আন্তঃব্যাংকে বিদেশি ৫ মুদ্রার তাৎক্ষণিক লেনদেন চালু

অর্থনীতি স্লাইড

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

দেশে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন চালু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট বা আরটিজিএসের মাধ্যমে এ লেনদেন অনলাইনে নিষ্পত্তি হবে। প্রাথমিকভাবে মার্কিন ডলার, পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরো, কানাডিয়ান ডলার ও জাপানের ইয়েন এ পদ্ধতিতে ক্লিয়ারিং ও নিষ্পত্তি করবে ব্যাংকগুলো।

রোববার এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, এমসিসিআই সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আরটিজিএস ব্যবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রায় অটোমেটেড ক্লিয়ারিং বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এভাবে ধারাবাহিক আধুনিকায়নের মাধ্যমে একটি ক্যাশলেস বেসড সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে সব ব্যাংক ও ব্যবসায়ী সংগঠন সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।

উদ্বোধনের দিন এ ব্যবস্থায় ৫২টি লেনদেন নিষ্পন্ন হয়। আরটিজিএস ব্যবস্থাটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় ক্লিয়ারিং ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হবে, চেক বা এফডিডি নিয়ে ক্লিয়ারিংয়ের জন্য কোনো ব্যাংকের প্রতিনিধিকে আর সশরীরে উপস্থিত হতে হবে না। এর ফলে চেক বা এফডিডি ড্যামেজ হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত ঝুঁকি এবং প্রতারণা বা জালিয়াতির সুযোগ আর থাকবে না।

এছাড়া এফডিডি ক্লিয়ারিংয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতো এখন তা তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তি হবে। আরটিজিএম ব্যবস্থায় দেশীয় মুদ্রায় লেনদেন সীমা এক লাখ টাকা হলেও বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে তা নির্বিশেষে যেকোনো পরিমাণ হওয়ার কারণে লেনদেনের আওতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে। ফলে আরটিজিএস ব্যবস্থায় দেশের অভ্যন্তরে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন নিষ্পত্তির কার্যক্রম চালু করার কারণে এক দিকে যেমন এ সংক্রান্ত লেনদেন নিষ্পত্তি সহজ, তাৎক্ষণিক ও ব্যয় সাশ্রয়ী হবে; অন্য দিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও ত্বরান্বিত হবে।

দেশে এতদিন মার্কিন ডলার, যুক্তরাজ্যের পাউন্ড, ইউরো, কানাডার ডলার ও জাপানের ইয়েন এই পাঁচটি বিদেশি মুদ্রা কাগজ-কলমভিত্তিক সনাতন লেনদেন ব্যবস্থায় নিষ্পত্তি হতো। এ পদ্ধতিতে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের সঙ্গে কাগুজে নথি ব্যবহার করে ব্যাংকের কর্মকর্তারা হাজির হয়ে লেনদেন নিষ্পত্তি করে থাকেন। এতে সময় ও ব্যয় বেশি লাগত। তবে এখন থেকে আরটিজিএস পদ্ধতিতে ঝামেলা ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে লেনদেন নিষ্পত্তি করতে পারবে ব্যাংকগুলো। পাঁচটি বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে চীনা মুদ্রা ইউয়ান লেনদেন করা যাবে।

এর আগে গত ২৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। এতে বলা হয়, এ পদ্ধতিতে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য একটি বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব খুলতে হবে। এখান থেকে কেবল ডলারের বিপরীতে ডলারে, ইউরোর বিপরীতে ইউরো-এভাবে লেনদেন নিষ্পত্তি করা যাবে। যেকোনো অঙ্কের লেনদেন নিষ্পত্তিতে কোনো বাধা নেই।

একটি লেনদেনে ব্যাংক সর্বোচ্চ ১০০ টাকা চার্জ নিতে পারবে। বৈদেশিক মুদ্রায় আন্তঃব্যাংক তারল্য সুবিধা নেওয়া যাবে না। লেনদেন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে গাইডলাইনস ফর ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশন (জিইএফটি) মেনে চলতে হবে। এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকে অর্থ পাঠানোর পর সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যে সুবিধাভোগীর হিসাবে অর্থ দিতে হবে।

দেশে ২০১৫ সাল থেকে চালু হওয়া আরটিজিএসে থেকে যেকোনো অংকের অর্থ পরিশোধ নিষ্পত্তিতে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ড সময় লাগে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ১১ হাজার শাখার বেশির ভাগই এ ব্যবস্থায় যুক্ত রয়েছে। গত জুলাইতে ৬ লাখ ২৩ হাজার লেনদেনের বিপরীতে চার লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা নিষ্পত্তি হয়েছে। গত জুন থেকে যুক্ত হয়েছে ১৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *