‘আসকে আমার মন ভালো নেই’ নেপথ্যে কে এই উৎস?

বিনোদন স্পেশাল

জুন ৩০, ২০২২ ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত সংলাপ ‘আসকে (আজকে) আমার মন ভালো নেই’। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার এ সংলাপের মূল বিষয়বস্তু ‘মন ভালো নেই’ হলেও ‘মন ভালো’ করতেই এটির বিনিময় শুরু করেছেন অনেকেই। বন্ধুদের আড্ডা কিংবা ফেসবুকের ক্যাপশন, সব জায়গাতেই এ কথার ছড়াছড়ি। এমনকি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার খাতায়ও এক ছাত্র লিখেছেন- ‘স্যার আমার মন ভালো নেই’। যা এরই মধ্যে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।

দেশ-বিদেশে আলোচিত এ সংলাপের নির্মাতা চট্টগ্রামের সন্তান কাজী হান্নান আহমেদ উৎস। তিনি থাকেন নগরের দেওয়ানবাজার এলাকায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উৎস’র আরেক পরিচয় ‘কাশেম’। এলাকার এক ব্যক্তির কণ্ঠ নকল করেই সংলাপ সাজান উৎস। যার নাম কাশেম। সেখান থেকেই তাকে কাশেম নামে অভিহিত করেন অনেকে।

ছোটবেলা থেকেই বেশ দূরন্ত ছিলেন উৎস। উচ্চমাধ্যমিকের পর সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও কোথাও মন বসেনি তার। সবশেষে ভর্তি হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেও মনোনিবেশ করতে না পারায় শেষমেশ বেছে নেন অনলাইন জগতকে। শুরু করেন মজাদার সংলাপ তৈরির কাজ। আর এতেই মেলে সাড়া। তার বেশকিছু জনপ্রিয় সংলাপের মধ্যে রয়েছে- প্রমাণ আছে, রং মিস্ত্রি শইপ্প্যে, তৈ আই কিত্তাম ইত্যাদি।

‘প্র্যাংক কল’কে কনটেন্ট হিসাবে বেছে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে কাজী হান্নান আহমেদ উৎস বলেন, ছোটবেলা থেকেই মানুষের কণ্ঠ নকল করার চেষ্টা করতাম। এরই ধারাবাহিকতায় বছর দুয়েক আগে এলাকার এক পানরসিক লোকের কণ্ঠ নকল করে ‘প্রমাণ আছে’ নামে একটি কনটেন্ট তৈরি করি। যেটি ছিল আমার প্রথম কনটেন্ট। এরপর সেটি ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করি। সেই অডিওটি এত বেশি ভাইরাল হবে তা বুঝতে পারিনি। মূলত এরপর থেকেই বন্ধুদের উৎসাহে প্র্যাংক কলের জগতে প্রবেশ করি।

তিনি বলেন, যখন আমার প্রথম কনটেন্ট ‘প্রমাণ আছে’কে অনেকে নিজেদের ফেসবুক পেজ বা ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড দিতে শুরু করে, তখন ভেবেছিলাম এটি এমনিতে ভাইরাল হয়েছে। এরপর ‘তৈ আই কিত্তাম’ নামে আরেকটি কনটেন্ট তৈরি করি। সেটিও বেশ ভাইরাল হয়। কিন্তু যখন দেখলাম এ ভাইরাল কনটেন্টগুলো কেউ কেউ আবার নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলে তাদের ক্রেডিট দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছে, তখন আমি নিজেও একটি চ্যানেল তৈরি করি। সেই থেকে ‘চিটাইংগে টিভি’র যাত্রা। যা এখন পর্যন্ত ভালোই চলছে।

উৎস বলেন, শুরুতে একটি পার্টটাইম জব করার চেষ্টা করেছিলাম। এরপর সেটি ছেড়ে নিজে ব্যবসা করার চিন্তা করতে করতেই মাঝখানে চলে এলো ইউটিউবের বিষয়টি। এরপর আর ব্যবসার দিকে যাওয়া হয়নি। এখানেই আপাতত ভালো আছি। ভবিষ্যতেও ইউটিউব নিয়ে থাকতে চাই।

উৎস জানান, বর্তমানে তার ইউটিউব চ্যানেল ‘চিটাইংগে টিভি’র সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। এর মধ্যে এক লাখ সাবস্ক্রিপশনের জন্য ইউটিউব কর্তৃপক্ষ থেকে পেয়েছিলেন সিলভার-প্লে বাটন। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০টি কনটেন্ট আপলোড করা হয়েছে চ্যানেলটিতে। এর মধ্যে একাধিক রেকর্ড বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিছু কিছু কনটেন্ট দেশের বাইরেও দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।

প্র্যাংক কল-এ মূলত মানুষকে বোকা বানানোর কাজটিই করে থাকেন উৎস। আর এ বোকা হওয়া মানুষগুলো কারা- সে প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত প্রকাশিত প্রায় সব প্র্যাংক কলই তাদের নিজেদের বানানো। আর এতে প্রথম থেকেই তার বিপরীতে কণ্ঠ দেন আত্মীয় ফাহাদ বিন ওয়াহিদ সাকিব। এছাড়া অন্যান্যগুলোতে দু-একজন বন্ধু কণ্ঠ দেন।

প্র্যাংক কলগুলোতে স্ল্যাং বা কটুকথা ব্যবহারের প্রসঙ্গে উৎস বলেন, আমরা চট্টগ্রামের মানুষজন একটু গালাগালি করি। তবে বর্তমানে আমরা এসব ছাড়াই কল রেকর্ড তৈরি করছি। কারণ প্রথমদিকে আমাদের দর্শক ছিল যুবকরা। কিন্তু এখন আমার বাবাসহ সমাজের সব শ্রেণির মানুষ এসব রেকর্ড শোনেন। তাই সবার কথা চিন্তা করে স্ল্যাং শব্দগুলো বাদ দিচ্ছি।

প্র্যাংক কল ছাড়াও একটি ওয়েব সিরিজ নিয়ে কাজ করছেন উৎস। সম্প্রতি ‘ডরাইল্ল্যা ভূত’ নামে নাটকটির শুটিং শেষ হয়েছে। যেটি ঈদের সপ্তম দিন তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *