হজের পাঁচ দিনের ধারাবাহিক কার্যাবলি

ধর্ম

জুন ১৯, ২০২২ ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

হজের প্রথম দিন

[মিনার উদ্দেশে যাত্রা]

৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত এই পাঁচ দিনকে হজের দিন বলা হয়। আপনি যদি তামাত্তু হজ পালনকারী হয়ে থাকেন তাহলে আজ আগের মতো আবার ইহরাম বেঁধে নিন। তারপর এভাবে ইহরামের নিয়ত করুন : ‘হে আল্লাহ আমি তামাত্তু হজ করতে ইচ্ছা করেছি, আপনি এ হজ আমার জন্য সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে কবুল করুন।’ নিয়তের সঙ্গে সঙ্গে তিনবার তালবিয়া একটু উচ্চস্বরে পড়ুন। (মহিলারা নীরবে পড়ুন)। যারা কিরান বা ইফরাদ হজ পালন করার নিয়ত করেছেন, তারা তো আগে থেকেই ইহরামের অবস্থায় আছেন, কাজেই নতুন করে ইহরাম বাঁধতে হবে না। ৮ জিলহজ সকালে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন। আজকের জোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং ৯ জিলহজের ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করা এবং রাতে মিনায় অবস্থান করা সুন্নাত।

হজের দ্বিতীয় দিন

[আরাফায় অবস্থান]

হজের দ্বিতীয় দিন ৯ জিলহজ আরাফায় অবস্থান ফরজ। ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফার ময়দানের দিকে রওনা করতে হয়। প্রয়োজনে ফজরের আগে রাতেও আরাফার উদ্দেশে রওনা করা যাবে। আরাফার ময়দানে দুপুর ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। আরাফার ময়দানে দোয়া কবুল হয়। সুতরাং এ সময় সবাইকে দোয়ায় মগ্ন থাকা উচিত। আরাফার ময়দানে জাবালে রহমতের কাছাকাছি অবস্থান করা ভালো। জোহর এবং আসরের নামাজ মসজিদে নামিরায় জামাতের সঙ্গে নির্দিষ্ট শর্তানুসারে আদায় করা উত্তম। তবে ওই জামাতে শরিক হওয়া সম্ভব না হলে যথাসময়ে জোহরের ওয়াক্তে জোহর এবং আসরের ওয়াক্তে আসর নিজ নিজ তাঁবুতে আজান-ইকামতসহকারে জামাতের সঙ্গে পড়ুন।

মুজদালিফায় অবস্থান

মিনা ও আরাফার মাঝখানে অবস্থিত ময়দানের নাম মুজদালিফা। এখানে ১০ জিলহজ রাত (৯ জিলহজ দিবাগত রাত) অতিবাহিত করা হাজিদের জন্য জরুরি। মুজদালিফায় পৌঁছে এশার ওয়াক্ত হলে এক আজান ও এক ইকামতে প্রথমে মাগরিবের ফরজ তারপর এশার ফরজ পড়ুন এরপর মাগরিবের ও এশার সুন্নাত এবং বেতর পড়ুন। মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ার পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান ওয়াজিব। এ রাতে জাগ্রত থাকা ও ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া মোস্তাহাব।

হজের তৃতীয় দিন

[পাথর নিক্ষেপ, কুরবানি, চুল মুণ্ডন ও তাওয়াফ]

হজের তৃতীয় দিন ১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর এ দিনের চারটি কাজ ধারাবাহিকভাবে পালন করতে হবে-

পাথর নিক্ষেপ করা : এই দিনের প্রথম কাজ হলো জামারায় আকাবায় গিয়ে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)। এটাকে জামারাতুল কুবরাও বলা হয়, আবার ‘বড় শয়তান’ বলেও প্রসিদ্ধ আছে। মিনায় পাথর নিক্ষেপের তিনটি স্থান রয়েছে। আগে ওই তিনটি স্থানে তিনটি স্তম্ভ বা পিলার ছিল বর্তমানে পিলারের জায়গায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য উঁচু দেওয়াল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, হাজি সাহেবদের সুবিধার জন্য নিচতলা, দ্বিতীয় তলায় এবং তৃতীয় তলায় রাস্তা করা হয়েছে। যাতে একই সঙ্গে অসংখ্য লোক পাথর নিক্ষেপ করতে পারেন। পাথর নিক্ষেপের নিয়ম হচ্ছে-পাথর নিক্ষেপের সময় মিনাকে ডান দিকে রেখে দাঁড়ান। তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা পাথর ধরে নিক্ষেপ করুন। প্রথম পাথর নিক্ষেপের পূর্বমুহূর্ত থেকে তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিতে হবে। পাথর নিক্ষেপের সময় বলুন : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।

কুরবানি করা : এই দিনের দ্বিতীয় কাজ হলো দমে শোকর বা হজের শোকরিয়া স্বরূপ কুরবানি করা (ওয়াজিব)। নিজ হাতে করুন কিংবা কাউকে পাঠান; কিন্তু জবেহ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হোন। কিরান ও তামাত্তু হজ পালনকারীদের জন্য এটা ওয়াজিব। আর ইফরাদ হজ পালনকারীদের জন্য মুস্তাহাব। মিনায় কুরবানি করতে না পারলে মক্কা শহরেও কুরবানি করে নিতে পারেন।

চুল মুণ্ডন বা কর্তন করা : এই দিনের তৃতীয় কাজ হলো হলক বা কসর করা। (চুল মুণ্ডন বা কর্তন) এটি ওয়াজিব। কুরবানি করার পর পুরো মাথার চুল মুণ্ডন করে ফেলুন। মুণ্ডনকারীদের জন্য হুজুর পাক (সা.) তিনবার দোয়া করেছেন। তাই এতে ফজিলত বেশি।

তাওয়াফে জিয়ারত : এ দিনের চতুর্থ কাজ হলো তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ) একে ‘তাওয়াফে ইফাযা’ও বলা হয় : এটা হজের শেষ রুকন। মিনায় উপরোক্ত কাজগুলো সেরে হাজিগণ মক্কা শরিফে গিয়ে তাওয়াফ-ই-জিয়ারত করবেন। এ তাওয়াফে ইজতিবা নেই। ১০ তারিখে সম্ভব না হলে ১১ বা ১২ তারিখের সূর্যাস্তের আগে অবশ্যই এ তাওয়াফ করতে হবে। যারা মক্কা থেকে ৮ জিলহজ আসার আগে একটি নফল তাওয়াফের সঙ্গে সায়ী করে আসেনি তাওয়াফে জিয়ারতে তাদের অবশ্যই সায়ী করতে হবে। তাওয়াফে জিয়ারতের কোনো বদলা নেই, এ তাওয়াফ করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

হজের চতুর্থ দিন

[মিনায় রাতযাপন এবং পাথর নিক্ষেপ]

১১ জিলহজ মিনায় রাতযাপন সুন্নত। এদিন মিনায় তিন শয়তানকে পাথর মারা ওয়াজিব। দুপুরের পর প্রথমে জামারায়ে সুগরা, (মসজিদে খাইফের সন্নিকটে) অতঃপর জামারায়ে উসতা, সর্বশেষ জামারায়ে আকাবায় ৭টি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপের সময় তাকবির বলবেন।

হজের পঞ্চম দিন

[মিনায় রাতযাপন এবং পাথর নিক্ষেপ]

১২ জিলহজেও আগের দিনের মতো তিন জামারায় পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। অনেকেই ১২ জিলহজ তাড়াতাড়ি মক্কায় ফিরে যাওয়ার জন্য সূর্য মাথার ওপর উঠার আগেই পাথর নিক্ষেপ করে ফেলেন, অথচ এরূপ করা নাজায়েজ। মনে রাখতে হবে, সূর্য মাথার ওপর থেকে কিছুটা ঢলে যাওয়ার পর পাথর নিক্ষেপ করতে পারবেন। ১২ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরে যাওয়া জায়েজ, তবে ১৩ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ করে তারপর মক্কায় ফিরে যাওয়া উত্তম। ১২ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরতে চাইলে সূর্যাস্তের আগেই মিনা থেকে বের হয়ে যাবেন। সূর্যাস্তের পর ফিরা মাকরুহ।

মক্কায় পৌঁছার পর বিদায়ী তাওয়াফ ছাড়া হজের আর কোনো জরুরি কাজ বাকি নেই। হজ আদায়ের তাওফিকদানের জন্য আল্লাহ পাকের শোকর, নফল তাওয়াফ, উমরাহ ও অন্যান্য ইবাদত করতে থাকুন।

বিদায়ী তাওয়াফ

মক্কা শরিফ থেকে বিদায়ের আগে বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব) করুন। মাকামে ইবরাহিমে দুরাকাত নামাজ পড়ে মূলতাযাম, কাবার দরজা ও হাতিমে দোয়া করুন; যমযমের পানি পান করেও দোয়া করুন এবং বিয়োগ-বিরহের বেদনা দিয়ে কাবা ঘর থেকে বিদায় নিন। তাওয়াফে বিদা না করলে দম দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *