৪০ বছর পর সিরিয়াল ধর্ষক শনাক্ত, শিকার ৩১ নারী

৪০ বছর পর সিরিয়াল ধর্ষক শনাক্ত, শিকার ৩১ নারী

ফিচার স্পেশাল

নভেম্বর ২৩, ২০২২ ৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে চার দশক ধরে ত্রাশ সৃষ্টি করা এক সিরিয়াল ধর্ষককে শনাক্ত করেছে দেশটির পুলিশ। খবর বিবিসির

সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, প্রায় চার দশক আগে তার প্রথম শিকার হয়েছিলেন এক নারী। এরপর ধারাবাহিকভাবে এই অপকর্ম করে গেছেন তিনি। ১৯৮৫-২০০১ সাল পর্যন্ত তার শিকার হন ৩১ নারী। তার নাম কেইথ সিমস। কখনো বাড়িতে ঢুকে নারীর ওপর আক্রমণ করেছেন, আবার বাইরে হাঁটতে বের হওয়া নারীরাও তাঁর পাশবিকতার শিকার হয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল, একাধিক পুরুষ এই কাজ করেছে। কিন্তু নতুন ডিএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার করে দেশটির তদন্তকারী কর্মকর্তারা এখন জানতে পেরেছেন, এসব ঘটনায় কেইথ সিমসই জড়িত ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ৬৬ বছর বয়সে মারা যান সিমস। এই ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে ‘বন্দাই বিস্ট’ কিংবা ‘ট্র্যাকস্যুট রেপিস্ট’ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। সিমসের হাতে প্রথম এক নারী আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৯৮৫ সালে কোভেলি নামে সমুদ্রতীরবর্তী একটি শহরের উপকণ্ঠে।

এসব ঘটনা যখন ঘটেছিল তখন এসব ঘটনার প্রত্যেকটির তদন্ত করা হয়েছিল। তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব ঘটনার মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজতে শুরু করেন এ শতকের প্রথম দশক থেকে। আক্রান্ত ১২ নারীর কাছ থেকে সংগৃহীত ডিএনএ একই পাওয়া যায়। আরও ২৯টি ঘটনায়ও আক্রমণকারীকেই একই কায়দায় অপকর্ম করতে দেখা যায়।

আক্রান্ত এসব নারীর বয়স ১৪ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। তারা প্রত্যেকেই হামলাকারীর একই বর্ণনা দিয়েছেন। বলেছেন, হামলাকারী ১৬০ থেকে ১৮০ সেন্টিমিটার লম্বা ছিলেন। তার গায়ের রং কালো, চোখ বাদামি আর নাক ছিল চওড়া। তারা আরও জানান, হামলাকারী মুখ ঢেকে রাখতেন, সাধারণ পোশাক পরতেন। যেমন ট্র্যাকস্যুট, হুডি বা ফুটবল শর্টস। তিনি বেশির ভাগ সময় ছুরি দিয়ে হামলার হুমকি দিতেন অথবা বলতেন, তার কাছে অস্ত্র আছে।

২০১৯ সালে এসে এসব হামলার ঘটনা নিয়ে তদন্ত নতুন মোড় নেয়। তদন্তকারী কর্মকর্তারা পুলিশের একটি ডেটাবেজে পরিচিত একটি ডিএনএর নমুনা খুঁজে পান। এতে করে এসব ঘটনার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তারা যেসব ব্যক্তিকে এত দিন ধরে সন্দেহ করছিলেন সে সংখ্যাটা কমে ৩২৪ জনে নেমে আসে। গত সেপ্টেম্বরে সিমসের ডিএনএর একটি নমুনা আক্রান্ত নারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ডিএনএ নমুনার সঙ্গে মিলে যায়।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, নিজ পরিবার ও বন্ধুবান্ধবরা সিমসকে একজন চমৎকার বাবা, দাদা এবং ভাল একজন মানুষ হিসাবেই বর্ণনা করেছে। যে গোয়েন্দা কর্মকর্তা সিমসের পরিবারের কাছে খবরটি দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, ‘তার (সিমস) পরিবারের মানুষরা বিস্মিত হয়েছেন। সিমস এমন কাজ করতে পারেন, তারা তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না।’

গোয়েন্দা কর্মকর্তা সার্জেন্ট শেলী জোনস ডেইলি টেলিগ্রাফকে বলেছেন, ‘আমরা তার (সিমস) স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এটা শুনে তিনি মুষড়ে পড়েন। তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি, যে মানুষটিকে জানতেন তিনি এসব কাজ করতে পারেন।’

তদন্তকারীরা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়েছেন যে, তাদের আক্রমণকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তিনি মারা যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *