলে আরও উজ্জ্বীবিত করতেন। কারণ সামনে চ্যালেঞ্জ যেটা আসছে সেটা কিন্তু ব্যাপক। বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট চলছে। সে সংকটের প্রভাব আমাদের দেশে পড়ছে। আমাদের অনেক মানুষের জীবন—জীবিকার উপর পড়ছে, দ্রব্যমূল্যের উপর পড়ছে। সমগ্র বিশ্ব একটা উথাল—পাতাল অবস্থায় আছে। আজকে একজন মমতাজউদদীন থাকলে তিনি তার নাটকে এই সংকটের কথা তুলে আনতেন। কারণ আমরা তাঁর নাটকে সংকটের কথা শুনেছি। তার নাটকে আমরা আগুনঝরা বক্তব্য শুনেছি।

তিনি বলেন, আজ স্যার নেই, কিন্তু তাঁর লেখাগুলো আছে, কথাগুলো আছে। স্যার যেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সিক্ত বাংলাদেশ চেয়েছিলেন সেরকম বাংলাদেশ গড়বার জন্য যেন আমরা আজকে অঙ্গীকারবদ্ধ হই।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য ভবনের প্রকাশক মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, মমতাজউদদীন সংগ্রহশালার প্রতিনিধি শাহরিয়ার মাহমুদ প্রিন্স, মোঃ সুজাতুল আলম কল্লোল, সহযোদ্ধা একাত্তর এর সভাপতি খান নজরুল ইসলাম হান্নান, সাধারণ সম্পাদক লায়ন হামিদুল আলম সখা, দপ্তর সম্পাদক লায়ন মোঃ আবুল হাশেম, লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা হ্যাভেন এর প্রেসিডেন্ট লায়ন মাসুম আহমেদ, ব্যাংক এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জাকির হোসেন ভূইয়া, বাংলাদেশ ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলম ইবনে হাই প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল সহযোদ্ধা একাত্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *