স্টাফ রিপোর্টার: আপন ২ মামা, ৬ খালার জমি জবরদখলের অপতৎপরতার পাশাপাশি বিদেশে মানুষ পাঠানোর নামে লাখ লাখ টাকা হরিলুট করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ কথিত সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে এ ঘটনাটি ঘটেছে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে রামু থানায়, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ওই সাংবাদিক সাইফুলের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড খোন্দকারপাড়া গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের মেয়ে মমতাজ বেগম (৫০)। একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড নিজের পাড়া স্কুল গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম। সম্পর্কে মমতাজ বেগমের আপন ভাগিনা হন।
এই সাইফুল ইসলাম মাইটিভির সাংবাদিক পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করে এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখল ও বিভিন্নজনকে হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লিখিত অভিযোগে আরো প্রকাশ, তার আপন খালা মমতাজ বেগমেরা ৭ বোন ও ২ ভাই। তারা আপোষ মিমাংসা মতে তাদের পৈত্রিক সুত্রে ভাগজাতনামা অনুযায়ী প্রাপ্ত জমি নিজ নিজ অংশ বুঝে নিয়ে ভোগ দখলে স্থিত আছেন। সাইফুল তার মায়ের অংশে পাওয়া জমিতে দোকানঘর নির্মাণ করে ভোগ দখলে আছে।
মমতাজ বেগম দাবী করেন, অপর ৬ বোন ও ২ ভাই সহজ সরল ও নীরিহ হওয়ায় ভাই রবিউল আলম প্রবাসে মালয়েশিয়া থাকার সুযোগে সাইফুল দুর্লোভে বশিভূত হয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় সাংবাদিকের প্রভাব খাটিয়ে চলে বলে কৌশলে তাদের অংশের জমি জবর দখল করার উদ্দেশ্যে নানা ষড়যন্ত্র ও প্রবাসী ভাই বরিউল আলমের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন অশ্লীল ও অপপ্রচার চালিয়ে প্রবাসী রবিউল আলমকে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ও স্থানীয় প্রশাসনের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
তিনি অভিযোগে আরো দাবী করেন, ৬ বোন ও দুই ভাই যথাক্রমে মোজাহের আলম ও মালয়েশিয়া প্রবাসী রবিউল আলম ও দোকান ভাড়াটিয়া দিদারুল আলমকে চেইন্দা স্টেশনস্থ দোকান থেকে উচ্ছেদ করার এবং মিথ্যা মামলায় জড়ানো এবং মারধর ও খুন, হামলার হুমকি অব্যাহত রেখেছে এই সাইফুল। তারা জানমালের নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।
সাইফুলের খালা মমতাজ বেগমের লিখিত বক্তব্যে জানা গেছে, মালয়েশিয়া প্রবাসী রবিউল আলম জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে অবস্থান করছেন। তার না থাকার সুযোগে গত ২ মে রাত ১২ টার দিকে সাইফুলের নেতৃত্বে লোকজন উক্ত দোকানের সামনে এসে হুমকি দেন। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে পরদিন ৩ মে রাত ২টার দিকে দলবল নিয়ে সাইফুল দোকানের সাইনবোর্ড ও তালা ভাঙ্গার চেষ্টা করে। তবে উপস্থিত লোকজনের বাধার মুখে তালা ও সাইনবোর্ড ভাঙ্গতে পারেনি।
এতেও ক্ষান্ত না হয়ে সাইফুল গত ৫ মে রাত ২টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত নিয়ে উক্ত দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড পাহাড়তলি গ্রামের গুরু মিয়ার ছেলে দোকান ভাড়াটিয়া দিদারুল আলম রামু থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
দোকান ভাড়াটিয়া দিদারুল আলম অভিযোগ করেন, মমতাজ বেগম ও বদিআলম গংদের মালিকানাধীন চেইন্দা স্টেশনস্থ মার্কেট থেকে ৪০ হাজার টাকা সেলামী দিয়ে মাসিক তিন হাজার টাকা ভাড়ায় একটি দোকান ঘর ভাড়া নেন। ভাড়া নিয়ে দোকানে ৫০ হাজার টাকা খরচে দোকানও মেরামত করেন।
দোকান দখলের জন্য দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয়া। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রতিবাদ জানালে অভিযুক্তরা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানীর হুমকি দেন।
তিনি বলেন, ‘এই সাইফুল তার ফেসবুকে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি এ বিষয়ে রামু থানাসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’
জানা যায়, বিভিন্ন দেশে মানুষ পাঠানোর ভিসা প্রসেসিং করার নামে অহরহ মানুষের নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ মিলেছে কথিত সংবাদকর্মী সাইফুল ও তার বাবার বিরুদ্ধে। অহরহ অপকর্মের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ওই সাংবাদিক সাইফুলের নিজ এলাকা মিঠাছড়ি ইউনিয়নে গণস্বাক্ষর কর্মসুচি করেছে। এতে কয়েকশত শান্তিপ্রিয় এলাকাবাসী স্বাক্ষর দিয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ইতোমধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের আইজিপি, কক্সববাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রতারিত ব্যক্তিগণ।
এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেএম আজমীরু জ্জামান বলেন, ‘দুটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।’