আজ হুমায়ূন আহমেদকে হারানোর ১০ বছর

শিল্প ও সংস্কৃতি

জুলাই ১৯, ২০২২ ১২:২৮ অপরাহ্ণ

জীবদ্দশায় নিজের মৃত্যু নিয়ে `ব্ল্যাক হিউমার’ করে নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে জ্যোৎস্না থাকবে, টিনের চালে ঝমঝম বৃষ্টি থাকবে, বর্ষায় কদম ফুল ফুটবে, উথাল–পাতাল দখিনা হাওয়া থাকবে, আর আমি থাকব না, তা–ই কি হয়?’ কিন্তু হয়েছে।

প্রকৃতিতে এখন শ্রাবণ মাস। হুমায়ূন আহমেদ নেই। পৃথিবীর আর কোনও শ্রাবণ পাবে না তাকে কোনদিন!  ২০১২ সালের ১৯ জুলাই হুমায়ূন আহমেদ তার প্রিয় জ্যোৎস্না, বৃষ্টি, কদম ফুল আর দখিনা বাতাস রেখে চলে গেছেন।  বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। দিনটি উপলক্ষে নুহাশপল্লীতে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হবে। টিভি চ্যানেলগুলোতেও থাকছে হুমায়ূন আহমেদের নাটক, চলচ্চিত্র, গান ও সাহিত্য নিয়ে দিনভর বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হুমায়ূন আহমেদ। ২০১২ সালের ২৩ জুন নিউ ইয়র্ক থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। ২৪ জুন তাকে সমাহিত করা হয় তার গড়ে তোলা নন্দনকানন নুহাশ পল্লীর লিচুতলায়। গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে তাকে সমাহিত করা হয়।

জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে নুহাশপল্লীর আশপাশের কয়েকটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নুহাশপল্লীতে কোরআন তেলাওয়াত করবেন। পরে তারা কবর জিয়ারত ও দোয়ায় অংশ নেবেন। দুপুরে মিলাদ মাহফিল শেষে এতিম শিশু ও শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে।  নুহাশপল্লীতে উপস্থিত থাকবেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিত।এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের লোকজন, ভক্ত, বন্ধুরা কবর জিয়ারত ও মিলাদে যোগ দেবেন। প্রতি বছরের মতো এবারও হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত পাঠকরা প্রিয় লেখকের কবর জিয়ারত ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে নুহাশপল্লীতে আসবেন।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা ছিলেন গৃহিনী। তিন ভাই দুই বোনের মাঝে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।

তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, ফেরা, প্রিয়তমেষু, আকাশ জোড়া মেঘ, সাজঘর, এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, বহুব্রীহি, নীল অপরাজিতা, আশাবরী, জলপদ্ম, কৃষ্ণপক্ষ, জনম জনম, মন্দ্রসপ্তক, তিথির নীল তোয়ালে, অমানুষ, অন্যদিন, চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক, আগুনের পরশমণি, জোছনা ও জননীর গল্প এবং দেয়াল। হুমায়ূনের ভিন্নধর্মী দুটি চরিত্র হিমু ও মিসির আলি বাংলা সাহিত্যে পেয়েছে স্থায়ী আসন। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়াও  পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮)।

হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও নয় নম্বর বিপদ সংকেত, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি। হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তার টেলিভিশন নাটকগুলো ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশি না হলেও তার রচিত গানগুলোও বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে তিনি আর আসবেন না। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন হে নন্দিত কথাকার।

উল্লেখ্য, জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছে পনের মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *