নেতৃত্বহীনতায় সুশীলদের কাছে ধরনা দিচ্ছে বিএনপি

নেতৃত্বহীনতায় সুশীলদের কাছে ধরনা দিচ্ছে বিএনপি

রাজনীতি

জানুয়ারি ১, ২০২৩ ৯:১২ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন ধরেই নেতৃত্বের সংকটে ভুগছে বিএনপি। তাদের প্রধান নেতা খালেদা জিয়া এক রকম নিষ্ক্রিয়। দ্বিতীয় প্রধান নেতা লন্ডনে পলাতক। তৃতীয় নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারান্তরীণ। ফলে নেতৃত্বহীন দলটি এলোমেলো ছিন্নভিন্ন।

এ জন্য বিএনপি বিভিন্ন মত-পথের পরামর্শ নিচ্ছে টিকে থাকার জন্য। সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য বিএনপিকে যারা যেই পরামর্শ দিচ্ছেন সেই পরামর্শই হজম করছে দলটি। এরকম অবস্থা চলছে বেশকিছুদিন ধরেই।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে খালেদা জিয়া এক মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর কারাগারে যান। তখন থেকেই দলটির বেহাল দশা। বিএনপি আশা করেছিল, আন্দোলন করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে, দলকে শক্তিশালী করবে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর বিএনপির অবস্থা আরো সঙ্গীহীন। দলটি সংকুচিত হতে থাকে। এরকম অবস্থায় ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি একজন নেতা ভাড়া করেন। সেই নেতা ছিলেন ড. কামাল হোসেন।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয় এবং সেই ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক হিসেবে বিএনপি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেয়। অন্যদিকে দীর্ঘদিন কারাভোগের পর খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের মার্চে সরকারের বিশেষ অনুকম্পায় জামিনে মুক্ত করে ফিরোজায় রাখা হয়। তবে জামিন শর্ত অনুযায়ী তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। তাছাড়া এমনিতেই খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং রাজনীতি করার মতো কোনো শারীরিক অবস্থা তার নেই বলে তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

রাজনীতির চেয়ে খালেদা জিয়া এখন যেকোনো মূল্যে বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে অধিকতর আগ্রহী। যদিও সরকার তার জামিনের মেয়াদ বার বার বৃদ্ধি করে তাকে ফিরোজায় থাকার অনুমতি দিচ্ছেন এবং সেখান থেকেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে বিএনপি সরকার পতনের নতুন করে আন্দোলন শুরু উদ্যোগ নেয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই আন্দোলনের উদ্যোগের পেছনে রয়েছে সুশীল সমাজের একটি প্রভাবশালী মহল। আর এখন যখন ২৭ দফা রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা প্রকাশ করেছে তখন বোঝা যাচ্ছে, সুশীল সমাজই আসলে বিএনপির মূল নেতৃত্ব দখল করেছে। বিএনপি এখন সুশীল সমাজের পরামর্শেই চলছে। আর সুশীল সমাজের এই অংশের প্রধান নেতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাই বিএনপির এখন নতুন গুরু হয়েছেন তিনি।

ড. ইউনূস যেকোনো মূল্যে সরকারকে চাপে ফেলে এবং সরকারকে উৎখাতের একটি স্বপ্ন দেখেন। আর সেজন্য তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রভাব বিস্তার করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সেই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষিত বন্ধুও তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের কারণেই তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন বলেও বিভিন্ন মহল মনে করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এখন অর্থপাচারসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে পেয়েছে এবং এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের উৎকোচ দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টিও আদালত আমলে নেয়নি। এখন মামলা চলছে।

সবকিছু মিলিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস চাপে আছেন। তিনি মনে করছেন, সরকার যদি আরেকবার ক্ষমতায় থাকে তাহলে তার অনিয়ম, অর্থপাচার ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে চলে আসবে। এই কারণেই তিনি বিএনপিকে দিয়ে দেশে একটি বড় ধরনের আন্দোলন তৈরি করার চেষ্টা করছেন। বিএনপির প্রধান পরামর্শদাতাই হলেন তিনি।

লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বিএনপি যে ২৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছে তা ড. ইউনূস যখন রাজনৈতিক দল করেছিলেন সেই রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক কর্মসূচির প্রায় হুবহু অনুরূপ। আর এ কারণেই ড. ইউনূসের পরামর্শে বিএনপি এখন চলছে। আর সেজন্যই পিটার ডি হাসসহ পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা এখন বিএনপির আন্দোলনের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল। কিন্তু ২০১৮ সালে ড. কামাল হোসেনকে গুরু মেনে বিএনপি নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছিল। এবার ড. ইউনূসকে গুরু মেনে বিএনপির লাভ না ক্ষতি হয় সেটাই দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *