চীনের বিভিন্ন শহরে ‘জিরো কোভিড নীতির’ বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

চীনের বিভিন্ন শহরে ‘জিরো কোভিড নীতির’ বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক স্লাইড

নভেম্বর ২৯, ২০২২ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

চীন সরকারের কঠোর ‘কোভিড জিরো নীতির’ বিরুদ্ধে তিন দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের এ আন্দোলন এখন দেশটির বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এবং কমিউনিস্ট পার্টির পদত্যাগ চেয়ে সাংহাই শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র সাংহাইয়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও হয়েছে। খবর রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ানের।

চীনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে জনসম্মুখে বিরোধিতার ঘটনা দেশটিতে বিরল। বৃহস্পতিবার উত্তর-পশ্চিম চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলের রাজধানী উরুমকিতে একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একটি আবাসিক ভবনে এ ঘটনা ঘটলে তাতে প্রাণ হারান প্রায় ১০ জন। ২১তলা পর্যন্ত আগুনের ধোঁয়া পৌঁছে যায়। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ভবনটি ছিল লকডাউনের আওতায়।

এই মৃত্যুতেই ফুঁসে উঠেছে চীন। দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে কঠোর লকডাউনকে দায়ী করছে জনগণ। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি খানিকটা কম হলেও তিন বছরের পরেও এর প্রাদুর্ভাব চীনে বেড়ে চলছে। দীর্ঘদিন দেশটিতে চলছে কঠিন লকডাউন।

কঠোর লকডাউন ‘জিরো কোভিড নীতির আওতায় থাকার পরও সোমবার চীনে রেকর্ড পরিমাণ করোনা রোগী শনাক্ত হয়। যার সংখ্যা গত কয়েক মাসকে ছাড়িয়ে প্রায় ৪০ হাজারে দাঁড়ায়। এ নীতিতে জনজীবন হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ।

অর্থনীতি পড়েছে বিপর্যয়ের মুখে। দুইয়ে মিলে আগে থেকে ক্ষিপ্ত ছিল নাগরিকরা। সেই আগুনেই ঘি ঢালল এই ভবন অঘটন। তবে বিক্ষোভের সূত্রপাত কখন হয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি কেউই।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং প্রায় এক যুগ আগে ক্ষমতায় আসেন। জিন পিং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চীনে এ ধরনের বিক্ষোভ দেখা যায়নি। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে কঠোর নিয়ম-নীতি আরোপ করায় তার সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন সাধারণ জনগণ।

এদিকে বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং কমিউনিস্ট পার্টির পদত্যাগ চেয়ে সাংহাই শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে।

তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে- ‘স্বাধীনতা চাই, আর নয় কোভিড পরীক্ষা/শি জিনপিং ক্ষমতা ত্যাগ করুন/সিসিপি (চীনা কমিউনিস্ট পার্টি) ক্ষমতা ছাড়।’ বিক্ষোভের এসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এদিকে ‘জিরো-কোভিড’ নীতির প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভের পর চীনের বৃহত্তম শহর এবং প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাংহাইয়ে কঠোর নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে।

সোমবার সাংহাইয়ের সব বড় সড়কের স্থানে স্থানে নীল রংয়ের ধাতব ব্যারিকেড দেখা গেছে। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক টহলও পরিলক্ষিত হয়েছে বিভিন্ন সড়কে। এছাড়া দোকান-পাট, শপিংমল ও ক্যাফেগুলোও বন্ধ ছিল এইদিন।

ব্যাপক এই নিরাপত্তার জেরে রোববার রাতের পর থেকে এখন পর্যন্ত সাংহাইয়ে কোনো জনসমাবেশ হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের নেওয়া ‘জিরো-কোভিড’ নীতির বিরুদ্ধে দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমাগত ক্ষোভ বাড়ছে। বিক্ষোভের মধ্যেই উরুমকি শহরের নিহদের স্মরণে এই সড়কটির নাম পরিবর্তন করে ‘উরুমকি’ রাখার দাবি জনান বিক্ষোভকারীরা। সেই সঙ্গে উরুমকি শহরের নিহতদের উদ্দেশে মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধাও জানান।

সোমবার সাংহাইয়ের বিভিন্ন সড়কে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এবং জিরো কোভিড নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাত ও ধস্তাধস্তি হয়েছে।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চীনের জিরো কোভিড নীতি ও শি জিন পিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা ও কটাক্ষ অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *