এপ্রিল ১৪, ২০২১ ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ
ক্রিকেট যারা খেলেন বা নিয়মিত দেখেন, তারাই বোঝেন এর আবেদন কতটা। মাঠের খেলায় সাফল্যই একজন খেলোয়াড়ের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়। কেউ দারুণ পারফরম্যান্স করলে আমরা হাত তালি দেই, প্রশংসায় ভাসাই। তবে উঠে আসার আগে তাদের কষ্ট-সংগ্রামের কথা কয়জনই বা জানে! চেতন সাকারিয়ার গল্প জানলে তো চোখে পানি আসতে বাধ্য!
ভারতের গুজরাটের এক তরুণ ক্রিকেটার চেতন সাকারিয়া। তার বাবা পেশায় একজন ট্রাক চালক। কিন্তু তিনবার দুর্ঘটনার ফলে এখন তিনি বিছানাতেই বেশিরভাগ সময় পড়ে থাকেন। শুরু থেকেই দারিদ্রতার সঙ্গে তাদের বসবাস। দিন এনে দিন খেয়েই চলতো চেতনের পরিবার।
রাজকোট শহর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরের ভারতেজ গ্রামে চেতনের জন্ম। ছোট বেলা থেকেই তার স্বপ্ন, ক্রিকেটার হবেন। শুরুতে ছিলেন ব্যাটসমান। তবে তার এলাকায় ব্যাটসম্যানদের দাম না থাকায় বনে যান বোলার। আর এই পরিবর্তনই বদলে দেয় তার জীবনের মোড়।
দরিদ্র পরিবারে চেতনের বাবা শুরু থেকেই চাইতেন ছেলে পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করুক। তিনি কখনোই চাননি, ছেলে ক্রিকেটার হোক। ফলে শুরুতেই বড় ধাক্কা খান এই পেসার। তবে তখন ত্রাতা হয়ে আসে এক কাকা। কিন্তু কাকার শর্ত ছিল, তার স্টেশনারির দোকানে তাকে সাহায্য করলেই শুধুমাত্র পড়াশোনা ও ক্রিকেটের খরচ বহন করবেন।
সেই শর্তে রাজি হতে সময় নেননি সাকারিয়া। প্রায় ২ বছর সেই দোকানে কাজ করেন তিনি। জেলা স্তরের স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতা খেলতে গিয়েই এক ক্রিকেট অ্যাকাডেমির কোচের নজরে পড়ে যান তিনি। এরপর অ্যাকাডেমিতে এসে অনুশীলন শুরু।
ভালো করার সুবাদে খুব তাড়াতাড়ি সৌরাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব ১৬ দলে সুযোগ পান চেতন। পরে সুযোগ পান সৌরাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব ১৯ দলেও। কিন্তু যুব দলে খেলার জন্য স্পাইকওয়ালা জুতা কেনার টাকাও ছিল না তার কাছে। সে সময় তাকে জুতো উপহার দেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান শেলডন জ্যাকসন।
এক সাক্ষাৎকারে চেতন বলেন, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলার আগ পর্যন্ত আমার কাছে স্পাইকওয়ালা জুতা কেনার জন্য কোনো টাকা ছিল না। আমার সিনিয়ররা আমাকে অনেক সহায়তা করতেন। আমি যেহেতু কম করে ব্যাট করতাম তাই আমি কারো কাছে ব্যাট ধার করতাম।
আইপিএলের সবশেষ নিলামে চেতনকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় কিনে নেয় রাজস্থান রয়্যালস। বর্তমানে তিনি কোটিপতি। তবে এত কিছুর মাঝেও চেতনের জীবনে আক্ষেপ, অভাবের তাড়নায় তার ভাই আত্মহত্যা করেছে।
এ প্রসঙ্গে চেতন বলেন, জানুয়ারি মাসে আমার ছোটভাই সুইসাইড করেছে। তখন আমি বাড়িতে ছিলাম না, সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি খেলছিলাম। বাড়ি ফেরা পর্যন্ত আমি জানতামই না যে ও আর নেই। আমার খেলা যদি খারাপ হয়, সেটা ভেবে পরিবার আমাকে তার খবর জানায়নি। যদি আজ ভাই থাকতো, সে আমার চেয়ে বেশি খুশি হতো।
আইপিএলের প্রথম ম্যাচেই অভিষেক হয়েছে চেতন সাকারিয়ার। অভিষেকে অন্য সবার চেয়ে ব্যতিক্রম ছিলেন তিনি। চার ওভারে ৩১ রান দিয়ে তিনটি উইকেট নেন এই বোলার। এ ছাড়া নিকোলাস পুরাণের দুর্দান্ত একটি ক্যাচও ধরেন তিনি।