মোক্তার হোসেন, খুলনা
খুলনার ডুমুরিয়া কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ, মার্কশীট প্রদান-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব অভিযোগে অভিযুক্তদের মদদ দিচ্ছেন কলেজেরই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন তরফদার।
জানা যায়, খুলনার ডুমুরিয়া কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইমরান খানের মোবাইলে ফরম ফিলাপের জন্য ২০৪০ টাকার ম্যাসেজ দেওয়া হয়। কিন্তু সে টাকা জমা দিতে গেলে হিসাব শাখায় কর্মরত আজগর আলী তার কাছে ২ হাজার একশ’ টাকা দাবি করে। ইমরানের কাছে আর টাকা নেই বললে তাকে কলেজ থেকে বের হয়ে যেতে বলে আজগর আলী।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকাল ১১টায় সরেজমিনে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফরম পূরণের জন্য ডুমুরিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষ বোর্ড নির্ধারিত ফি’র সঙ্গে এক মাসও না পড়িয়ে ১১ মাসের কলেজ বেতন নিচ্ছে। তার সঙ্গে সেশন চার্জের নামে আরও ২শ’ টাকা করে বেশি নিচ্ছে। এছাড়া বিগত বছর ফরম পূরণ করার পর অটোপাশ শিক্ষার্থীদের বোর্ড কর্তৃপক্ষ যে টাকা ফেরৎ পাঠায়, সেই টাকা থেকেও ৫০ টাকা হারে কেটে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ওই টাকা ফেরৎ দেওয়ার সময় গত বছরের মার্কশীট ও প্রশংসাপত্র দেওয়ার নামে এক থেকে দুইশ’ টাকা করে কেটে নিয়েছে। আর দীর্ঘদিন ধরে শুন্যপদে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি নানা অজুহাতে ঝুলিয়ে রাখারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে জানতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন তরফদারের সঙ্গে তার অফিস কক্ষে কথা হয় সাংবাদিকদের। এসময় বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী ইমরান খানের পিতা ইসমাইল হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করে বলেন, কলেজ থেকে আমার ছেলেকে ফরম ফিলাপের জন্য ২০৪০ টাকার ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছে। মহামারির এই সময় অনেক কষ্ট করে ছেলের কাছে আমি সেই টাকা পাঠাই। কিন্তু আপনার কলেজের হিসাব শাখায় কর্মরত ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি আজগর আলী বলেছে, ২১শ’ টাকা লাগবে। আমার ছেলে আর টাকা নেই বললে, আজগর বলে, তুমি কলেজ থেকে বের হয়ে যাও।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে আজগর আলী বলেন, আমি কোনো ছাত্রকে বের হয়ে যেতে বলিনি। শুধু অনলাইনের খরচ দিতে বলেছি।
ডুমুরিয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন তরফদার সকলের সামনে বলেন, অনলাইনের একটা খরচ আছে তো। কলেজে কম্পিউটার অপারেটর নেই বলে, আজগরের ভাগে মেহেদী অনলাইন করাচ্ছে। আর সেশন চার্জ বাবদ ২শ’ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে মার্কশীট ও প্রশংসাপত্র বাবদ যে টাকা নেওয়া হয় তা তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।
ইচ্ছাকৃতভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার কথা অস্বীকার করেন তিনি। এমনকি জেলা পরিষদ থেকে কলেজের গেট করার জন্য বরাদ্দকৃত ১,৬০,০০০ (এক লক্ষ ষাট হাজার) টাকা কলেজ ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখেছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার তরফদার। এই টাকা কেন তার কাছে রেখেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলেজের গেট করার জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে তৈরি করা হবে এই জন্য এই টাকা ব্যয় করা হয়নি।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ডুমুরিয়া কলেজ কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সরকারি নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।