মোবাইল সার্ভিসিংয়ের নামে মোতালেব প্লাজায় চলছে প্রতারণা

দেশজুড়ে স্পেশাল

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ ৪:৩২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মোতালেব প্লাজার আইফিক্স ফাস্ট নামে একটি মোবাইল রিপেয়ারিং শপের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর প্রতারণার অভিযোগ ওঠেছে। এই শপটির বিরুদ্ধে মোবাইলের এক সমস্যা নিয়ে মোবাইল সার্ভিসিং করতে দিলে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করে দেওয়া, মোবাইলের পার্টস খুলে রেখে দেওয়াসহ নানা রকম ভয়ঙ্কর প্রতারণার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের এসব অভিযোগ নিয়ে এবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ দিয়েছেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোতালেব প্লাজার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আইফিক্স ফাস্ট নামক এই শপটি সরকারের ভ্যাট টেক্স ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন নামে বেনামে ১২টির বেশি দোকান চালাচ্ছে। ১টি দোকান ছাড়া বাকি দোকানগুলোর ট্রেড লাইসেন্স নেই। তাদের বিরুদ্ধে কাস্টমারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ থেকে শুরু করে নানা রকম প্রতারণার অভিযোগের অভাব নেই। এরপরও গায়েবি কারণে মার্কেট কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।

এর আগেও গত বছর সরকারি একটি সংস্থা এসে ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়াসহ নানা রকম অভিযোগের কারণে এদের শপ বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপরও আবার কীভাবে চালু হলো তা আমাদের জানা নেই। গতমাসেও এই শপের মালিক এক কাস্টমারকে মেরে আহত করে দিয়েছিল। তখন তাদের কর্মচারীরা পুরো মার্কেটে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রণক্ষেত্রে পরিণত করেছিল। সেই সময় শাহবাগ থানা পুলিশ এসে মালিককে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়েছিল। এরপরও কাস্টমারদের সঙ্গে নানারকম ভয়াবহ প্রতারণা করেই যাচ্ছে।

সাঈদ শিমুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী জানান, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আইফিক্স ফাস্টের সার্ভিস সেন্টারে সামস্যাং মডেলের একটি ফোনের টাচ সমস্যা নিয়ে যাই। তখন ফোনের টাচটি ঠিক করতে দিলে উল্টা ফোনটির ডিসপ্লে নষ্ট করে ফেলে। তখনও আমি তাদের প্রতারণা বুঝতে পারিনি। তখন ডিসপ্লে ঠিক করতে গিয়ে আমাকে অরিজিনাল ডিসপ্লে লাগিয়ে দেবে বলে ৩ হাজার ২’শ টাকা নেয়। কিন্তু ডিসপ্লেটি ঠিক করে দেওয়ার পর দেখি ফোনের স্পিকার নষ্ট করে দিয়েছে। তখন বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে রাগারাগি হয়। সাথে সাথে অন্য আরেকটি দোকানে দেখালে জানতে পারি তাদের দেওয়া ডিসপ্লেটি নকল ডিসপ্লে দিয়েছে এবং ফোনের অন্যান্য পার্টস খুলে রেখে দিয়েছে। ঠিকই ২মাস পর দেখি ডিসপ্লেটি নষ্ট হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ফোনটাই একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। তাদের এমন ভয়ঙ্কর প্রতারণা শিকার হয়েছি। তাদের এই প্রতারণা ও হয়রানিমূলক ব্যবসা বন্ধ করার কি কোন আইন নেই দেশে? আমি এর বিচার চাই।

সিরাজাম মুনিরা নামে আরেক ভূক্তভোগী জানান, আমি মোতালেব প্লাজার এই দোকান থেকে আমার ওয়ান প্লাস মডেলের একটি মোবাইলের ডিসপ্লে পরিবর্তন করেছি। তারা আমাকে দুই ধরনের দুইটি ডিসপ্লে দেখায়। সেখান থেকে আমি আসল ডিসপ্লেটি সিলেক্ট করে দেই। সেই ডিসপ্লেটির দাম ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে। ডিসপ্লেটি পরিবর্তন করার পর দেখি আমার আঙুলের চাপ নিচ্ছে না। তখন তারা আমাকে বলল, আপনি কিছুক্ষণ পর নিয়ে যান ফোনটা ঠিক করে রাখতেছি। পরে কিছুক্ষণ পর গিয়ে ফোনটা নিয়ে আসার সময় চেক করলে দেখি ফোনটা আবারও আঙুলের চাপ কাজ করে না। তখন টেকনিশিয়ান বলল, নিয়ে যান কিছুক্ষণ সময় লাগবে কাজ করতে। বাসায় এসে দেখি আঙুলের চাপ কাজ করেই না। উল্টো ব্যাটারির চার্জ থাকে না এবং অন্যান্য অপশনও কাজ করতেছে না। আমার ভালো ফোনটা একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে। সাধারণ একটা সমস্যা নিয়ে তাদের কাছে গেলাম। তারা উল্টো আমার ফোনটাই নষ্ট করে দিয়েছে।

সালমান নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, আমার ফোন হঠাৎ হ্যাং হয়ে গিয়েছিল। তাদের কাছে ফোনটি নিয়ে গেলে তারা বললো, আমার ফোনের মাদারবোর্ড নষ্ট হয়ে গেছে। মার্কেটে দেখে মাদারবোর্ডটি এনে ঠিক করে দিতে হবে। একদিন হঠাৎ করে তাদের টেকনিশিয়ান মারুফ আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আমার ফোনটি ঠিক করে দিয়েছে। ফোনের মাদারবোর্ড ঠিক করে দেওয়া বাবদ এখন সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিতে হবে। তখন তার সঙ্গে আমার বাকবিতণ্ডা হয়। আমাকে টাকার বিষয়ে জিজ্ঞেস না করে এত টাকা দিয়ে কেন ফোনটি ঠিক করতে দিয়েছে। পরে ওই টেকনিশিয়ান আমাকে বলল আপনি ২ হাজার ২’শ টাকা দিয়ে ফোনটি নিয়ে যান। আমি ঠিক করে রেখেছি। ফোনটি বাসায় আনার পর দেখলাম ফোনের নেটওয়ার্ক আইসি, স্পিকার নষ্ট করে দিয়েছে। একইরকম আইফোন মডেলের একটি ফোনের ডিসপ্লে ঠিক করতে দিলে সেটির স্পিকার,কান্ট্রি লক এবং হোম বাটন নষ্ট করে দেয়। ফোন ঠিক করতে দিয়ে তারা এভাবে পার্টস নষ্ট করে দিয়ে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করে আমাদের থেকে যেভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। সংশ্লিষ্টরা তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাই। কারণ মোবাইল ঠিক করতে দিয়ে তাদের কাছে হয়রানির শিকার হতে হয় সবচেয়ে বেশি।

এ সব বিষয়ে মোতালেব প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সের সভাপতি কামরুল ইসলাম জানান, আমি গত মে মাসে দায়িত্ব নিয়েছি। এ কয়েকদিনে তাদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৫-৭ টি গুরুতর অভিযোগ এসেছে। এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে কাস্টমারদের সঙ্গে নানা রকম প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত শপের মালিককে ডেকে বেশ কয়েকটি বিচার করেছি। তাদেরকে ওয়ার্নিং দেওয়া আছে। তাদের বিরুদ্ধে যদি আর কোনো অভিযোগ আসে। তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে মার্কেট থেকে বের করে দেওয়া হবে। কারণ তাদের কারণে আমাদের পুরো মার্কেটটির বদনাম হচ্ছে। সবাই মোতালেব প্লাজাকে গালি দিচ্ছে।

গত কয়েকদিন আগেও, এক কাস্টমারদের সঙ্গে তাদের বিশাল গণ্ডগোল। তাদের দোকানের যত কর্মচারী আছে সবাই মিলে মার্কেটে রণক্ষেত্র তৈরি করেছে। তখন দোকানের মালিককে শাহবাগ থানা পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগের পরও যখন তারা একই রকম কার্যক্রম করছে। দোকান মালিক সমিতির যারা আছে তাদের সাথে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *