এক নজরে গ্রুপ ‘সি’ এর শক্তি ও দুর্বলতা

খেলা স্পেশাল

নভেম্বর ১৯, ২০২২ ৯:১২ পূর্বাহ্ণ

কাতার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে ৩২টি দল। যারা ৮টি গ্রুপে ভাগ হয়ে একে অন্যের বিপক্ষে লড়াই করবে। ফলাফল কি হবে সেটা এখনো অজানা। তবে গ্রুপগুলোর শক্তিমত্তা, দুর্বলতা ও সম্ভাবনার দিকে আলো ফেলা যায়। এসব নিয়েই ডেইলি বাংলাদেশের বিশেষ আয়োজন ‘স্পটলাইট’। আজ থাকছে গ্রুপ ‘সি’।

গ্রুপ ‘সি’ – তে রয়েছে আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, পোল্যান্ড ও সৌদি আরব। এক নজরে দেখা আসা যাক এই গ্রুপ…

আর্জেন্টিনা 
আর্জেন্টিনার কথা মনে পড়লে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল। বিষাদ ভরা চোখে ট্রফিটার দিকে চেয়ে ছিলেন লিওনেল মেসি, যে ট্রফি দেখা দিয়েও চলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০১৮ বিশ্বকাপে কাছাকাছিও যেতে পারেননি। এবারের বিশ্বকাপে তাই মেসির সামনে শেষ সুযোগ স্বপ্নের ট্রফিটা নিজের করে নেয়ার।

এবার কাতারে বেশ ভালো একটা দল নিয়ে পা রেখেছে আর্জেন্টিনা। ২০১৯ সালে কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলকে হারানোর পর টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রেখেছে তারা। এই সময়ে মেসিরা কোপা আমেরিকা জিতেছেন, সেটা ছিল মেসির বড় কোনো ট্রফি। এরপর ফিনালিজিমা জিতে প্রত্যাশার পারদটা আরও বেড়েছে।

আর্জেন্টিনা এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট

আর্জেন্টিনা এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট

শক্তি
এই আর্জেন্টিনার বড় শক্তি তাদের দল হিসেবে ভারসাম্য ও একতা। যদিও মেসি ছাড়া তেমন বড় কোনো তারকা দলে নেই। কিন্তু দল হিসেবে এই দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। আক্রমণ, রক্ষণ কিংবা মধ্যমাঠে পরিপূর্ণ একটি দল। রক্ষণে কুতি রোমেরো, ওটামেন্ডি ও লিসান্দ্রো মার্টিনেজের ওপর অনেকখানি নির্ভর করবে আর্জেন্টিনা। এমিলিয়ানো মার্টিনেজ তো গোলপোস্টের নিচে আছেনই।

মধ্যমাঠেও খুব বড় কোনো তারকা না থাকলেও পারেদেস, ডি পল, পাপু গোমেজরা মৌমাছির মতো উড়ে বেড়ান। লাউতারো মার্টিনেজ ফর্মে আছেন ইন্টারের হয়ে। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া বিগ ম্যাচ খেলোয়াড়। বেঞ্চে যারা আছেন, তারাও ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি জাতীয় দলেও কমবেশি পরীক্ষিত। দিবালার চোট থেকে ফেরা খানিকটা স্বস্তি দেবে স্কালোনিকে।

দুর্বলতা
আর্জেন্টিনার জন্য সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ ছিল লে সেলসোর চোট। টুর্নামেন্টের ঠিক আগে চোট পেয়ে ছিটকে গেছেন এই মিডফিল্ডার। দলে রক্ষণ ও আক্রমণের প্রাণভোমরা ছিলেন তিনি। তার চোট দলে জন্য দুর্বলতা হিসেবেই ধরা হচ্ছে। কেননা তার মানের খেল্লোয়াড় মাঝমাঠে খুব কম আছে। তার অভাব কতটা পূরণ হবে তা নিয়ে আছে সংশয়।

মেক্সিকো 
একটা জায়গায় মেক্সিকো এই বিশ্বকাপ নিয়ে আশাবাদী ও শংকিত দুই হতে পারে। সেই ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপেই তারা শেষ ১৬তে উঠেছে, সেই নকআউটে ওঠার জন্য নিজেদের তারা ফেভারিট ভাবতেই পারে। আবার কোনোবারই তারা শেষ আটে যেতে পারেনি, এদিক থেকে ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতে পারে।

মেক্সিকো দেইতীয় রাউন্ডের নিয়মিত মুখ, তবে হিসাবটা এবার সহজ হবে না

মেক্সিকো দেইতীয় রাউন্ডের নিয়মিত মুখ, তবে হিসাবটা এবার সহজ হবে না

কোচ জেরার্দো টাটা মার্টিনোরও চাপ বাড়ছে। তার ট্যাকটিকস ও দল নির্বাচন নিয়ে মেক্সিকোতে সমালোচনা হচ্ছে অনেক। এমন গুঞ্জনও আছে বিশ্বকাপের পরেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন তিনি। বিশ্বকাপে খেলা দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স তাদের, এটাও একটা চিন্তার কারণ।

শক্তি
মেক্সিকোর মিডফিল্ডে এডসন আলভারেজ ও আক্রমণে হারভিং লোজানো বড় অস্ত্র হতে পারে। প্রেসিং ফুটবল খেলে মেক্সিকো, আর লোজানো এবার নাপোলিতে একই ধাঁচের ফুটবল খেলে বেশ ছন্দে আছেন। আলভারেজ ডিফেন্সিভ মিডে বড় আস্থা। আর গোলপোস্টের নিচে বিশ্বস্ত ওচোয়া তো আছেনই। যিনি বিশ্বকাপ এলে হয়ে ওঠেন অতিমানব।

দুর্বলতা
নিয়মিত স্ট্রাইকার রাউল হিমেনেজ স্কোয়াডে আছেন। তবে এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি চোট থেকে। তার খেলতে না পারা বড় আঘাত হবে মেক্সিকোর জন্য। আরেকটা চিন্তার কারণ হতে পারেন টুর্নামেন্টে থেকে ছিটকে যাওয়া জেসুস করোনা।

পোল্যান্ড 
পোল্যান্ডের সবচেয়ে বড় তারকা রবার্ট লেভানদোভস্কি। পোল্যান্ড বিশ্বকাপে একদম অনিয়মিত নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত গ্রুপ পর্বের বাধা পার হওয়া হয়নি। নেশন্স লিগে বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের সাথে খুব ভালো না করলেও ওয়েলসকে টপকে তৃতীয় হয়েছে পোলিশরা। এবার তারা শেষ ষোলকে পাখির চোখ করবে।

রবার্ট লেভানদোভস্কিকে ঘিরেই আক্রমণের ছক কষবে পোল্যান্ড

রবার্ট লেভানদোভস্কিকে ঘিরেই আক্রমণের ছক কষবে পোল্যান্ড

শক্তি
রবার্ট লেভানদোভস্কি এই দলের বড় নাম। গোল যার কাছে পানির মতো সহজ জিনিস। তবে বিশ্বকাপে অবশ্য এখনো মনে রাখার মতো কিছু করতে পারেননি। তবে এবার পোলিশদের ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন নাপোলির হয়ে দারুণ ফর্মে থাকা পিওতর জিলেন্সকি।

দুর্বলতা
চোটের জন্য দলটাকে এখনো থিতু করতে পারেননি কোচ। প্রশ্ন আছে বেশ কিছু সিনিয়র প্লেয়ারের ফিটনেস নিয়ে। বেশ কিছু খেলোয়াড় সেরা সময় পেছনে ফেলে এসেছেন। তারপরও তারা আছেন দলে। বিশ্বকাপে তারা কেমন করবেন তা নিয়ে আছে প্রশ্ন।

সৌদি আরব
এই গ্রুপের সম্ভবত সবচেয়ে দুর্বল দল। বিশ্বকাপে এশিয়া থেকে তারাও মোটামুটি নিয়মিত। বাছাইপর্বও পার হয়েছে ভালোভাবেই। তবে বিশশ্বকাপ থেকে তাদের অর্জন বলতে ১৯৯৪ সালে সাইদ আল ওয়াহরাইনের সেই অবিশ্বাস্য গোল। এবারের দলটাকে কোচ হার্ভে রেনার্ড চেনেন খুব ভালোমতোই।

চেনা কন্ডিশনে সৌদি আরব যেকোনো দলের জন্যই হয়ে উঠতে পারে মাথা ব্যথার কারণ

চেনা কন্ডিশনে সৌদি আরব যেকোনো দলের জন্যই হয়ে উঠতে পারে মাথা ব্যথার কারণ

শক্তি
দুই ফরোয়ার্ড আল দাউসারি ও সামি আল নাজেই গতি দিয়ে চমকে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে। লো ব্লকে খেলে বলে সৌদিদের বিপক্ষে গোল পাওয়াটাও বড় একটা চিন্তার কারণ হবে অন্য দলগুলোর।

দুর্বলতা
ইউরোপিয়ান ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতা তেমন কারও নেই, এটা একটা চিন্তার কারণ হতে পারে। কাউন্টার অ্যাটাকর্নিভর খেলা বলে গোল পাওয়াটাও তাদের জন্য সহজ নয়।

প্রেডিকশন: আর্জেন্টিনা ও পোল্যান্ড পরের রাউন্ডে যাবে। এরপর মেক্সিকো ও সৌদি আরবের হিসেবনিকেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *