নিজস্ব প্রতিবেদক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অতিথি পাখিদের কলতান জানান দিচ্ছে, শীত চলে এসেছে।সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া এবং নেপাল থেকে আগত অতিথি পাখিরা ক্যাম্পাসের লাল শাপলায় পূর্ণ লেকের পানিতে জলকেলি, ডানাঝাপটানি খুঁনসুটিতে মেতে উঠেছে। আকাশও দখলে তাদের; ডানা মেলে উড়ছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
সবচেয়ে বেশি পাখির দেখা মিলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরের পেছনের লেকটিতে। এই লেকের শত সহস্র পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেছা হলের শিক্ষার্থীদের। এমনটাই বলছিলেন, এই হলের শিক্ষার্থীরা।
ছুটির দিনগুলো অতিথি পাখিদের দেখতে লেকের পাড়ে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। খুব কাছ থেকে এসব পাখি দেখে মুগ্ধ হন তারা।
অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে হালকা শীতের আবহে জাবি ক্যাম্পাসে এসব পরিযায়ী পাখির আসা শুরু হয়। মাঘের শেষ পর্যন্ত থাকে তাদের এই পদচারণা। ক্যাম্পাসের গাছপালায় ঢাকা সবুজ প্রকৃতি আর পাখির খাদ্য ও বসবাস উপযোগী জলাশয়গুলোও যেন বরণ করে নেয় অতিথি পাখিদের। তাই শীতকালে এই জলাশয়গুলোকেই নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিচ্ছে তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে ১৯৮৬ সালে প্রথম পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করে। আগে দেশি-বিদেশি মিলে ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মিলতো। তবে এখন দেশি প্রজাতির সংখ্যাই বেশি।
পাখি বিশেষজ্ঞ ও জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, “এদেশে যখন আরামদায়ক ঠাণ্ডা, তখন শীতপ্রধান দেশগুলোতে রক্ত জমিয়ে দেওয়ার মতো ঠাণ্ডা পড়ে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে সেখানকার পানি ও মাটি বরফ-তুষারে ঢেকে যায়।
“এমন বৈরী পরিবেশে প্রচণ্ড খাদ্যাভাব ও আবাসের সংকট দেখা দেয়। তাই নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে পাখিগুলো নিজের দেশ ছেড়ে বাংলাদেশের মতো তুলনামূলক উষ্ণ আর আরামদায়ক কোনো দেশে পাড়ি জমায়।”
এসব পাখিরা মূলত সাইবেরিয়া, চীনের জিনজিয়াং, মঙ্গোলিয়া ও নেপাল থেকে আসে বলে জানান তিনি।
এই পাখি বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, “অন্যান্য বছরে সেপ্টেম্বর মাস থেকেই পাখি আসতে শুরু করে, এ বছর একটু দেরিতে আসতে শুরু করেছে। জলবায়ু পবিবর্তনের প্রভাব ও শীত কম থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে। তবে শীত বাড়লে আরও অতিথি পাখি আসবে বলে আমরা আশাবাদী।”