৮৬ তলা থেকে লাফ দিয়েও যেভাবে প্রাণে বেঁচে যান তরুণী

৮৬ তলা থেকে লাফ দিয়েও যেভাবে প্রাণে বেঁচে যান তরুণী

ফিচার স্পেশাল

নভেম্বর ১৬, ২০২২ ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে উঠেছিলেন এলভিটা অ্যাডামস নামে এক তরুণী। ৮৬ তলা থেকে ঝাঁপও দিয়েছিলেন। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। কীভাবে তা সম্ভব হলো?

আত্মহত্যা করতে অসফল হলেও রাতারাতি শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিলেন আমেরিকার ব্রঙ্কসের বাসিন্দা এলভিটা। সংবাদমাধ্যমের দাবি, এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পরে ২৯ বছরের এলভিটাই একমাত্র মানুষ, যিনি প্রাণে বেঁচে ফিরেছিলেন।

কিন্তু কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন এলভিটা? আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে সে কাহিনিই শোনা গিয়েছিল। যা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯৭৯ সালের ২ ডিসেম্বরের রাতে।

মাস কয়েক হলো চাকরি খুইয়েছেন এলভিটা। সরকারি অনুদানের সামান্য অর্থে সংসার চলত না তার। প্রতি মাসে ১০০ ডলারের ওয়েলফেয়ার চেক হাতে পেলেও তা যথেষ্ট নয়। ১০ বছরের শিশুপুত্রের মুখে অন্ন জোগাবেন কীভাবে, সে চিন্তায় দিনরাত এক হয়ে যেত এলভিটার।

বাড়িভাড়া বাকি থাকায় প্রায়ই বাড়ির মালিকের হুমকি শুনতে হতো এলভিটাকে। ভাড়া না মেটালে শিশুপুত্রসহ তাকে বাড়িছাড়া করার হুমকিও দিতেন। সংসারের অনটনে অবসাদে ডুবে যেতে শুরু করেছিলেন এলভিটা।

ডিসেম্বরের ওই শীতের সন্ধ্যায় হাজারো চিন্তা মাথায় নিয়ে ভাড়াবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন এলভিটা। ব্রঙ্কস থেকে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গিয়েছিলেন নিউইয়র্কের মিডটাউন ম্যানহাটনের অভিজাত এলাকায়। সে প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার পথ।

শনিবারের সেই সন্ধ্যায় এ রাস্তা সে রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে এলভিটা গিয়ে পৌঁছান এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের সামনে। এলোমেলো ভাবে হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়ান বিল্ডিংয়ের প্রবেশদ্বারে। সে রাতেই এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দেন এলভিটা।

পরে অবশ্য তার দাবি ছিল, আলোয় ভরা ম্যানহাটনে দেখতেই ব্রঙ্কস থেকে সেখানে গিয়েছিলেন। তার বিখ্যাত উক্তি ছিল, ‘কী সুন্দর (আলো)! আমি হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিলাম।’ যদিও আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের পাল্টা দাবি, আত্মঘাতী হতেই ওই বিল্ডিংয়ের ৮৬ তলায় উঠেছিলেন এলভিটা।

ম্যানহাটনের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে মোট ১০২ তলা রয়েছে। উচ্চতায় যা ১,২৫০ ফুট। এর ৮৬ তলায় রয়েছে অবজারভেটরি ডেক। যেখান থেকে ঝাঁপ দেন এলভিটা।

যদিও এলভিটাই প্রথম নন। ১৯৩১ সালে নির্মিত এই বিল্ডিং থেকে আরও ৩০ জন ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়েছিল। বস্তুত, ১৯৩১ সালে এই বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগে এক ব্যক্তি এর ৫৮ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে আরও একটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়েছিল। এলভিটার মতোই ৮৬ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন ইভলিন ম্যাকহেল নামে এক তরুণী। তবে তা ছিল ১৯৪৭ সালের ১ মে।

৫৮ তলা থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পর এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড় করানো একটি লিমুজিন গাড়ির ছাদে গিয়ে পড়েন ইভলিন। সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় ওপার থেকে ছুটে এসে নিথর দেহটির ছবি তুলেছিলেন রবার্ট ওয়াইসল নামে এক ফটোগ্রাফার। লিমুজিনের উপর গ্লাভস ও মুক্তার মালা পরে যেন ঘুমিয়ে ছিলেন ইভলিন। আমেরিকার একটি নামজাদা পত্রিকা একে ‘সবচেয়ে সুন্দর আত্মহত্যা’ বলে তকমা দিয়েছিল।

ইভলিনের মতো খ্যাতি পেয়েছিলেন এলভিটাও। তবে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দিয়ে একমাত্র মানুষ হিসাবে প্রাণে বেঁচে যাওয়ার জন্য। ২ ডিসেম্বর, শনিবার রাত ৮টা নাগাদ এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের অবজারভেটরি ডেকে পৌঁছেছিলেন এলভিটা। এর আগেও সেখান থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন অনেকে। ফলে সেখানে ৮ ফুটের কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া ছিল।

সংবাদমাধ্যমের দাবি, সাধারণত অবজারভেটরি ডেকে জনা চারেক নিরাপত্তারক্ষী পাহারা দেন। তবে ঘটনার দিন নাকি সেখানে কেউ ছিলেন না। রক্ষীহীন ৮৬ তলায় পৌঁছে ঝাঁপ দিয়েছিলেন এলভিটা। তারপর?

ঝাঁপ দিলেও একেবারে নীচে পড়েননি এলভিটা। উল্টে তিনি গিয়ে পড়েন নীচের তলার অর্থাৎ ৮৫ তলার একটি ৩ ফুটের কার্নিশের উপর। ২০ ফুট নীচের ওই কার্নিশে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন এলভিটা। তবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

এলভিটার গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন জর্জ রাইস নামে বিল্ডিংয়ের এক রক্ষী। যদিও অনেকের দাবি, তার নাম ছিল ফ্র্যাঙ্ক ক্লার্ক। নাম যা-ই হোক না কেন, এলভিটাকে উদ্ধার করেছিলেন ওই রক্ষী। তিনিই আহত এলভিটাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন।

ঘটনাটিকে আশ্চর্যজনক বলে আখ্যা দিয়েছিল সংবাদমাধ্যম। তাদের দাবি, হাওয়ার ধাক্কায় এলভিটা গিয়ে পড়েছিলেন নীচের তলার কার্নিশে। তবে তা কীভাবে সম্ভব? সে রাতে নাকি প্রতি ঘণ্টায় ৩৭ থেকে ৬১ কিলোমিটার গতিতে হাওয়া বইছিল। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, অত উঁচুতে হাওয়ার গতি ঘণ্টায় ১৭৭ কিলোমিটার পৌঁছতে পারে।

এলভিটা যে আত্মহত্যা করতেই এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে উঠেছিলেন, তেমনই দাবি করেছিল পুলিশ। তাদের দাবি, সে কারণেই অবজারভেটরি ডেকের কাঁটাতারের বেড়া টপকেছিলেন এলভিটা।

ঘটনার পর হাসপাতালের বিছানায় কোমরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে চোখ মেলেছিলেন এলভিটা। সেখানকার হাড় ভেঙে গিয়েছিল তার। যদিও তখনও বুঝতে পারেননি, কীভাবে বেঁচে গেলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *